লিখেছেন উদয় এম শ্রীবাস্তব
আজ (৯ জুন) তৃতীয়বারের মত ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন নরেন্দ্র মোদী। সাতটি দেশের নেতারা, যাদের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, তাঁরা-সহ বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই সাতটি দেশই সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ভারতের নিকটতম ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক গড়ে তুলেছে।
১. বাংলাদেশ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
রপ্তানি:- $১১,০৬১ মিলিয়ন, আমদানি:- $১,৮৪৫ মিলিয়ন
বাংলাদেশের স্বাধীনতায় ভারতের ভূমিকাই ছিল প্রধান। যার ভিত্তিতে বলা যায়, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে গভীর ঐতিহাসিক সম্পর্ক আছে। যার সূত্র ধরে দুই দেশের মধ্যে সুস্থ বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে এই বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল বছরে $১২,৯০৬ মিলিয়ন। বাংলাদেশে, ভারত যন্ত্রপাতি, বস্ত্র, পোশাক, মাছ রফতানি করে। যে সব দেশে ভারত সবচেয়ে বেশি পণ্য রফতানি করে থাকে, বাংলাদেশ তার অন্যতম। সংস্কৃতিগতভাবেও, বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। যে সমস্ত জঙ্গিরা বাংলাদেশে আশ্রয় নিত, শেখ হাসিনার সরকার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। বর্তমানে, ভারত এবং বাংলাদেশ পারস্পরিক সম্পর্ক আরও উন্নত করতে চেষ্টা চালাচ্ছে।
২. শ্রীলঙ্কা, রাষ্ট্রপতি রনিল বিক্রমাসিংহে
রপ্তানি:- $৪,১১৮ মিলিয়ন, আমদানি:- $১,৪২৪ মিলিয়ন
ভারত ও শ্রীলঙ্কার জনগণের মধ্যে সম্পর্ক অতি প্রাচীন। ২০২৩-২৪ সালে, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের মূল্য ছিল $৫,৫৪২ মিলিয়ন। যার মূলে ভারত থেকে পেট্রোলিয়াম এবং অটোমোবাইল রফতানি। শ্রীলঙ্কায় গৃহযুদ্ধের সময় (১৯৮৭-৯০), ভারত বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীকে নিরস্ত্র করার জন্য দ্বীপরাষ্ট্রে শান্তিসেনা পাঠিয়েছিল। ভারত ও শ্রীলঙ্কা, দুই দেশের গভীর ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে শ্রীলঙ্কার সংখ্যালঘু তামিল এবং ভারতীয় তামিলদের মধ্যে এই সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশ বর্তমানে সামুদ্রিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, সামুদ্রিক বিরোধ নিষ্পত্তি, আর্থিক সহযোগিতা জোরদার করার ওপর নজর দেবে বলেই আশা করা হচ্ছে।
৩. নেপাল, প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দাহল ওরফে প্রচণ্ড
রপ্তানি:- $৭,০৪১ মিলিয়ন, আমদানি:- $৮৩০ মিলিয়ন
ভারত ও নেপালের মধ্যে মুক্ত সীমান্ত আছে। যা দুই দেশের গভীর ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ককে প্রতিফলিত করে। ২০২৩-২৪ সালে, ভারত-নেপাল দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল $৭,৮৭১ মিলিয়ন। যার মূলে ছিল ভারতীয় পেট্রোলিয়াম এবং যন্ত্রপাতি রপ্তানি। দুই দেশের মধ্যে একটি পর্যটন শিল্প-সংক্রান্ত (বিশেষ করে ধর্মীয় পর্যটন) সম্পর্ক আছে। পাশাপাশি, উভয় দেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় সম্পর্কও রয়েছে। শক্তি এবং জল-বন্টন নিয়ে দুই দেশের মধ্যে অতীতে বারবার বিরোধ বেধেছে।
৪. মালদ্বীপ, রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ মুইজ্জু
রপ্তানি:- $৮৯২ আমদানি:- $৮৭ মিলিয়ন
