এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) কর্নাটকের কংগ্রেস নেতা ডি কে শিবকুমারকে গ্রেফতার করেছে। কংগ্রেসের দাবি রাজনৈতিক প্রতিশোধপরায়ণতা থেকেই কেন্দ্রীয় তদন্তসংস্থাকে দিয়ে শিবকুমারকে গ্রেফতার করানো হয়েছে। মঙ্গলবার শিবকুমারকে দিল্লিতে গ্রেফতার করা হয়, আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাঁকে ইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
ইডি যে অর্থনৈতিক অপরাধের অভিযোগে শিবকুমারকে গ্রেফতার করেছে, তার উৎস কী?
ইডি যে মামলা করেছে তার শুরু ২০১৭ সালের অগাস্ট মাসে। তদন্তে যা জানা গিয়েছিল, তার ভিত্তিতে আয়তর দফতরের এক ডেপুটি ডিরেক্টর ২০১৮ সালের ১৩ জুন বেঙ্গালুরুর আর্থিক অপরাধ সম্পর্কিত বিশেষ আদালতে একটি গোপন অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগে বলা হয়, শিবকুমার এবং তাঁর দিল্লি ও বেঙ্গালুরুর চার সহযোগী একটি বড়সড় ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন যার মাধ্যমে কর ফাঁকি দিয়েছেন ওই কংগ্রেস নেতা।
আরও পড়ুন, টাইমলাইন: আইএনএক্স মিডিয়ায় কীভাবে জড়ালেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী চিদাম্বরম
আয়কর দফতর এক বিবৃতিতে বলেছে, আয়কর দফতর দীর্ঘ সময় জুড়ে তদন্ত করে শিবকুমার যে কর ফাঁকির জাল বিস্তার করে রেখেছিলেন সে সম্পর্কিত তথ্য জোগাড় করে এবং হিসাব বহির্ভূত নগদ অর্থের সন্ধান পায়, এবং সন্দেহাতীত ভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারে যে শিবকুমার সংগঠিত ভাবে কর ফাঁকিতে যুক্ত এবং অন্যদেরও এতে যুক্ত রাখার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
আয়কর দফতরের তদন্তের ভিত্তিতে এবং আদালতে কর ফাঁতি ও কর ফাঁকির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগের ভিত্তিতে ইডি ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শিবকুমার ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।
ইডি এ মামলায় যে চার সহযোগীকে অভিযুক্ত করেছে, তাঁরা হলেন, শচীন নারায়ণ নামের এক রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী এবং শিবকুমার ব্যবসার অংশীদার, সুনীল কুমার শর্মা নামের এক ব্যবসায়ী তথা শিবকুমারের সহযোগী, আঞ্জানেয়া হনুমান্তাইয়া নামের এক সরকারি কর্মী যিনি শিবকুমারে সম্পত্তি এবং শিবকুমারের সঙ্গে সংযুক্ত বিভিন্ন তহবিলের রক্ষণাবেক্ষণ করতেন এবং রাজেন্দ্র এন নামে শিবকুমারের এক সহযোগী।
মামলা দায়ের হয় অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০ বি (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র) ধারানুসারে।
আয়কর দফতরের তদন্ত থেকে কী পাওয়া গিয়েছিল, যার ভিত্তিতে ইডি এই মামলা করে?
২০১৭ সালে আয়কর দফতর নয়া দিল্লিতে শিবকুমার ও তাঁর সহযোগী শচীন নারায়ণ ও সুনীল কুমার শর্মার সঙ্গে সম্পর্কিত চারটি অ্যাপার্টমেন্টে তল্লাশি চালিয়ে মোট ৮.৫ কোটি টাকার সন্ধান পায়, যার কোনও হিসাব নেই। এখান থেকেই ইডি মামলার সূত্রপাত।
আরও পড়ুন, নতুন ট্রাফিক আইনে অপরাধ ও শাস্তির তালিকা
এ ছাড়া ইডির হাতে ছিল আঞ্জানেয়া হনুমান্তাইয়া এবং এন রাজেন্দ্রর বিবৃতি। যাঁরা অভিযোগ করেছিলেন এই অ্যাপার্টমেন্টগুলিতে তাঁরা টাকা রেখেছিলেন শিবকুমারের হয়ে।
