পূর্ব উত্তরপ্রদেশের চান্দৌলির এমিলিয়া গ্রামের কৃষক অজয়কুমার সিং। তাঁর কাছে সেপ্টেম্বরের বৃষ্টি 'অমৃত সঞ্জীবনী' হয়ে উঠেছে। ধান চাষের জন্য জলের প্রয়োজন। জলের অভাবে ফসল যখন মাঠেই প্রায় শুকিয়ে যাচ্ছিল, সেই সময় এই বৃষ্টি। স্বভাবতই বেজায় খুশি উত্তরপ্রদেশের ওই কৃষক। গুজরাটের জুনাগড় জেলার মাতিয়ানা গ্রামের চিনাবাদাম চাষি রাজু বোরখাটারিয়ারও একই অবস্থা।
'কাঁচা সোনা'
তিনি এমাসে (সেপ্টেম্বরে) দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে হওয়া বৃষ্টিক 'কচু সোনা' বা স্বর্গ থেকে কাঁচা সোনা ঝরে পড়া হিসেবেই দেখছেন। একটা দেশের উত্তরের রাজ্য। অন্যটা পশ্চিমের। তাঁদের মধ্যে মিল হল, দু'জনেই শুষ্ক আগস্টের সাক্ষী হয়েছেন। সেই সময় ভূগর্ভস্থ জল পাম্প করে তাঁদের ফসল বাঁচিয়েছেন। তবে, সবাই এত ভাগ্যবান নন। এদেশের অনেক কৃষকই কোনও টিউবওয়েল বা খালের জলসেচের সুবিধা না থাকায়, খেতেই তাঁদের ফসলকে মরে যেতে দেখেছেন।
বৃষ্টি অনিয়মিত
বর্ষা এবছৎ জুন মাসে এক সপ্তাহ দেরিতে পৌঁছেছে। বৃষ্টিপাতের ঘাটতি ঘটেছে ১০.১%। কিন্তু, জুলাই মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে ১২.৬% বেশি বৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে, বেশিরভাগ খরিফ ফসলের রোপণে সুবিধা হয়েছে। ১৯০১ থেকে ধরলে এবারের আগস্টই ছিল শুষ্কতম। গোটা দেশে ৩৬.২% বৃষ্টির ঘাটতির জেরে যে ফসলগুলো ইতিমধ্যেই বপন করা হয়েছিল, সেগুলো জলের সমস্যায় ভুগছিল। জুলাই-আগস্ট সাধারণত সর্বোচ্চ মৌসুমি বৃষ্টিপাতের মাস। যা শুধুমাত্র খরিফ ফসলের প্রয়োজনীয়তাই মেটায় না। পুকুর ও জলাধারগুলিও ভরাট করে এবং ভূগর্ভস্থ জলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
বিকল্প জলের ব্যবস্থা
না-হলে, কৃষকদের সেচ বিভাগের দ্বারস্থ হতে হয়। সেচ বিভাগ কবে, বাঁধ থেকে জল ছাড়বে, তার ওপর নজর রাখতে হয়। অন্যথায় ফসল বাঁচাতে ভূগর্ভস্থ জলস্তর থেকে জল তুলতে হয়। যার ফলে, ভূগর্ভস্থ জলস্তর আরও নেমে যায়। কেন্দ্রীয় জল কমিশনের তথ্য বলছে যে, দেশের ১৫০টি প্রধান জলাধারে জলস্তর ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১১১.৭৩৭ বিলিয়ন কিউবিক মিটার (বিসিএম)-এ নেমে গেছিল। একবছর আগের তুলনায় ২৫.৯% কমে গিয়েছিল। আর, গত ১০ বছরের গড় ধরলে, ১৩.৮% কমে গিয়েছিল।
আরও পড়ুন- বিখ্যাত গণেশ উৎসব: কোন উদ্দেশ্যে গোটা মহারাষ্ট্রে ছড়িয়ে দেন তিলক?
কানা মামা ভালো
আর, সেই কারণেই এবছর সেপ্টেম্বরে এখনও পর্যন্ত ১৮.৭% অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত (চার্ট) শুকিয়ে যাওয়া ফসলের জন্য জীবন রক্ষাকারী হিসেবে দেখা দিয়েছে। এছাড়াও, মোট জলাধারের জলস্তর ১২৬.৪৬৩ বিলিয়ন কিউবিক মিটার (বিসিএম)-এ উন্নীত করেছে। যদিও এই জলস্তর গত বছরের তুলনায় ১৯.৫% কম এবং এখনও পর্যন্ত জলাধারে থাকা গত ১০ বছরের গড় জলস্তরের চেয়ে ৭.৭% কম। তবুও বলা যায় যে, এটা নেই মামার থেকে কানা মামা ভালো। অথবা, সবচেয়ে খারাপের থেকে অন্তত ভালো।