Advertisment

Explained: নতুন করিডর বদলে দেবে বিশ্ব! ভারতের প্রাপ্তি কতটা, জানলে গর্ব হবে

চিনের করিডর তৈরির চেষ্টার বিকল্প।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Real big deal

নয়াদিল্লিতে শনিবার, ২০২৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মহম্মদ বিন সলমন আল সৌদ (বামে) এর সঙ্গে দাঁড়িয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হাত মেলাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে। (এপি ছবি /ইভলিন হকস্টেইন, পুল)

জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে শনিবার ভারত থেকে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপের মধ্যে একটি মাল্টিমোডাল পরিবহণ এবং শক্তি করিডরের ঘোষণা, উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের অঞ্চলগুলোর সঙ্গে ভারতের গভীর সংযোগের ক্ষেত্রে এক অগ্রগতির পথনির্দেশ করেছে। চিনের দশক-পুরনো বেল্ট অ্যান্ড রোড তৈরির প্রচেষ্টা এই অঞ্চলে চিনের সংযোগ প্রকল্পগুলো নিয়ে দীর্ঘ উদ্বেগ, জমি ব্যবহারের অনুমতি দিতে পাকিস্তানের অস্বীকৃতি, ইরানের মাধ্যমে ইউরেশীয় স্থলভাগে বিশ্বাসযোগ্য সংযোগ গড়ে তোলার নিরর্থক অনুসন্ধানে হতাশ ভারত, আরব এবং ইউরোপ অবশেষে একটি সংযোগের সূত্র খুঁজে পেল।

Advertisment

দোভালের বৈঠক

ভারত ও আরব উপদ্বীপের মধ্যে জাহাজ এবং রেল সংযোগের ধারণাটি উঠে আসে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের চলতি বছরের মে মাসে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের সঙ্গে বৈঠকের পর। তারপর থেকে, বিষয়টির দ্রুত অগ্রগতি ঘটেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সহ জি২০ সম্মেলনের জন্য নয়াদিল্লিতে প্রথমসারির প্রায় সমস্ত নেতাদের উপস্থিতি এই রূপ বদলানো প্রকল্পটি অনুসরণের আনুষ্ঠানিক কাঠামো উন্মোচনের সুযোগ দিয়েছে।

জুড়বে নানা প্রান্ত

এই প্রকল্পে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং সৌদি আরবের মধ্য দিয়ে আরব উপদ্বীপজুড়ে একটি রেললাইন নির্মাণ এবং এই করিডরের উভয়প্রান্তে ভারত ও ইউরোপের সাথে জাহাজ সংযোগের বিষয়টিও জড়িত। একটি অপটিক্যাল ফাইবার লিংকের মাধ্যমে পাইপলাইন এবং ডেটার মাধ্যমে শক্তি পরিবহণের জন্য করিডোরটি আরও উন্নত করা হতে পারে। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ এবং ইজরায়েলের তেল আবিব সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নিয়েছে। তারই অঙ্গ হিসেবে এই প্রকল্পে ইজরায়েলের মত অন্যান্য দেশগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। প্রকল্পটি বেশ কয়েকটি নতুন ভূ-রাজনৈতিক প্রবণতাকে তুলে ধরেছে। সেগুলো হল:-

প্রথমত

মাত্র কয়েক বছর আগে, দিল্লিতে প্রচলিত ধারণা ছিল যে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে একসঙ্গে কাজ করতে পারে কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে তাদের মিল নেই। সেই মিথ ভেঙে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইজরায়েল এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সঙ্গে কয়েকটি যৌথ অর্থনৈতিক প্রকল্পের বিকাশের জন্য ১২ইউ২ মঞ্চ স্থাপনের কাজে হাত লাগিয়েছে। ভারত-আরব-ইউরোপা করিডোর তাই অনেক বেশি ফলপ্রসূ হতেই পারে।

দ্বিতীয়ত

এটি পশ্চিমের সঙ্গে ভারতের স্থলপথে সংযোগের ওপর পাকিস্তানের ভেটো ভেঙে দিল। ১৯৯০-এর দশক থেকে, দিল্লি পাকিস্তানের সাথে বিভিন্ন আঞ্চলিক সংযোগ প্রকল্প গড়তে চেয়েছে। ইসলামাবাদ কিন্তু ভারতকে স্থলবেষ্টিত আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ায় প্রবেশাধিকার দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে অনড় ছিল।

তৃতীয়ত

তেহরান ভারতের জন্য আরও উন্মুক্ত পথ দিতে রাজি। কিন্তু, পশ্চিমের সঙ্গে এর দ্বন্দ্ব ইরানজুড়ে বাণিজ্যিক করিডোরের উপযোগিতার ওপর ইউরেশিয়াতে ছায়া ফেলেছে।

চতুর্থত

করিডরটি আরব উপদ্বীপের সঙ্গে ভারতের কৌশলগত সম্পর্ককে আরও গভীর করবে। মোদী সরকার, গত কয়েক বছরে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং সৌদি আরবের সঙ্গে দ্রুত রাজনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল। এখন ভারত ও আরবের মধ্যে স্থায়ী সংযোগ গড়ে তোলার সুযোগ তাদের কাছে রয়েছে।

পঞ্চম

মেগা কানেক্টিভিটি প্রজেক্ট, মার্কিন কর্তাদের কথায়, আন্তঃ-আঞ্চলিক সংযোগের প্রচারের মাধ্যমে আরব উপদ্বীপে রাজনৈতিক তাপমাত্রা প্রশমনে সাহায্য করতে পারে। 'শান্তির জন্য পরিকাঠামো' দীর্ঘদিন ধরেই মধ্যপ্রাচ্যের কাছে একটি লোভনীয় কিন্তু অধরা লক্ষ্য। বর্তমান করিডর সেই লক্ষ্যপূরণে সহায়তা করে কি না, সেটাই দেখার।

ষষ্ঠত

এটা কোনও গোপন বিষয় নয় যে নতুন করিডরটি চিনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) বিকল্প হিসেবে আনা হয়েছে। এই প্রকল্প দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশ গ্রহণ করেছে। নতুন করিডর যে গতিতে বাস্তবায়িত হবে, সেই পরিস্থিতিতে বিআরআই-এর সঙ্গে যুক্ত আর্থিক এবং পরিবেশগত সমস্যা, স্থায়িত্বের সমস্যা এড়ানো এবং মেটানোও একটা বড় চ্যালেঞ্জ।

সপ্তম

করিডরটি এই অঞ্চলের পরিকাঠামো উন্নয়নে ইউরোপের গতিশীলতাকেও তুলে ধরবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২১-২২ সালে বিশ্বব্যাপী পরিকাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্যে ব্যয়ের জন্য ৩০ কোটি ইউরো বরাদ্দ করেছিল। নতুন করিডরের ক্ষেত্রে ইইউ আরব এবং ভারতকে সঙ্গে নিয়েছে।

আরও পড়ুন- জি২০-তে বিরাট সাফল্য মোদীর! ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ মেগা আর্থিক করিডরের ঘোষণা

অবশেষে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন অ্যাঙ্গোলা, গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো এবং জাম্বিয়াকে সংযুক্ত করে একটি ট্রান্স-আফ্রিকান করিডর নির্মাণেরও পরিকল্পনা করেছে। ভারত, যেটি আফ্রিকার সঙ্গে সাধারণভাবে এবং বিশেষ করে ভারত মহাসাগরের উপকূলের দেশগুলোর সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আফ্রিকাতেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দলে থাকতে চাইবে ভারত।

Europe saudi arabia G-20 Summit Modi Government
Advertisment