সোমবার ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ২০২৩ থেকে ২০৩১ সাল, এই আট বছরে আটটি পুরুষদের ইভেন্ট, আটটি মহিলাদের ইভেন্ট, চারটি অনূর্ধ্ব ১৯ পুরুষদের ইভেন্ট এবং চারটি অনূর্ধ্ব ১৯ মহিলাদের ইভেন্ট তাদের ভাবনায় রয়েছে। ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক এই সংস্থা চায় প্রতি বছর একটি করে পুরুষ ও মহিলাদের আইসিসি ইভেন্ট হোক। ওয়ার্লড টি ২০-ও চার বছর অন্তর না করে দু বছর অন্তর করার পরিকল্পনাও রয়েছে। আইসিসি বোর্ড ইতিমধ্যেই এ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছে। তারা চায় ৫০ ওভারের দুটি বিশ্বকাপ ছাড়াও দুটি অতিরিক্ত ৫০ ওভারের প্রতিযোগিতা হোক, যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে ৬টি শীর্ষ দল।
এ সব প্রস্তাবের সরাসরি একটা দিক রয়েছে, আইসিসি চাইছে সারা পৃথিবীর দর্শকদের কাছে ক্রিকেট বোনানজা হাজির করতে। কিন্তু এর অন্য একটা দিকও রয়েছে। আইসিসি চাইছে ভারতীয় বোর্ডের রাজস্বের যে স্রোত তাতে আঘাত হানতে এবং বিসিসিআইয়ের প্রভাব কমাতে। ২০১৫ থেকে ২০২১ সালের যে চক্র চলছে, তাতে বিসিসিআই এবং আইসিসি, দু পক্ষেরই অফিসিয়াল সম্প্রচারকারী হল স্টার স্পোর্টস, সেটা হোম সিরিজেও এবং সারা পৃথিবীতেও। আইসিসি সম্ভবত সম্প্রচারের ক্ষেত্রে পরের আট বছরের চক্রে সংঘাত ঘটিয়ে বিসিসিআইকে দুর্বল করতে চায়।
আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: সৌরভ বিসিসিআই সভাপতি, কীভাবে পদাধিকারী নির্বাচন করে বোর্ড?
গত বছর বিসিসিআই ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সারা পৃথিবীর টিভি ও ডিজিট্যাল রাইটস বিক্রি করেছিল স্টার ইন্ডিয়াকে, ৯৪৪ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে। স্টার ইন্ডিয়া ২০১৯-২০২২-এর আইপিএলের রাইটসও কিনেছিল ২.৫৫ বিলিয়ন ডলারে। এদিকে ২০১৪ সালে, আইসিসি স্টারকে ২০১৫-২০২৩ সালের জন্য তাদের গ্লোবাল রাইট স্টারকে বিক্রি করেছিল ১,৯৮ বিলিয়ন ডলারে। এবার প্রতি দু বছরে যদি ওয়ার্লড টি ২০ অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে তার অর্থ পরবর্তী চক্রে আইপিএলের সঙ্গে সরাসরি সংঘাত। এবং ওয়ার্লড ইভেন্টে বেশি দর্শক থাকে বলেই সম্প্রচারের আয়ের ক্ষেত্রে বিসিসিআইকে ছাপিয়ে যাবে আইসিসি। বিশ্বকাপ ছাড়া আরও দুটি ৫০ ওভারের প্রতিযোগিতার হলে তা ভারতের নিজস্ব আন্তর্জাতিক দ্বিপাক্ষিক সিরিজ (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকে নভেম্বর ডিসেম্বর এবং ফেব্রুয়ারি-মার্চ)-এর উপর প্রভাব ফেলবেই। এর ফলে সম্প্রচারের রাইটসে বিসিসিআইয়ের আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
২০১৬ সালে শশাঙ্ক মনোহর স্বাধীনভাবে আইসিসি চেয়ারম্যান হবার পর থেকে তাঁর গৃহীত নীতি ভারতীয় ক্রিকেটের পক্ষে ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হয়ে আসছে। আইসিসি-র মোট আয়ের ৭০ শতাংশ আসে ভারতীয় বোর্ডের কাছ থেকে। তা সত্ত্বেও অনুমিত রেভিনিউ শেয়ার ৪৪০ মিলিয়ন ডলার থেকে কমেছে, যা ৫৭০ মিলিয়ন পর্যন্ত বাড়তে পারত।
আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: লোঢা কমিটি কি ঘুঘুর বাসা ভাঙতে পারবে?
এন শ্রীনিবাসনের বিদায়ের পর থেকে আইসিসি-তে ভারত দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং মনোহরের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক সংস্থা তার সুযোগ নিয়েছে। কিন্তু এবার বিসিসিআইয়ের দায়িত্বে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, ফলে মনে করা হচ্ছে তারা এবার ঘুরে দাঁড়াবে। ২০০৪ সাল থেকেই সৌরভের সঙ্গে শশাঙ্ক মনোহরের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। সেবার অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে নাগপুর টেস্টের আগে বিদর্ভ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ঘাসে ভরা পিচের ব্যবস্থা করেছিলেন। সৌরভ সে ম্যাচে খেলেননি, নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রাহুল দ্রাবিড়। অস্ট্রেলিয়া ২-০ ফলে সিরিজ জিতে নেয়।
বোর্ড সভাপতি হিসেবে সৌরভ এবার বিসিসিআইয়ের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠবেন। ইতিমধ্যেই তিনি আয় হ্রাসের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। যদিও আইসিসি-র প্রস্তাবিত সফর কর্মসূচি নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে তিনি যথেষ্ট সংযত ছিলেন। তিনি বলেন, আমি সুযোগ পলে এই আলোচনায় অংশগ্রহণ করব। এবং সুপ্রিম কোর্টের অনুমতিসাপেক্ষে শ্রীনিবাসন যদি আইসিসি-তে ভারতীয় বোর্ডের প্রতিনিধি হিসেবে ফিরে আসতে পারেন, তাহলে বিষয়টা তিক্ত হয়ে উঠতে পারে। শ্রীনিবাসন এবং মনোহর পরস্পরের দিকে তাকান না অবধি। বিসিসিআই কোনওমতেই আইসিসি-র এই প্রস্তাবিত কর্মসূচি মানবে না। এবং ভারতীয় বোর্ড না চাইলে এ সম্পর্কিত চুক্তিতে স্বাক্ষর না-ও করতে পারে।
সৌরভ কিন্তু এ ব্যাপারে সম্মতি দিয়ে রেখেছেন।
Read the Full Story in English