Advertisment

Explained: কোভিডের আঁচেই এবার এক পেট-খারাপের ব্যাক্টেরিয়ার ছোবল-সংবাদ

কেরলের কাসারগড়ে এক ১৬ বছরের মেয়ের মৃত্যু হয়েছে এই ব্যাক্টেরিয়ার ছোবলে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Shigella

ভাইরাস আর ব্যাক্টেরিয়া নিয়ে যেন নাভিশ্বাস উঠেছে পৃথিবীর। এই দুইয়ের এক জন যদি বলে আমি শক্তিমান, তো অন্য জন তাকে কাঁচকলা দেখিয়ে বলবে-- আমি, আমি আমি…। এ ওকে শক্তি প্রদর্শন করলেও, এমনিতে কিন্তু একে অপরের পরিপূরক হয়ে ওঠে এরা, অনেক সময়তেই। তখন দোঁহে মিলে চলে নাকানিচোবানি খাওয়ানো। এই যেমন ধরুন কোভিড হলে, নানা সময়ে দেখা গিয়েছে প্রতিরোধশক্তি একেবারে নীচে চলে গিয়েছে। তখন অনেক ব্যাক্টেরিয়া, যারা কিনা দেহের মধ্যেই হাত-পা গুটিয়ে পড়েছিল, হা-রে-রে-রে বলে নেমে পড়েছে। যা হোক ভাইরাস-ব্যাক্টেরিয়ার মধ্যেকার সম্পর্কের রসায়নের রস নিংড়ানোর জন্য এই লেখা নয়। কোভিড-নিভন্ত পৃথিবীতে একটি ব্যাক্টিরিয়া নতুন করে জ্বালা ধরিয়েছে, এই লেখাটি তা নিয়েই। ব্যাক্টেরিয়ার নাম আপনাদের অনেকে নাও শুনে থাকতে পারেন। কারণ নামটা সত্যিই একটু অদ্ভুত-- শিগেলা (Shigella)। কেরলের কাসারগড়ে এক ১৬ বছরের মেয়ের মৃত্যু হয়েছে এই ব্যাক্টেরিয়ার ছোবলে। জানিয়েছে কেরলের স্বাস্থ্য মন্ত্রক। জানানো হয়েছে, আরও তিরিশ জন এই ভাইরাসের দাঁতে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে। চেরুভাথুরের একটি খাবারের দোকান থেকে চিকেন শওয়ারমা খাওয়ার পরই এরা অসুস্থ বলে জানা যাচ্ছে। ওই দোকানটির এক কর্মীকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে ইতিমধ্যে। ফুড ইনফেকশন বা খাদ্যে বিষক্রিয়ায় এই ঘটনাটি ঘটেছে। খাবার খেয়ে পেটখারাপ আকছার ঘটছে, কিন্তু শিগেলায় ইনফেকশনের কবলে পড়াটা কি ব্যতিক্রমী কিছু, এ রকম অসুস্থতায় কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে, আসুন দেখে নিই।

Advertisment

প্রথমে জানতে হবে শিগেলা কী

শিগেলা হল এক ধরনের ব্যাক্টেরিয়াম, যা এন্টেরোব্যাক্টের পরিবারের সদস্য। এন্টেরোব্যাক্টের সেই জাতীয় ব্যাক্টেরিয়াগুলিকে বলা হয়, যারা অন্ত্রে থাকে, এদের মধ্যে সবগুলি আবার আমাদের পক্ষে ক্ষতিকরও নয়। ক্ষতিকরের তালিকায় যেগুলি রয়েছে তার মধ্যে প্রথমের দিকেই থাকবে শিগেলা। এর কাজ হল ডায়ারিয়ায় জেরবার করে তোলা। যাকে আমরা আমাশয় বা আমাশা বলে থাকি। কখনও কখনও রক্ত আমাশাও হয়, পেটে খিচুনি দিয়ে ব্যথা হতে পারে, জ্বরও আসতে পারে সঙ্গে। এর সংক্রমণে ভুগতে হতে পারে ভালই। কারণ, অল্প সংখ্যক এই ব্যাক্টেরিয়াই আপনাকে পেড়ে ফেলার পক্ষে যথেষ্ট। ছড়ায়ও তাড়াতাড়ি। নষ্ট খাবার থেকে এই অসুখ হতে পারে। যেমন কেরলে হয়েছে।

শিগেলা সংক্রমণ কতটা মারাত্মক হতে পারে?

শিগেলোসিস মোটেই সচরাচর হয় না। নষ্ট-পচা খাবার থেকে টাইফয়েড কিংবা কলেরা হতে দেখি আমরা সাধারণত। ১০০টি ডায়রিয়ার ঘটনার মধ্যে একটার ক্ষেত্রে এই ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ হয়ে থাকে। বললেন নয়া দিল্লির ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসক ডা. সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায়। অন্তঃসত্ত্বাকালে কাউকে এই ব্যাক্টেরিয়া ধরলে, তার কষ্ট বাড়তে পারে বেশি মাত্রায়। এবং পাঁচ বছরের নীচে শিশুদের ক্ষেত্রেও শিগেলা দেখাতে পারে মারাত্মক খেলা। দু'ক্ষেত্রেই রোগ প্রতিরোধশক্তির দুর্বলতা এটির মাথা চাড়া দেওয়ার বড় কারণ। চার ধরনের শিগেলা ব্যাক্টেরিয়া মানুষকে হামলা করে থাকে। সিগেলা সোনেই, শিগেলা ফ্লেক্সনেরি, শিগেলা বয়দি এবং শিগেলা ডিসেন্ট্রি। চতুর্থ নম্বরটি সবচেয়ে মারাত্মক। কারণ এর টক্সিন একেবারে কান ঝালাপালা করে দেওয়ার মতোই বিষাক্ত।

আরও পড়ুন- মরুকরণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রাষ্ট্রসংঘের সভা, বিশ্বকে পথ দেখাবেন ভারতের ‘সদগুরু’

মৃত্যু কি এই রোগে স্বাভাবিক?

না, তা নয়। তবে কিন্তু আছে একটা। ডাক্তাররা জানাচ্ছেন, যদি কোনও রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাটি একেবারেই বিপর্যস্ত অবস্থায় থেকে থাকে, তা হলে এতে ভয়ঙ্কর কিছু ঘটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও থাকতে পারে, নচেৎ নয়। ডাক্তাররা বলছেন, যদি রোগী ঠিক সময়ে হাসপাতালে হাজির পৌঁছে যায়, তা হলে সহজে রোগ সেরে যায়। অ্যান্টিবায়োটিক্সের চাকু চালিয়ে রোগের দফা গয়া করা যায়। অনেক সময় একটি সমস্যা হয়, সেটি হল, অ্যান্টিবায়োটিক্স রেজিস্ট্যান্স, মানে অ্যান্টিবায়োটিক্সে যদি কাজ না করে। আবার শিগেলা একেবারে উপুড় করে দেয় টক্সিন। অ্যান্টিবায়োটিক্স দেওয়ার পরও সে টক্সিন ঢালতে থাকে। তাতে করে কিডনিতেও এটি হামলা করতে পারে, যা মাল্টি অর্গান ফেলিওরের দিকে নিয়ে যেতে পারে কোনও রোগীকে। তবে মৃত্যুর হার এই সংক্রমণে এক শতাংশের কম। এটা পড়ে স্বস্তির বড় একটা শ্বাস ফেলছেন নিশ্চয়ই।

Read story in English

Advertisment