শিবকুমারের হিসাব বহির্ভূত অর্থ জমা করার অভিযোগ রয়েছে আঞ্জানেয়া হনুমান্তাইয়ার বিরুদ্ধে। যেখানে নগদ অর্থ মিলেছে, সে ফ্ল্যাটগুলির চাবি রাখার দায়িত্বও তাঁরই হাতে। সেই আঞ্জানেয়া হনুমান্তাইয়া আয়কর দফতরকে বলেছেন এই ফ্ল্যাটগুলি থেকে যে অর্থ পাওয়া গিয়েছে, তা সবই শিবকুমারের। যদিও এই ফ্ল্যাটগুলির মধ্যে দুটির মালিক অন্য সহযোগীরা এ অর্থ তাঁদের বলে দাবি করেছেন।
আয়কর দফতর তাদের আদালতে দায়ের করা অভিযোগে জানিয়েছে, হনুমান্তাইয়ার বিবৃতি থেকে পরিষ্কার যে এই চারটি জায়গা থেকে পাওয়া সমস্ত নগদই শিবকুমারের নির্দেশে ওখানে রাখা হয়েছিল।
২০১৮ সালের ১৩ জুন যে গোপন অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল, তাতে বলা হয়েছিল,
এই চারটি ফ্ল্যাট কেনা হয়েছিল শিবকুমারের অতিথিদের আপ্যায়ন করা এবং শিবকুমারের হিসাব বহির্ভূত অর্থ জমা করার জন্য। শিবকুমারের এই টাকা বেঙ্গালুরু এবং অন্য জায়গা থেকে নিয়ে যেতেন সুনীল শর্মা, সেগুলি ফ্ল্যাটে জমা করতেন যা বিভিন্ন সময়ে শিবকুমারের নির্দেশে বিভিন্ন জায়গায় বাঁটোয়ারা করা হত। এই গোটা ষড়যন্ত্রের ছক ছিল শিবকুমার, শচীন নারায়ণ এবং সুনীল শর্মার। উদ্দেশ্য ছিল কর ফাঁকি দেওয়া।
আয়কর দফতরের মতে, শিবকুমার এ টাকার কোনও হিসেব দিতে পারেননি। কর বিভাগ এও জানিয়েছে যে, তল্লাশির সময়ে পাওয়া নথি থেকে জানা গিয়েছে ফ্ল্যাটে মজুত অর্থের মধ্যে থেকে টাকা দেওয়া হয়েছে এআইসিসি সদস্য ভি মুলগুন্ডকে। আয়কর দফতরের তল্লাশি থেকে জানা গিয়েছে, যে ভোটে কংগ্রেসের আহমেদ প্যাটেল প্রার্থী ছিলেন, গুরুত্বপূর্ণ সেই রাজ্যসভা ভোটের আগে, গুজরাটের ৪৪ জন কংগ্রেস বিধায়ককে বেঙ্গালুরুর একটি রিসর্টে রাখার বন্দোবস্ত করেছিলেন শিবকুমার।
আয়কর দফতর ও ইডির মামলা নিয়ে কী বলছেন শিবকুমার?
গত ২৫ জুন বেঙ্গালুরুর এক বিশেষ আদালত শিবকুমার ও তাঁর সহযোগীদের আয়কর মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে অস্বীকার করে।
আরও পড়ুন, চন্দ্রযান-২: একাধারে ল্যান্ডার, অরবিটার, রোভার; চাঁদের মিশন কয় প্রকার?
এ বছরেরই ফেব্রুয়ারি মাসে শিবকুমার ও তাঁর সহযোগীরা কর্নাটক হাইকোর্টে আবেদন করে বলেন, অর্থ পাচারের মামলার তদন্তে হাজিরা দেওয়ার জন্য ইডি যে সমন জারি করেছে তা খারিজ করা হোক।
শিবকুমারের যুক্তি ছিল আয়কর দফতর হিসাব বহির্ভূত অর্থের সন্ধান পাওয়া গেলে তা অর্থ পাচারের আইনের আওতায় পড়ে না, ফলে তাঁকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক। তিনি আরও বলেন, আয়কর বিভাগের আনা মামলা যেহেতু চলছে, সে কারণে তাঁকে অর্থ পাচারের মামলায় অভিযুক্ত করা যায় না।
ইডি-র বক্তব্য ছিল হিসাব বহির্ভূত এই অর্থ পাচারের উদ্দেশ্যে কিনা সে বিষয়ে তদন্ত করার তারা অধিকারী।
গত ২৯ অগাস্ট কর্নাটক হাইকোর্টের বিচারপতি অরবিন্দ কুমার শিবকুমার ও তাঁর সহযোগীদের সমন বানচাল করার আবেদন খারিক করে দেন এবং ইডি তদন্তে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেন। ওই দিনই ইডি নতুন নোটিস জারি করে এবং ৩০ অগাস্ট তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজিরা দিতে বলে। চারদিন ধরে জেরা করার পর গত ৩ সেপ্টেম্বর ইডি শিবকুমারকে গ্রেফতার করে। তাদের বক্তব্য, শিবকুমার সহযোগিতা করতে অসমর্থ হয়েছেন।
Read the Full Story in English