গত বুধবার (৪ ডিসেম্বর) পিতামাতা ও প্রবীণ নাগরিক (সংশোধনী) বিল, ২০১৯ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় পাশ হয়েছে। এই সংশোধনীতে মাসিক ভাতার ১০ হাজার টাকার ঊর্ধ্বসীমা সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে প্রবীণ নাগরিকদের জন্য প্রতিটি থানায় নোডাল পুলিশ অফিসার নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। জেলাস্তরে প্রবীণ নাগরিকদের জন্য বিশেষ পুলিশ ইউনিট তৈরির কথাও বলা হয়েছে বিলে।
১২ বছরের পুরনো প্রবীণ নাগরিক দেখভাল আইনে সংশোধন
২০০৭ সালে প্রথম ইউপিএ সরকারের আমলে এই বিল পাশ হয়েছিল।
২০০৭ সালের বিল লোকসভায় আনা হয়েছিল ওই বছরের ২০ মার্চ। লোকসভায় সে বিল পাশ হয় ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর। রাজ্যসভায় বিল পাশ হয় ৬ ডিসেম্বর।
বিলের গুরুত্বপূর্ণ কতকগুলি পয়েন্ট:
*ছেলেমেয়ে এবং উত্তরাধিকারীরা প্রবীণ নাগরিকদের দেখভালের জন্য আইনগতভাবে দায়বদ্ধ
*রাজ্য সরকারগুলি প্রতি জেলায় ওল্ড এজ হোম বানাতে পারে
*যেসব প্রবীণ নাগরিকরা নিজেদের দেখভাল করতে অক্ষম, তাঁরা তাঁদের সন্তান বা উত্তরাধিকারীর কাছ থেকে মাসিক ভাতা পাবার জন্য ট্রাইবুনালের দ্বারস্থ হতে পারেন
*রাজ্য সরকারগুলিকে দেখভালের মান নির্ণয় করার জন্য প্রতিটি মহকুমায় ট্রাইবুনাল তৈরি করতে হবে। জেলাস্তের তৈরি হবে আপিল ট্রাইবুনাল।
*মাসিক ভাতার ঊর্ধ্বসীমা নির্ধারণ করবে রাজ্য সরকারগুলি। ওই বিলে মাসিক ১০ হাজার টাকা ঊর্ধ্বসীমার কথা বলা হয়েছিল।
*প্রয়োজনীয় ভাতা না দিলে তার শাস্তি ৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা তিন মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা দুইই একত্রে।
প্রস্তাবিত পরিবর্তন
২০ নভেম্বর, রাজ্যসভায় সামাজিক ন্যায়বিচার ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী রতন লাল কাটারিয়া সংশোধনী বিলের গুরুত্বপূর্ণ অংশের কথা উল্লেখ করেন
১) সন্তান ও পিতামাতার সংজ্ঞা বর্ধিত হয়েছে
২) দেখভাল এবং কল্যাণ-এর সংজ্ঞা বৃদ্ধি পেয়েছে
৩) দেখভালের আবেদন জমা দেবার পদ্ধতি ব্যাপকতর করা হয়েছে
৪) দেখভালের বাবদ মাসিক ১০ হাজার টাকার ঊর্ধ্বসীমা তুলে দেওয়া হয়েছে
৫) ৮০ বছরের বেশি বয়সী প্রবীণ নাগরিকদের আবেদনে গুরুত্ব দেবার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে
৬) প্রবীণ নাগরিকদের কেয়ার হোম বা হোমকেয়ার সার্ভিস এজেন্সির রেজিস্ট্রেশনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে
৭) প্রবীণ নাগরিকদের কেয়ার গোমের ন্যূনতম মানের বিষয়টি বিলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে
৮) প্রতিটি থানায় প্রবীণ নাগরিকদের জন্য নোডাল পুলিশ অফিসারের নিয়োগ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জেলাস্তরে প্রবীণ নাগরিকদের জন্য বিশেষ পুলিশ ইউনিট তৈরির কথাও বিলে আনা হয়েছে।
৯) প্রবীণ নাগরিকের জন্য হেল্পলাইনের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
গত বছর, সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রক সংশোধনী বিলের খসড়া প্রস্তুত করেছিল। সে খসড়ায় সন্তানের সংজ্ঞা ব্যাপকতর করার প্রস্তাব ছিল। পূর্ববর্তী বিলে সন্তান বলতে কেবল জৈবিক পুত্রকন্যা নাতি নাতনিকে বোঝায়। সংশোধনীতে মেয়ে-জামাই এবং পালিত বা সৎ সন্তানসন্ততিদেরও এর আওতায় আনা হয়েছে।
আগের বিলে দেখভাল বলতে বোঝাত খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও স্বাস্থ্যের বিষয়টি। এবার তাতে বাবা-মায়ের নিরাপত্তার দিকটিও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
এই খসড়া অনুযায়ী প্রবীণ নাগরিকরা তাঁদের দেখভাল না হলে, সে নিয়ে সন্তানদের বিরুদ্ধে ট্রাইবুনালে অভিযোগ জানাতে পারেন।
২০১৮ সালে যে খসড়া সংশোধনী আনা হয়েছিল, তাতে মাসিক ভাতা বাকি পড়লে এত মাস কারাবাসের কথাও বলা হয়েছিল।