ভারতে করোনা রুখতে বড়সড় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে দেশের অন্যতম ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া (এসআইআই)। সম্প্রতি তাঁরা গাঁটছড়া বেঁধেছে বিশ্বে করোনা ভ্যাকসিন প্রস্তুতিতে বিশেষ সাফল্য পাওয়া অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে। এবার এই যৌথ উদ্যোগের সুবাদে ভারতে তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হচ্ছে। এই কাজে সম্মতি দিয়েছে এসআইআই। কিন্তু ভারতে এই ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হলে কতটা উপকৃত হবে দেশবাসী সে বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শুধুই কি ট্রায়াল না ভারত বায়োটেকের তৈরি 'কোভ্যাকসিন'-কে বিশেষ বার্তা দিতেই ভারতের বাজারে আসছে সেরামের 'কোভিশিল্ড'?
ভারতে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল আদপে কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
শুধু ভারত নয়, করোনার চরিত্র বুঝতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বিশ্বকেও। এখনও পর্যন্ত কীভাবে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে তা নিয়ে প্রতিদিনই গবেষণায় উঠে আসছে নিত্যনতুন তথ্য। ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালের মাধ্যমে বোঝা সম্ভব হবে এর কার্যকারীতা কতটা। ভারতের মতো জনবহুল দেশ যেখানে করোনা থাবায় প্রতিদিনই রেকর্ড তৈরি হচ্ছে সেই দেশই তাই বেছে নিয়েছে অক্সফোর্ড। এখানে দেখা হবে, বিভিন্ন রকমের মানুষের মধ্যে কতটা কার্যকরী হতে পারছে এই ভ্যাকসিন। আদৌ রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সক্ষম হচ্ছে কি না। মনে রাখতে হবে এক এক দেশে করোনার রূপ এক এক রকম। তাই অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন এদেশে কতটা সাফল্য পাচ্ছে তা বিশ্লেষণ করতেই এই ট্রায়াল।
আরও পড়ুন, অজান্তেই করোনা সংক্রমণের কারণ হয়ে উঠছে বাচ্চারা, প্রমাণ দিলেন গবেষকরা
শুধু কি ভারতে না অন্য দেশেও ট্রায়াল হয়েছে এই ভ্যাকসিনের?
বিশ্বের যে দেশগুলি জনবহুল এবং করোনা দ্বারা আক্রান্ত এমন সব দেশেই তাদের ভ্যাকসিন ট্রায়াল করেছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা। এর মধ্যে রয়েছে ব্রিটেন, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ব্রাজিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও ট্রায়াল শুরু করার কথা রয়েছে তাদের।
কেন ভারতে এই ট্রায়ালের অনুমতি পেল সেরাম এবং অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা?
ভারতে এই মুহুর্তে দেশিয় পদ্ধতিতে ভ্যাকসিন তৈরি করছে ভারত বায়োটেক। কিন্তু ১৪০ কোটির দেশে তা যথেষ্ট নয় এমনটাই মনে করছে কেন্দ্র। তাই দেশের স্বাস্থ্যকর্মী এবং যারা সামনে থেকে লড়াই করে চলেছে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে তাঁদের কথা ভেবেই অক্সফোর্ডকে ভ্যাকসিন ট্রায়ালের অনুমতি দিয়েছে ভারত। মাস্ক, সামাজিক দূরত্ব, লকডাউন কোনও নিয়মেই এখনও আটকানো সম্ভব হয়নি এই ভাইরাসকে। একমাত্র রাস্তা ভ্যাকসিন। তাই ভারত বায়োটেক হোক কিংবা অক্সফোর্ড, যার ভ্যাকসিন আগে আসুক না কেন আখেরে লাভ দেশেরই।
অক্সফোর্ডের চ্যাডক্স আর সেরামের কোভিশিল্ড কি একই ভ্যাকসিন?
সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া (এসআইআই)-এর কোভিশিল্ড আসলে অ্যাস্ট্রাজেনেকার (AZD1222) এবং অক্সফোর্ডের চ্যাডক্সের (ChAdOx 1 nCoV-19) মিলিত ভ্যাকসিন। ভারতের ১৮টি কেন্দ্র থেকে ১৬০০ জনের দেহে পরীক্ষামূলক ট্রায়াল করা হবে। এখনও পর্যন্ত ট্রায়ালের কেন্দ্র হিসেবে তালিকার প্রথমে রয়েছে দিল্লির এইমসের নাম। অগাস্ট মাসেই শুরু হওয়ার কথা এই ট্রায়ালের।
কোভ্যাক্সিন না কোভিশিল্ড কার কার্যকারীতা বেশি?
বিজ্ঞানী কিংবা চিকিৎসকরা কোনও মহলই নিশ্চিত নয়। কারণ, দুইটি ভ্যাকসিনেরই ট্রায়াল চলছে। দুটিরই ফলাফল এখনও পর্যন্ত আশাব্যাঞ্জক। শেষ ধাপের ট্রায়ালের পর কতজনের শরীরে কার্যকারীতা গড়ে তুলতে সক্ষম হবে এই ভ্যাকসিন দুটি, আপাতত সেদিকেই নজর রাখছে বিজ্ঞানীমহল।
Read the story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন