বুধবার অনন্তনাগ জেলার কোকেরনাগ এলাকায় গুলিযুদ্ধের সময় দুই সেনা অফিসার এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের অফিসার নিহত হয়েছেন। ঘটনার জেরে আলোচনার উঠে এসেছে দক্ষিণ কাশ্মীরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে, পির পাঞ্জাল রেঞ্জের দক্ষিণের অঞ্চলগুলো- পুঞ্চ, রাজৌরি এবং জম্মু, সন্ত্রাস-বিরোধী অভিযানের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
জঙ্গিদের গড়
কাশ্মীরের এই অঞ্চলকে দীর্ঘদিন ধরেই জঙ্গিরা নিজেদের গড় বানিয়ে রেখেছে। তার বিরুদ্ধেই অভিযান চালাচ্ছে বাহিনী। বুধবার পালটা আঘাত হেনেছে জঙ্গিরা। এই প্রসঙ্গে প্রতিরক্ষা বাহিনীর আধিকারিকরা দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন যে কাশ্মীর অঞ্চলে কিছু সময়ের জন্য জঙ্গিদের সংখ্যা হ্রাস পেলেও বাহিনী অভিযান বন্ধ করেনি।
নিয়োগ কমেছে
জুন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, জম্মু-কাশ্মীরে স্থানীয় জঙ্গি নিয়োগ ২০২০ সালের থেকে কমেছে: ২০২০ সালে সংখ্যাটা ছিল ১৯১, ২০২১ সালে ১৪১, ২০২২ সালে ১২১। আর, এবছর এপর্যন্ত ৭জনকে সংগঠনে নিয়োগ করেছে জঙ্গিরা। ২০২০ সাল থেকে এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে নিহত মোট জঙ্গিদের মধ্যে ৫৪৯ জন স্থানীয় এবং ৮৬ জন বিদেশি। এই সময়ের মধ্যে ১৩৩ জন স্থানীয় জঙ্গি হয় আত্মসমর্পণ করেছে নতুবা গ্রেফতার হয়েছে। আর, এই সময়ের মধ্যে বিদেশি জঙ্গির সংখ্যা ছিল ১৭ জন।
হিংসা কমেছে
নথি বলছে যে ২০২৩ সালের মে মাসে কাশ্মীর উপত্যকায় ৩৬ জন স্থানীয় জঙ্গি এবং ৭১ জন বিদেশি জঙ্গি ছিল। আর, জম্মু অঞ্চলে এই সময়ের মধ্যে মোট ১৩ জন স্থানীয় জঙ্গি এবং দু'জন বিদেশি জঙ্গি ছিল। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৩০ মে এর মধ্যে, পির পাঞ্জাল রেঞ্জের উভয় পাশে ২৪ জন নিরাপত্তাকর্মী এবং ৭৫ জন সাধারণ নাগরিক সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন।
জঙ্গিরা চেষ্টা চালাচ্ছে
সেনার ঊর্ধ্বতন আধিকারিকরা জানিয়েছেন, অনন্তনাগ এবং পির পাঞ্জাল রেঞ্জ এবং শ্রীনগরের মধ্যে, এছাড়াও ডোডার দিকেও জঙ্গিরা প্রবেশ করার চেষ্টা করছে। কাশ্মীরে বড়সড় নাশকতা চালানোর জন্য এই প্রবেশ জঙ্গিদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই বিষয়ে এক সেনাকর্তা বলেন, 'এখানে জঙ্গিদের প্রাথমিক সাফল্য হল, তারা কাশ্মীরের বিভিন্ন এলাকায় ঘাঁটি গড়ে তুলেছে। উপত্যকাজুড়ে জঙ্গিহিংসা বর্তমানে কমলেও দক্ষিণ কাশ্মীরের কিছু এলাকার পরিস্থিতি এখনও বেশ উদ্বেগের।'
অনন্তনাগ কেন জঙ্গিদের পছন্দের?
এই প্রসঙ্গে এক সেনাকর্তা বলেন, 'রিয়াসি এবং কুলগাম-সহ পির পাঞ্জাল রেঞ্জের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে অনন্তনাগের সংযোগ বেশ সহজ। এই কারণেই অনুপ্রবেশকারী এখানে সহজে পৌঁছতে পারে এবং উপত্যকাজুড়ে সহজে ছড়িয়ে পড়তে পারে।' জম্মু ও কাশ্মীরে ইতিমধ্যেই সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে। সন্ত্রাস দমন এবং অনুপ্রবেশ রোধ করার চেষ্টা চলছে। সেনাবাহিনী মূলত এলওসি বা নিয়ন্ত্রণরেখায় অনুপ্রবেশ রোখার দায়িত্বে রয়েছে। আর, সেনার রাষ্ট্রীয় রাইফেলসকে কাশ্মীর পুলিশের সঙ্গে নিয়মিত কিছু সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে পাঠানো হচ্ছে।
আরও পড়ুন- ভীষণ ক্ষতিকারক! করোনাও এর কাছে শিশু, নিপার কাণ্ড-কীর্তি দেখলে চোখ চড়কগাছে উঠবে
মোতায়েন রাষ্ট্রীয় রাইফেলস
এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় রাইফেলস (আরআর)-এর ভিক্টর ফোর্স এবং কিলো ফোর্স শ্রীনগর ভিত্তিক ১৫ কর্পসের অধীনে রয়েছে। এই কর্পস গোটা কাশ্মীরের নিরাপত্তার দায়িত্বে। আর, রোমিও ফোর্স এবং ডেল্টা ফোর্স নাগরোটা ভিত্তিক ১৬ কর্পসের অংশ। ২০২০ সালে চিনের সঙ্গে সামরিক অচলাবস্থা শুরু হওয়ার পরে রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের ইউনিফর্ম ফোর্সকে ১৬ কর্পসের এলাকা থেকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় ১৪ কর্পসের এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে।