/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/10/aadhaar-explained.jpg)
সোশাল মিডিয়া প্রোফাইলের সঙ্গে আধার লিংক করার মামলার শুনানি সুপ্রিম কোর্টে আগামী জানুয়ারি মাস থেকে শুরু হবে। ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্ট তার রায়ে জানিয়েছিল গোপনীয়তা মৌলিক অধিকার। তার পর এই প্রথম গোপনীয়তার অধিকার নিয়ে বড়সড় আইনি লড়াই সংঘটিত হচ্ছে।
দুটি তাৎপর্যপূর্ণ প্রশ্ন আদালতে উঠে আসবে- আধারের সঙ্গে সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের সংযোগ বাধ্যতামূলক করা হলে ব্যক্তির গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘিত হবে কিনা, এবং অন্তর্বর্তী দায়ের সঙ্গে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ভারসাম্য রক্ষা।
আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: দেশে সাইবার অপরাধ এক লাফে বেড়েছে ৭৭ শতাংশ
পরিপ্রেক্ষিত
সরকার সোমবার এ সংক্রান্ত মামলা সম্পর্কে যে হলফনামা দাখিল করেছে, তাতে বলা হয়েছে, ইন্টারনেট ক্রমশ এমন এক সম্ভাব্য ক্ষমতাশালী প্রকরণ হয়ে উঠছে যা গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক। সুপ্রিম কোর্টকে বলা হয়েছে, তারা আরও তিন মাস সময় নিয়ে বিষয়টি পর্যালোচনা করে সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের মত বিষয়গুলির কার্যকরী বিধি প্রণয়নের জন্যে বর্তমান আইনগুলিকে গোচরে আনবে।
২০০০ সালের তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মধ্যস্থতাকারী বলতে যা বোঝানো হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে টেলিকম পরিষেবা প্রদানকারী, নোটওয়ার্ক পরিষেবা প্রদানকারী, ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী, ওয়েব-হোস্টিং পরিষেবা প্রদানকারী, সার্চ এঞ্জিন, অনলাইন পেমেন্ট সাইট, অনলাইট নিলামের সাইট, অনলাইট মার্কেটিং প্লেস এবং সাইবার কাফে। তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৮৭ নং ধারায় কেন্দ্রীয় সরকারকে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা দেওয়া রয়েছে। ২০১১ সালে মধ্যস্থতাকারীদের নিয়ন্ত্রণ করবার জন্য আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।
মামলাসমূহ
মাদ্রাজ, বম্বে ও মধ্য প্রদেশ হাইকোর্টে বকেয়া অন্তত চারটি মামলা সুপ্রিম কোর্টে স্থানান্তরিত করার জন্য আবেদন করেছিল ফেসবুক, গুগল এবং হোয়াটসঅ্যাপ।
মাদ্রাজ হাইকোর্টে ২০১৮ সালে পশু অধিকার রক্ষাকর্মী অ্যান্টনি ক্লেমেন্ট রুবিন এবং জনাই কৃষ্ণমূর্তি দুটি রিট পিটিশন দাখিল করেন। তাঁদের আবেদন ছিল সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার সংযুক্তি ঘটানো হোক এবং কোনও ব্যক্তির খোঁজ পাওয়ার জন্য সে সম্পর্কিত তথ্য জানানোর নির্দেশ দেওয়া হোক মধ্যস্থতাকারীদের। আধার সংযুক্তির আবেদন পরে প্রত্যাহৃত হয়।
২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে সাগর সূর্যবংশী নামের এক আইনজীবী বম্বে হাইকোর্টে আবেদন করেন, নির্বাচনের ৪৮ ঘণ্টা আগে অর্থের বিনিময়ে করা রাজনৈতিক প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হোক। সূর্যবংশী পরে মামলা প্রত্যাহার করে নেন এবং হাইকোর্টকে জানান তিনি সুপ্রিম কোর্টের মামলায় যোগ দেবেন।
২০১৯ সালে অমিতাভ গুপ্তা নামের এক আইনজীবী মধ্য প্রদেশ হাইকোর্টে সমস্ত সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের আধার ব্যবহার এবং অন্যান্য পরিচয়ের প্রমাণ সংযুক্তি বাধ্যতামূলক করার আবেদন করেন।
ফেসবুক বলেছে, এই মামলাগুলি মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সংযুক্ত- বিশেষত গোপনীয়তা ও মতপ্রকাশের অধিকার প্রসঙ্গ। বিভিন্ন হাইকোর্টে যদি পৃথকভাবে এই মামলার শুনানি হয় এবং পরস্পরবিরোধী রায় দেওয়া হয় তাহলে নাগরিকের মৌলিক অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে সওয়াল করেছে ফেসবুক।
নতুন নির্দেশিকা আসছে
কেন্দ্রীয় সরকার বিচারপতি দীপক গুপ্তা এবং অনিরুদ্ধ বোসের বেঞ্চকে জানিয়েছে মধ্যস্থতাকারীদের উপর নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নতুন গাইডলাইন আনা হচ্ছে।
"সোশাল মিডিয়ায় বেশ কিছু মেসেজ ছড়ানো হচ্ছে, শেয়ার করা হচ্ছে, যার মধ্যে কিছু কিছু অত্যন্ত ক্ষতিকর। কিছু মেসেজ হিংসা ছড়াতে পারে। এমন কিছু মেসেজও রয়েছে যা দেশের সার্বভৌমত্ব এবং সংহতির বিরুদ্ধে। সোশাল মিডিয়া আজকের দিনে পর্নোগ্রাফির উৎস হয়ে উঠেছে। শিশুযৌনতাকারীরা সোশাল মিডিয়াকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে। ড্রাগ, অস্ত্র, এবং অন্যান্য নিষিদ্ধ বস্তুসমূহ মধ্যস্থতাকারীদের পরিচালিত প্ল্যাটফর্মে বিক্রি করা হচ্ছে।"
জানুয়ারি মাসে তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রক মধ্যস্থতাকারীদের উপর নিয়্ন্ত্রণ জারির জন্য আইনের খসড়া তৈরি করে জনগণের মতামত জানতে চেয়েছে।
গোপনীয়তা ও সার্বভৌমত্ব
মাদ্রাজ হাইকোর্ট মাদ্রাজ আইআইটি-র কম্পিউটার সায়েন্সের অধ্যাপক ভি কামাকোটির হলফনামা চেয়েছে। কামাকোটি বলেছিলেন তিনি এমন প্রযুক্তি দিতে পারবেন যার ফলে প্রয়োজনে এনক্রিপটেড মেসেজ ডিক্রিপট করা যাবে। অন্যদিকে হোয়াটসঅ্যাপ বলেছে, তাদের যেহেতু এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন পদ্ধতি রয়েছে, ফলে সন্দেহজনক বিষয় যে তৈরি করেছিল, তাকে চিহ্নিত করা সম্ভব নয়।
আদালক বলেছে, "যদি ডি এনক্রিপশন সহজলভ্য হয়ে যায়, তাহলে তা গোপনীয়তার মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত করবে এবং বিশেষ পরিস্থিতিতেই কেবলমাত্র মেসেজ ডি এনক্রিপট করা যেতে পারে, তবে ব্যক্তির গোপনীয়তার অধিকার যাতে লঙ্ঘিত না হয়, তা সুনিশ্চিত করতে হবে"। আদালত বলেছে একই সঙ্গে "রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব এবং ব্যক্তির সম্মানও সুরক্ষিত করা সুনিশ্চিত করতে হবে"।
Read the Full Story in English