জেডি (ইউ) নেতা নীতীশ কুমার রবিবার (২৮ জানুয়ারি) নবমবারের জন্য বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। তিনি ১০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে পাঁচ বার পক্ষ বদলালেন। নীতীশ যখন বিজেপির বিরুদ্ধে জোটে যোগ দেন, তখন গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে কট্টর সমালোচনা করেছিলেন। আবার, যখন বিজেপির জোটে যোগ দেন, তখন আবার বিরোধীদের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করলেন।
১. ১৯৯৬ সালে নীতীশ প্রথম বিজেপির সঙ্গে হাত মেলান
১৯৭৪-৭৫ সালে জয়প্রকাশ নারায়ণ আন্দোলন করার সময় নীতীশ বিহারের অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি রাজনীতিতে তাঁর প্রথম কয়েক বছর আরও ক্যারিশম্যাটিক লালুপ্রসাদ যাদব এবং ফায়ারব্র্যান্ড নেতা জর্জ ফার্নান্দেজের ছায়ায় কাটান। ফার্নান্দেজ এবং নীতীশ একসঙ্গে ১৯৯৪ সালে সমতা পার্টি গঠন করেন। রাজনৈতিক ছলচাতুরির প্রথম দিকের প্রদর্শনে, নীতীশ বুঝতে পেরেছিলেন যে তাঁর দলের স্বার্থ এনডিএতেই সবচেয়ে বেশি পূরণ হবে। সেই কারণে তিনি ১৯৯৬ সালে বারহ থেকে লোকসভা আসনে জয়ী হন। ২০০০ সালে এনডিএর সমর্থনে সাত দিনের জন্য বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হন।
২. নৈতিক ভিত্তিতে রেলমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ
অটলবিহারী বাজপেয়ীর এনডিএ সরকারে নীতীশ কুমার কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী এবং ভূতল পরিবহণমন্ত্রী হন। ১৯৯৯ সালের ২ আগস্ট, পশ্চিমবঙ্গের গাইসালে দুটি ট্রেনের সংঘর্ষে প্রায় ২৮৫ জন নিহত হন। এরপর সেই দুর্ঘটনার দায়িত্ব নিয়ে মন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেন নীতীশ। ইন্টারনেট টিকিট বুকিং সুবিধা এবং তৎকাল ব্যবস্থার মত সংস্কারের জন্য তার সংক্ষিপ্ত মেয়াদ প্রশংসিত হয়েছিল। একই বছর, তিনি কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নিযুক্ত হন এবং ২০০১ সালে, রেলওয়ে মন্ত্রক পুনরুদ্ধার করেন।
৩. মোদীকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে বেছে নেওয়ার পর এনডিএ থেকে বেরিয়ে যান
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে, যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এনডিএর প্রধানমন্ত্রীর মুখ হন, তখন, নীতীশ জোট থেকে বেরিয়ে যান। সেই সময় নীতীশ কুমার বলেছিলেন যে নেতাদের একটি 'পরিচ্ছন্ন' এবং 'ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি' থাকা উচিত।
৪. জেডি(ইউ)-এর খারাপ পারফরম্যান্সের পরে পদত্যাগ
২০১৪ সালে জেডি(ইউ)-এর লোকসভা আসন সংখ্যা ২০ থেকে দুটিতে নেমে যাওয়ার পরে, নীতীশ খারাপ প্রদর্শনের দায় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। বিহারে নীতীশের বদলে মুখ্যমন্ত্রী হন জিতনরাম মাঝি। যাইহোক, কয়েক মাস পরে, মাঝিকে পদত্যাগ করতে বলা হয়। তিনি যখন তা করতে অস্বীকার করেন, তখন জেডি(ইউ) থেকে জিতনরামকে বহিষ্কার করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী হয়ে বিহারের কুর্সিতে ফেরেন নীতীশ কুমার।
৫. নীতীশের ছেলে রাজনীতি থেকে দূরে থাকেন
নীতীশের ছেলে নিশান্ত কুমার তাঁর বাবার মতই একজন ইঞ্জিনিয়ার। তিনি তাঁর বাবার চেয়েও ধনী। তবে, রাজনীতি থেকে দূরে থাকেন। ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর, বিহার সরকারের ওয়েবসাইটে আপলোড করা মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর মন্ত্রিসভার সহকর্মীদের সম্পদের বিবরণ অনুসারে, নীতীশের কাছে ২৯,৩৮৫ টাকা নগদ এবং প্রায় ৪২,৭৬৩ টাকা ব্যাংকে আছে। নিশান্তের কাছে ১৬,৫৪৯ টাকা নগদ এবং ১.২৮ কোটি টাকা ফিক্সড ডিপোজিট (এফডি) আছে। এই ফিক্সড ডিপোজিট আছে বিভিন্ন ব্যাংকে। নীতীশের ১৬.৫১ লক্ষ টাকার অস্থাবর সম্পত্তি আছে। আর, তাঁর স্থাবর সম্পত্তির মোট মূল্য প্রায় ৫৮.৮৫ লক্ষ টাকা। নীতীশের ছেলের অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ হল ১.৬৩ কোটি টাকা এবং তাঁর স্থাবর সম্পত্তির মূল্য হল প্রায় ১.৯৮ কোটি টাকা।
৬. কেন সব দল তাকে চায়?
তাঁর অবিশ্বস্ত ট্র্যাক রেকর্ড থাকা সত্ত্বেও, নীতীশ যে কোনও জোটে সহজে যোগদান করতে পারেন। যে কোনও জোট তাঁকে সহজে স্বাগত জানায়। তার কারণ- আরজেডি। অনুগত ভোটারদের বৃহত্তর সামাজিক ভিত্তি এবং লালু যাদবের স্থায়ী জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও, আরজেডির বিরুদ্ধে সুশাসন এবং উন্নয়ন না করার অভিযোগ আছে। শুধু তাই নয়, বিজেপি এবং সর্বভারতীয় রাজনীতিতে নীতীশ কুমারের বিশেষ গুরুত্ব আছে। বিহারে নীতীশের মানের একজন নেতার অভাব আছে। বিহারের রাজনীতিতে বলা হয়, অত্যন্ত পিছিয়ে থাকা জাতি এবং সরকারি কল্যাণমূলক প্রকল্পের সুবিধাভোগীরা নীতীশের ভোট-ব্যাংক। তাঁরা নীতীশের মূল্য বোঝেন।
৭. আরও পদ, কিন্তু ছোট মেয়াদ
নীতীশ কুমার নয়বার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। অন্য অনেকেই কমবার শপথ নিয়ে তাঁর চেয়ে অনেক বেশি সময় ধরে মুখ্যমন্ত্রী থেকেছেন। নীতীশ ১৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু সিকিমের পবনকুমার চামলিং (২৪ বছর), ওড়িশার নবীন পট্টনায়েক (২৩ বছর), বাংলার জ্যোতি বসু (২৩ বছর)-এর মতো অনেকেই তাঁর চেয়ে টানা বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থেকেছেন বা রয়েছেন।