কয়েক বছর ধরে, ভারত ও মালদ্বীপ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে, ভারত ১৯৮৮ সালে মালদ্বীপে একটি অভ্যুত্থান প্রতিরোধে সহায়তা করেছিল। রাষ্ট্রপতি মুইজ্জু 'ইন্ডিয়া আউট' মঞ্চ গড়ে তোলার আগে পর্যন্ত ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী মালদ্বীপে বিনা বাধায় ছিল। কিন্তু, মুইজ্জুর 'ইন্ডিয়া আউট' মঞ্চ দুই দেশের সম্পর্ক তলানিতে এনে ঠেকিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নতুন দিল্লিতে মুইজ্জুর উপস্থিতি দুই দেশের সেই সম্পর্ক ভালো হওয়ার ইঙ্গিত। ২০২৩-২৪ সালে, ভারত-মালদ্বীপ, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য $৯৭৯ মিলিয়নে পৌঁছেছিল। সামুদ্রিক পণ্য, নির্মাণ সামগ্রী, পর্যটন, শিক্ষার মত নানা বিষয় এই বাণিজ্যের মূলে।
৫. সেশেলস, ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমেদ আফিফ
রপ্তানি:- $৭৬ মিলিয়ন, আমদানি:-$৯ মিলিয়ন
ভারত এবং সেশেলস একটি কৌশলগত সম্পর্কের অংশীদার। সামুদ্রিক নিরাপত্তা এবং পরিবেশগত সহযোগিতার ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। মাদাগাস্কারের উত্তরে, সেশেলস ভারত মহাসাগরের সবচেয়ে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপপুঞ্জগুলোর একটি। মৎস্য ও পর্যটনকে কেন্দ্র করে ২০২৩-২৪ সালে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য হয়েছিল $৮৫ মিলিয়ন। অতীতে উভয় দেশই যৌথ ঐতিহ্য সংরক্ষণ প্রকল্পে যুক্ত রয়েছে। ভবিষ্যতে পরিবেশ সুরক্ষা চুক্তিকে শক্তিশালী করা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার মত বিষয় নিয়ে যৌথভাবে এগিয়ে যেতে চায় ভারত এবং সেশেলস।
৬. ভুটান, রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুক
রপ্তানি:- $৯৬৪ মিলিয়ন, আমদানি:- $৩৩৯ মিলিয়ন
ভারত এবং ভুটানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আর্থিক এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশ সব পরিস্থিতিতেই বন্ধু। ২০২৩-২৪ সালে, ভারত এবং ভুটানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল $১.৩ বিলিয়ন। ভারত, ভুটানের জলবিদ্যুৎ সেক্টরে এক প্রধান অংশীদার। ভুটানি ঐতিহ্য সংরক্ষণে শিক্ষাগত আদান-প্রদান এবং সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার মাধ্যমে দুই দেশের সাংস্কৃতিক বন্ধন দৃঢ় হয়েছে। ভবিষ্যতের আলোচনা নতুন বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে অর্থনৈতিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের ওপর হবে।
৭. মরিশাস, রাষ্ট্রপতি পৃথ্বীরাজসিংহ রূপন
রপ্তানি:- $৭৭৮ মিলিয়ন, আমদানি:- $৭৪ মিলিয়ন
ভারত এবং মরিশাসের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ২০২৩-২৪ সালে ভারত-মরিশাসের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের মূল্য ছিল $৮৫২ মিলিয়ন। যার মূলে- টেক্সটাইল, চিনির মত বেশ কিছু পণ্য। দুই দেশের মধ্যে প্রবাসী ভারতীয়দের মাধ্যমে সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশ নিয়মিত সাংস্কৃতিক সম্পর্ক বিনিময়ে জড়িত। ভবিষ্যতে দুই দেশ ডিজিটাল প্রযুক্তি, অর্থনীতির মত বিভিন্ন ক্ষেত্রে অংশীদারিত্বের ওপর নজর দেবে।
(লেখক দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একজন ইন্টার্ন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে বিষয়ক দফতরের থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।)