Pakistan Parliamentary Election: বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ফের পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছে পাকিস্তানের গণতন্ত্র। ৭৭ বছর আগে স্বাধীনতা পেলেও বিরূপ প্রতিবেশী দেশটির এটা ১২তম সংসদীয় নির্বাচন। ৪৪টি রাজনৈতিক দল ২৬৬টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এমনিতে পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাস অশান্তিতে ভরপুর। তিনটি সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে। ৩০ জন প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে কেউই পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি।
- ৭৭ বছরের দেশে ১২তম সংসদীয় নির্বাচন।
- ৩০ জন প্রধানমন্ত্রীর কেউই মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি।
- তিনটি সামরিক অভ্যত্থানে বারবার সেনাশাসনে পাকিস্তান।
২৩ বছরের অপেক্ষা
পাকিস্তানের গণতন্ত্রের জীবন ঠিক ভারতের মত কাটেনি। প্রতিবেশী দেশটিতে সংবিধান প্রণয়ন, প্রথম সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন, একটি গণতান্ত্রিক জাতি গঠনের দুটি মূল প্রক্রিয়া অনেক বিলম্বিত হয়েছিল। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এশিয়া সোসাইটির দ্বারা প্রকাশিত এনসাইক্লোপিডিয়া অফ এশিয়ান হিস্ট্রির জন্য আয়েশা জালালের রিপোর্ট 'পাকিস্তান: এ পলিটিক্যাল হিস্ট্রি'র ওপর ভিত্তি করে বলা যায়, 'জাতীয় ভাষা, ইসলামের ভূমিকা, প্রাদেশিক প্রতিনিধিত্ব এবং কেন্দ্র আর প্রদেশগুলোর মধ্যে ক্ষমতার বন্টন'-এর কারণেই এমনটা ঘটেছে।
- ভারতের বিরুদ্ধে বারবার ক্ষমতা দেখানোর চেষ্টা পাকিস্তান সেনার।
- ভারতের কাছে তিনটি যুদ্ধে পরাজিত হয়েছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী।
- ভারতের কাছে পাক সেনা হারার পরই প্রতিবার পাকিস্তানে গণতন্ত্র ফিরেছে।
প্রথম সামরিক অভ্যুত্থান
১৯৫৬ সালের মার্চে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান চূড়ান্তভাবে বাস্তবায়িত হয়। তার পরও অস্থিতিশীলতা অব্যাহত ছিল। ১৯৫৬ থেকে ১৯৫৮ সালের মধ্যে, তিনটি ভিন্ন রাজনৈতিক দলের (আওয়ামি লিগ, মুসলিম লিগ এবং রিপাবলিকান পার্টি) থেকে তিন প্রধানমন্ত্রী- হুসেন শাহিদ সুরাবর্দি, ইব্রাহিম ইসমাইল চুন্দ্রিগর ও ফিরোজ খান নুন ক্ষমতায় আসেন। বিশৃঙ্খলা শেষ পর্যন্ত জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ুব খানকে একটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটাতে সাহায্য করে। জাতীয় নির্বাচন, যা ১৯৫৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে হওয়ার কথা ছিল, অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছিল।
ফের সাধারণ নির্বাচন
পাকিস্তানের এই সামরিক শাসন দুর্বল হতে এক দশকেরও বেশি সময় লেগেছে। দুর্বল হয়েছিল প্রধান তিনটি কারণে। সেগুলো হল- ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয়। পশ্চিম পাকিস্তানে শহুরে অস্থিরতা এবং পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি জাতীয়তাবাদের উত্থান। সামরিক শাসনে দুর্বলতার ফলে ১৯৭০ সালে পাকিস্তানে প্রথম সাধারণ নির্বাচন আয়োজিত হয়।
বাংলাদেশ-ভুট্টো এবং সামরিক শাসনে প্রত্যাবর্তন
