Advertisment

দেশদ্রোহিতা, আফস্পা, মানহানি আইন ও কংগ্রেসের ইস্তেহার

কংগ্রেসের ইস্তেহারে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনীর ক্ষমতা এবং নাগরিকের মানবাধিকারের মধ্যে ভারসাম্য আনা হবে এবং নিখোঁজ করে দেওয়া, যৌন হিংসা এবং অত্যাচারের মত ঘটনায় সুরক্ষাকবচ অপসারণ করা হবে। 

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
West Bengal Lok Sabha Election 2019 Live, congress manifesto, লোকসভা ভোট ২০১৯, কংগ্রেসের ইস্তেহার

কংগ্রেসের ইস্তেহারে দেশদ্রোহিতা আইনের বিলোপের কথা বলা হয়েছে

মঙ্গলবার কংগ্রেস লোকসভা ভোটের ইস্তেহার প্রকাশ করেছে। ইস্তেহারে দেশদ্রোহিতা, মানহানি ও আফস্পার মত আইন বাতিল অথবা সংশোধনের কথা বলা হয়েছে।

Advertisment

দেশদ্রোহিতা

কংগ্রেস এ আইন বাতিল করতে চায়

ভারতীয় দণ্ডবিধিতে এটি অপরাধযোগ্য এবং জামিন অযোগ্য অপরাধ যার জেরে তিন বছর থেকে যাবজ্জীবন পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪ এ ধারায় এই আইনের কথা রয়েছে।

লিখিত, কথিত, ইঙ্গিতের মাধ্যমে বা কোনও রকম চিত্র বর্ণনার মাধ্যমে বা অন্য কোনও ভাবে যদি কেউ ভারতের আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সরকারের প্রতি বীতরাগ উৎপাদনের চেষ্টা করেন বা ঘৃণা অথবা মানহানির চেষ্টা করেন, তাহলে তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে, একই সঙ্গে জরিমানা হতে হতে পারে বা তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা জরিমানা হতে পারে।

১৮৭০ সালে এ আইন লাগু হওয়ার পর থেকে তাৎপর্যপূর্ণভাবে এর বদল ঘটেছে। আগে ব্রিটিশরা জাতীয়তাবাদীদের বিরুদ্ধে এ আইন প্রয়োগ করেছে। বাল গঙ্গাধর তিলক দুবার এ আইনে শাস্তি পেয়ে ১৯০৮ থেকে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত ৬ বছর মান্ডালয় (বর্তমান মায়ানমার)-এর জেলে কাটিয়েছেন। মহাত্মা গান্ধীকে ইয়ং ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত প্রবন্ধের জন্য এ আইনে অভিযুক্ত হয়েছেন।

১৯৬২ সালে সুপ্রিম কোর্ট এ আইনের সাংবিধানিকতা বজায় রাখে। কেদার নাথ মামলায় সে সময়ের প্রধান বিচারপতি বিপি সিনহা বলেন, প্রত্যেক রাষ্ট্রেরই সমস্ত ধরনের সরকারের কাছে এমন একটা হাতিয়ার থাকা উচিত যার বলে রাষ্ট্র তার বিপন্নতা উদ্রেককারী বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী শক্তিকে শাস্তি দিতে পারে।

এরপর থেকে দেশের বিভিন্ন আদালত বলে এসেছে সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনার ক্ষেত্রে নয়, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ক্ষেত্রেই এই আইনের প্রয়োগ করা যেতে পারে। তা সত্ত্বেও বিভিন্ন সরকারের বিরুদ্ধে এই আইন অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে, ২০১২ সালে আন্না হাজারের বিক্ষোভের সময়ে ইউপিএ সরকার দুর্নীতিবিরোধী কার্টুনিস্ট অসীম ত্রিবেদীর বিরুদ্ধে এই আইন প্রয়োগ করে। বর্তমান সরকার ছাত্রনেতা কানহাইয়া কুমার, উমর খালিদ এবং অনির্বাণ ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে এ আইন প্রয়োগ করে সমালোচিত হয়।

আরও পড়ুন, সমালোচক মাত্রেই দেশদ্রোহী নয়

মানহানি

কংগ্রেস চায় এ আইনের বিলোপসাধন

পৃথিবীর হাতে গোনা কয়েকটি দেশের মধ্যে ভারত একটি যেখানে মানহানি সিভিল ও ফৌজদারি উভয ক্ষেত্রেই অপরাধ বলে গণ্য। ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে এটি জামিনযোগ্য এবং সে ক্ষেত্রে এ অপরাধে দু বছর পর্যন্ত কারাবাস এবং অথবা জরিমানা হতে পারে।

ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৯ ধারানুসারে - লিখিত, কথিত, ইঙ্গিতের মাধ্যমে বা কোনও রকম চিত্র বর্ণনার মাধ্যমে বা অন্য কোনও ভাবে যদি কেউ কোনও ব্যক্তির ক্ষতিসাধনের জন্য বা তাঁর সম্মানহানির জন্য যদি কোনও কাজ করেন তাহলে সেটি এই ধারায় অপরাধ হিসেবে গণ্য।

একবার ফৌজদারি আইনে অভিযুক্ত হওয়ার পর, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে প্রমাণ করতে হবে যে এ ধারায় যে দশটি ব্যতিক্রম রয়েছে, তাঁর কৃতকর্ম তার আওতাতেই পড়ে।

ইংলিশ কমন ল-তে এ ব্যাপারে লিখিত ও কথিত দু ধরনের দু রকম শাস্তি রয়েছে। ভারতের এ ব্যাপারে তেমন কোনও পার্থক্য নেই, উভয় ক্ষেত্রেই ৪৯৯ ধারা প্রযুক্ত হয়ে থাকে।

ভারতীয় দণ্ডবিধি থেকে এই ধারা বাদ দেওয়া হলে মানহানি আর ফৌজদারি অপরাধ বলে গণ্য হবে না।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক মানহানির মধ্যে তফাৎ রয়েছে, দ্বিতীয় ক্ষেত্রটিতে প্রমাণের দায় বাদী পক্ষের ওপরে বর্তায়।

দেশদ্রোহিতার মতোই এ ক্ষেত্রেও বিভিন্ন সরকার যথাযথ সমালোচনা বন্ধ করতে এ আইনের প্রয়োগ ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

আরও পড়ুন, লক্ষ্য গরিব, করে দেখানোর প্রতিশ্রুতি: কংগ্রেসের ইস্তেহার

সেনাবাহিনীর বিশেষ আইন (আফস্পা)

কংগ্রেস এ আইনের সংশোধন চায়

কংগ্রেসের ইস্তেহারে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনীর ক্ষমতা এবং নাগরিকের মানবাধিকারের মধ্যে ভারসাম্য আনা হবে এবং নিখোঁজ করে দেওয়া, যৌন হিংসা এবং অত্যাচারের মত ঘটনায় সুরক্ষাকবচ অপসারণ করা হবে।

এই আইনের গোড়াতেই বলা আছে, এ আইনের বলে উপদ্রুত এলাকায় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হবে।

১৯৫৮ সালে উত্তর পূর্বে এবং ১৯৯০ সালে জম্মু-কাশ্মীরে এই আইন পাশ হয়। সরকার যদি মনে করে কোনও এলাকায় নাগরিক ক্ষমতা টিঁকিয়ে রাখতে সশস্ত্র শক্তি জরুরি তাহলে তাহলে সেই উপদ্রুত এলাকায় এই আইন প্রয়োগ করা হয়।

এই আইনের বলে সশস্ত্র বাহিনী গুলি চালাতে পারে, কোনও রকম পরওয়ানা ছাড়াই তল্লাশি করতে পারে এবং গ্রেফতার করতে পারে। এসব ক্ষেত্রেই বাহিনীর সদস্যদের কোনওরকম ভাবে যাতে বিচারের আওতায় না আনা যায় সে ব্যাপারে তাদের সুরক্ষাকবচ দেওয়া থাকে।

বর্তমানে জম্মু কাশ্মীরে, আসামে, নাগাল্যান্ডে এবং অরুণাচল প্রদেশ এবং মণিপুরেরে কিছু অংশে  আফস্পা লাগু আছে।

যেখানে যেখানে বিদ্রোহ থেমে গেছে এবং যখন সরকার মনে করেছে পুলিশের দ্বারাই এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখা সম্ভব, সেসব এলাকায় এই আইন প্রত্যাহৃত হয়েছে। ২০১৫ সালে ত্রিপুরা থেকে আফস্পা প্রত্যাহৃত হয়, এবং ২০১৮ সালে মেঘালয় থেকেও এ আইন তুলে নেওয়া হয়। তবে অরুণাচল প্রদেশে এই আইন এখনও লাগু রয়েছে।

আফস্পা নিয়ে দেশের মধ্যে এবং বাইরে থেকে বারবার সমালোচনা এসেছে। মণিপুরের সমাজকর্মী ইরম শর্মিলা ১৬ বছর ধরে আফস্পা প্রত্য়াহারের দাবিতে অনশন করেছেন। ২০০৪ সালে তৈরি হওয়া জীবন রেড্ডি কমিটি এই আইন সম্পূর্ণ বিলোপের প্রস্তাব দিয়েছে।

Read the Full Story in English

CONGRESS
Advertisment