ওয়াং ই, চিনের বিদেশমন্ত্রী। হঠাৎ ভারতে। হায়দরাবাদ হাউজে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকও হয়েছে তাঁর। কিন্তু আচমকা ভারতে কেন এলেন তিনি, তা নিয়ে হইচই হচ্ছে। কারণ অনুসন্ধান চলছে। আসুন এ ব্যাপারে একটু কথা বলে নেওয়া যাক।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর পৃথিবীর ক্ষমতার সমীকরণটা বেশ বদলে গিয়েছে। রাশিয়ার বিরোধিতা সরাসরি করেনি ভারত। তাদের সঙ্গে অস্ত্র-চুক্তিও বাতিল করেনি। এমনকী, রুশ তেল আমদানিতে বাইডেন সরকার নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও, ভারত সে পথে হাঁটেনি। বরং রাশিয়া থেকে কম দামে অপরিশোধিত তেল কিনছে।
এখন, আমেরিকার সঙ্গে ভারতের এই অবস্থানগত ফারাকটাকেই ব্যবহার করতে চাইছে চিন। শত্রুর শত্রু আমার বন্ধু, এই তত্ত্বে চিন চাইছে আমেরিকা-বিরোধী ব্রিগেডে ভারতকে পেতে। বলছেন বিশ্লেষকদের অনেকেই। তাঁদের মত, যদি পুরোপুরি না-ও পাওয়া যায়, অন্তত সহানুভূতিশীল অবস্থান যদি নেয় ভারত, তা হলেও চিনের সাফল্য কম নয়। অনেকে বলছেন, একে চিনের অনেকটা ঘোলা জলে মাছ ধরাও বলা যেতে পারে।
বিতর্কিত মন্তব্যের পরেও সফর
যস্মিন দেশে যদাচার। কূটনীতিতে যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তানের ইসলামাবাদে অরগানাইজেশন অফ ইসলামিক কান্ট্রিজ বা ওআইসির বৈঠকে দিন দু'য়েক আগেই হাজির ছিলেন চিনের বিদেশমন্ত্রী। যেখানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তো সরাসরি কাশ্মীর নিয়ে আক্রমণ শানিয়েছেন ভারতকে। তাঁকে কাশ্মীরের সঙ্গে প্যালেস্তাইনের তুলনা করতেও শোনা গিয়েছে। আরও নানা মুখে তোপ দাগা হয়েছে। এর পর মঞ্চে উঠে ওয়াং ই বলেন, 'কাশ্মীর নিয়ে ইসলামিক বন্ধুদের কথা শুনলাম, আমারও ওই একই কথা।'
একথা শোনার ফলে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। কী করে ওয়াং এ জাতীয় মন্তব্য করেন, সেই প্রশ্ন উঠে যায় স্বাভাবিক ভাবে। ভারতের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, জম্মু-কাশ্মীর ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। চিনের এ নিয়ে মন্তব্য করার কোনও অধিকার নেই। বিতর্ক তো গর্জন করছে এখনও, কিন্তু এ সবে ওয়াংয়ের ভারত সফর আটকায়নি। কারণ, তাঁর ভারত আসায় কাশ্মীর ইস্যু মুখ্য নয়, ক্ষমতাবলয় বৃদ্ধিই মূল, আমেরিকার বিরুদ্ধে ভারত কত দূর যেতে পারবে, সেটা বোঝাই আসল, বলছেন বিশ্লেষকদের কেউ কেউ।
কাবুলেও সফর
পাকিস্তানের পর, ভারত সফরের ঠিক আগে কাবুলে গিয়েছিলেন চিনের বিদেশমন্ত্রী। সেই সফরও বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। আফগানিস্তান তালিবানের হাতের মুঠোয় যাওয়ার পর, এটাই তো কোনও চিনা মন্ত্রীর সে দেশে প্রথম সফর। সেখানে গিয়ে তালিবানের অন্তর্বর্তী বিদেশমন্ত্রী আমির খান মোত্তাকির সঙ্গে বৈঠক করেন ওয়াং। আর, তার পরই তালিবানের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন আফগানিস্তানে রুশ প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত জামির কাবুলোভ। ফলে, অনেকেই দুই-দুইয়ে চার করে দিচ্ছেন। চিন, রাশিয়া, আফগানিস্তান, পাকিস্তান… জোটপর্বের সলতে পাকানো চলছে নাকি! শোনা যাচ্ছে এমনও।
গালোয়ানের পর প্রথম বৈঠক
গালোয়ান নিয়ে ভারত-চিন সম্পর্কের চড়া সুর সপ্তমে উঠেছিল। সীমান্তে এখনও দু'দেশের টানাপোড়েনের আঁচ। এই পরিস্থিতিতে ওয়াংয়ের এই সফর। এস জয়শঙ্কর এবং তার আগে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে বৈঠক। বৈঠকের পর জয়শঙ্কর জানান, নিয়ন্ত্রণরেখায় ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে যে চিনা সেনা মোতায়েন, তা প্রত্যাহার না-করা পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে না। যা ওয়াংকে জানিয়েও দেওয়া হয়েছে। এই বৈঠকের কোনও যৌথ বিবৃতি দেওয়া হয়নি। বৈঠকে এসেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গও। এ নিয়ে দু'দেশের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। কারণ, চিন শুধুমাত্র আমেরিকা এবং নেটোর উপরেই দোষ চাপিয়েছে। তবে এখনই যুদ্ধ বন্ধ হোক, চায় ভারত-চিন দুই দেশই, জানিয়েছেন জয়শঙ্কর।
Read story in English