বৃহস্পতি সন্ধেবেলা শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেবেন। কংগ্রেস ও ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি) কে নিয়ে গঠিত মহাবিকাশ আগাড়ি সরকারের নেতৃত্ব দেবেন তিনি।
শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান হবে ঐতিহাসিক শিবাজি পার্ক ময়দানে। সেন্ট্রাল মুম্বইয়ের দাদারের কাছে ২৮ একর খোলা এই জায়গা মারাঠি অধ্যুষিত। শিবাজি পার্ক শিবসেনার দুর্গ বলে পরিচিত তো বটেই একইসঙ্গে দলের আবেগের দিক থেকেও এ জায়গা অতি মূল্যবান।
আরও পড়ুন, অজিত পাওয়ার: এনসিপির সঙ্গে সম্পর্ক এবং…
১৯৯৫ সালে শিবসেনা বিজেপি জোট যখন প্রথমবার এ রাজ্যে ক্ষমতায় আসে তখন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে এখানেই শপথ নিয়েছলেন মনোহর জোশী।
ইতিহাসে শিবাজি পার্ক
১৯২৫ সালে এ পার্ক স্থাপিত হয়। তখন এর নাম ছিল মাহিম পার্ক। ১৯২৭ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামী তথা বিএমসি কাউন্সিলর অবন্তিকাবাই গোখলের উদ্যমে এ পার্কের নামকরণ হয় শিবাজি পার্ক। জনগণের চাঁদায় এখানে শিবাজির একটি মূর্তি স্থাপিত হয়।
১৯৩০ থেকে ১৯৪০-এর মধ্যে এই পার্কে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মাবেশ অনুষ্ঠিত হয় অনেকবার। এবং স্বাধীনতাউত্তর কালে এ জায়গার সংযুক্ত মহারাষ্ট্র মুভমেন্টের সমাবেশস্থল হয়ে ওঠে এই শিবাজি পার্ক। পূর্বতন বম্বে রাজ্য থেকে পৃথক হয়ে মহারাষ্ট্র গঠন ছিল তাদের অন্যতম দাবি।
এই আন্দোলনের নেতাদের মধ্যে ছিলেন সমাজ সংস্কারক কেশব সীতারাম প্রবোধঙ্কর ঠাকরে, শিবসেনা প্রতিষ্ঠাতা বাল ঠাকরের বাবা। কেশব ঠাকরে প্রবোধন নামে একটি পাক্ষিক পত্রিকা চালাতেন, যেখানে সমস্ত রকম সামাজিক অন্যায়ের সমালোচনা প্রকাশিত হত।
শিবসেনা এবং তাদের দশেরা সমাবেশ
১৯৬৬ সালে বাল ঠাকরে শিবসেনা প্রতিষ্ঠা করেন। এ দল মূলত ছিল দক্ষিণ ভারতীয় এবং কমিউনিস্ট বিরোধী।
ঠাকরে প্রথমবার সমাবেশে ভাষণ দেন শিবাজি পার্কে। প্রতিবছর দশেরা উপলক্ষে এখানে জমায়েতের আয়োজন করতেন তিনি।
মহারাষ্ট্রের অধিবাসীদের দিয়ে ঘেরা শিবাজি পার্কের অনুষ্ঠান স্থানীয় জনগণের সমর্থন পেয়ে যেতে শুরু করেছিল সহজেই। ফায়ারব্র্যান্ড নেতা বাল ঠাকরের ভাষণ শুনতে প্রচুর মানুষ ভিড় জমাতেন, দশেরায় তাঁর ভাষণ থেকে বুঝে নেওয়া যেত দল কী লাইন নিতে চলেছে।
আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: মহারাষ্ট্রের সেচ দুর্নীতি এবং অজিত পাওয়ার
এরপর ঠাকরে দশেরার সমাবেশে অন্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদেরও নিয়ে আসতে শুরু করেন। এঁদের মধ্যে বিজেপি নেতা অটলবিহারী বাজপেয়ী ও প্রমোদ মহাজন যেমন ছিলেন, তেমনই ছিলেন সমাজবাদী নেতা জর্জ ফার্নান্ডেজ এবং শরদ পাওয়ার।
২০১০ সালে বম্বে হাইকোর্ট মুম্বই পুরসভাকে নির্দেশ দেয় যাতে শিবাজি পার্ককে সাইলেন্ট জোনে পরিণত করা হয়। এ নিরদেশের বিরুদ্ধে শিবসেনা মুখপত্র সামনায় সম্পাদকীয় লিখেছিলেন বাল ঠাকরে। আদালত অবশ্য বার্ষিক সমাবেশের অনুমতি দিয়েছিল।
পাঁচ দশকের বেশি সময় পরেও, দশেরার সমাবেশ এখনও চলছে। এখন সেখানে ভাষণ দেন ঠাকরে পুত্র এবং তাঁর উত্তরসূরি উদ্ধব ঠাকরে।
শিবসেনার সদর দফতর সেনা ভবন শিবাজি পার্কের কাছেই। বাল ঠাকরে নিদে বেশ কয়েকবছর ধরে কাছাকাছিই বাস করতেন।
বাল ঠাকরের মৃত্যু
২০১২ সালে ৮৬ বছর বয়সে হৃদরোগে মৃত্যু হয় বাল ঠাকরের। এ পার্কে তাঁর নামে স্মৃতিস্থল নির্মিত হয়েছে। ২০১৮ সালে বিএমসি মুম্বই মেয়রের বাংলো একটি ট্রাস্টের হাতে তুলে দিয়েছে যাতে আরও বড় স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা যায়।
এ পার্কের নাম শিবতীর্থ করারও দাবি উঠেছে।