১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচন পাকিস্তানের ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিকতা, সামাজিক সংঘাতের মুখ খুলে দেয়। জুলফিকার আল ভুট্টোর নেতৃত্বে পাকিস্তান পিপলস পার্টি বেলুচিস্তান এবং উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে পরাজয় সত্ত্বেও পশ্চিম পাকিস্তানে ৮১টি আসন জিতে সবচেয়ে বড় দল হিসেবে উঠে আসে। বেলুচিস্তান এবং উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে ইসলামি দলগুলো বিজয়ী হয়। পূর্ব পাকিস্তানে, মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামি লিগ প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের ছয় দফা কর্মসূচির পক্ষে প্রচার চালিয়েছিল। পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশের ১৬২টি আসনের মধ্যে ১৬০টিতে আওয়ামি লিগই জিতেছিল।
বাংলাদেশে বিদ্রোহ
এশিয়া সোসাইটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'আওয়ামি লিগের সরকারের সম্ভাবনা পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিবিদদের কাছে হুমকির মত ছিল। তাঁরা সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে মুজিবুরকে ক্ষমতায় আসতে বাধা দেন। এই ঘটনা পূর্ব পাকিস্তানে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এমনিতেই পূর্ব পাকিস্তান সরকারের সমস্ত ক্ষেত্রে তাদের নিম্ন প্রতিনিধিত্ব, অর্থনৈতিক বঞ্চনা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার দমনে বিরক্ত ছিল।' ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে পূর্ব পাকিস্তানে একটি বিদ্রোহ শুরু হয়। যার ফলে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের আরেকটি যুদ্ধ হয়। আর, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়।
জুলফিকার আলি ভুট্টোর ব্যর্থতা
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর এই পরাজয়, পাকিস্তানকে একটি নতুন দিকে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয় ভুট্টোকে। তবে তিনি উল্লেখযোগ্য কোনও পরিবর্তন আনতে ব্যর্থ হন। যেমন, ভুট্টোর ভূমি সংস্কার উচ্চমানের ছিল না। তাঁর শ্রমনীতি ছিল দমনমূলক। তাঁর অর্থনৈতিক নীতিগুলো ছিল এলোমেলো। তিনি তাঁর বিরোধীদের দমন করতে সামরিক ও বেসামরিক আমলাতন্ত্রের ওপরও নির্ভর করতেন। পিপিপিকে গণভিত্তিক জাতীয় দল হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেননি।
আরও পড়ুন- উত্তেজনায় ফুটছে পাকিস্তান! তাল ঠুকছে সেনা, বিরূপ প্রতিবেশীর পরিস্থিতিতে কড়া নজর ভারতের
ফের সামরিক শাসন জারি
১৯৭৭ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। পিপিপি তার প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স (পিএনএ)-এর বিরুদ্ধে নির্বাচনে জয়লাভ করে। এই অ্যালায়েন্স ছিল নয়টি রাজনৈতিক দলের একটি জোট। এই জোট আবার ছিল ইসমালিস্ট এবং রক্ষণশীলদের দ্বারা প্রভাবিত। যদিও ভুট্টোর দল মোট ২০০ আসনের মধ্যে ১৫৫টি আসনে জয়ী হয়। কিন্তু, তারা পেয়েছিল ৫৮.৬% ভোট। পিএনএ পেয়েছিল ৩৫.৮% ভোট। তারা জিতেছিল ৩৬টি আসন। নির্বাচনে পিএনএ অভিযোগ করেছিল, ভুট্টো কারচুপি করেছেন। এই অভিযোগের পর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। ভুট্টো সামরিক আইন জারি করেন। বিরোধী নেতাদের গ্রেফতার করেন। যা জেনারেল জিয়া-উল হককে পাকিস্তানের ক্ষমতা দখল করার সুযোগ করে দেয়। আর, পাকিস্তানে ১৯৭৭ সালের ৫ জুলাই, দ্বিতীয় সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে।