উপনির্বাচনে তাঁরা যে একসঙ্গে লড়বেন না তা আগেই ঘোষিত হয়েছিল, এবার পাকাপাকি বিচ্ছেদ ঘোষিত হয়ে গেল। সপার সঙ্গ ত্য়াগ করল বসপা। বহুজন সমাজ পার্টি নেত্রী মায়াবতী জানিয়েছেন ভবিষ্য়তের সব ভোটে দল এবং দলীয় আন্দোলনের স্বার্থে একাই লড়বে তাঁর দল।
এ সিদ্ধান্তের দায় অবশ্য় সপার উপরেই চাপিয়ে দিয়েছেন মায়া। বলেছেন, তিনি যতক্ষণ সপার সঙ্গে জোটে ছিলেন, ততক্ষণ কোয়ালিশনের স্বার্থ রক্ষা করেছেন, অখিলেশ সরকারের বসপা বিরোধী এবং দলিত বিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়ে কথা বলেননি।
বসপা সুপ্রিমো টুইট করে বলেছেন, লোকসভা ভোটের পর সপার ব্য়বহার দেথে বসপা ভাবতে বাধ্য় হচ্ছে যে আরেকবার জোটের পক্ষে বিজেপিকে হারানো আদৌ সম্ভব কিনা। সেটা সম্ভব নয়। ফলে দল ও আন্দোলনের স্বার্থে বসপা এখন থেকে সব গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন একাই লড়বে।
রবিবার লখনউয়ে বসপার সর্বভারতীয় বৈঠকের পরেই মায়াবতীর এই সিদ্ধান্ত। এর আগে রাতভর রাজ্য় স্তরের বৈঠক চলে। সূত্র জানাচ্ছে, সে বৈঠকে মায়াবতী লোকসভা ভোটে জোটের হারের জন্য় সমাজবাদী পার্টিকেই দায়ী করেছেন। বসপা ৩৮টি আসনের মধ্য়ে জিতেছে ১০টিতে, অন্য়দিকে ৩৭টির মধ্য়ে সপা জিতেছে ৫টিতে।
এর আগে মাসে গোড়ায় মায়াবতী ঘোষণা করেছিলেন আসন্ন উপনির্বাচনে তাঁরা একক ভাবে লড়বেন। তবে ভবিষ্য়তে জোটের দরজা খোলা রেখেছিলেন তিনি। একই সঙ্গে মায়াবতী এও বলেছিলেন যে সপার সঙ্গে এ ছাড়াছাড়ি সাময়িক এবং অখিলেশ যদি রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করেন, তবে তিনি অখিলেশের সঙ্গে কাজ করতেও পারবেন। মায়াবতী ভোটে বিপর্যয়ের জন্য় সমাজবাদী পার্টির আভ্যন্তরীণ অন্তর্ঘাতকে দায়ী করেছেন।
সমাজবাদী পার্টির সূত্র জানাচ্ছে ভোটে জোটের হারের জন্য় যাদবকুলকে মায়াবতী দায়ী করার পর দলের নেতারা আর অপেক্ষা করতে রাজি ছিলেন না। ফলে দলীয় কর্মীদের বলা হয়েছিল আসন্ন বিধানসভার উপনির্বাচনে এবং ২০২২ সালে রাজ্য়ে সপা সরকার গড়ার লক্ষ্য়ে প্রস্তুতি নিতে।
বসপা এবং সপা এবার ভোটের আগে বিজেপিকে হারাতে দু দশক পর পরস্পরের সঙ্গে হাত মেলায়। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে এবং ২০১৭ সালের বিধানসভা ভোটে বিজেপি উত্তরপ্রদেশে ব্য়াপক জয় পেয়েছিল।
সাত বছর হল মায়াবতী উত্তরপ্রদেশে ক্ষমতার বাইরে। গোটা দেশেও তাঁদের অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। অন্য়দিকে সমাজবাদী পার্টি, যারা সাত বছর আগে ২২৪ টি আসন পেয়েছিল, ২০১৭ সালের ভোটে তারা কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ আসনে। ২০১৭ সালের ভোটে মায়া পেয়েছিলেন ২২.২৩ শতাংশ ভোট এবং সপা পেয়েছিস ২৮.৩২ শতাংশ। রাজ্য়ে দুদলের মিলিত ভোট ছিল ৫০ শতাংশের বেশি, অন্য়দিকে বিজেপি পেয়েছিল ৪১.৫৭ শতাংশ ভোট।
২০১৪ সালের লোকসভা ভোটেও মোদী ঢেউ যখন তুঙ্গে, বিজেপি এ রাজ্য়ে পেয়েছিল ৪২.৬৩ শতাংশ ভোট। সপা (২২.৩৫ শতাংশ) এবং বসপা (১৯.৭৭ শতাংশ)-র মিলিত ভোটের হিসাব বিজেপির সামান্য় কম ছিল সে বার।
অঙ্কের এই হিসেব দু দলের কাছেই লোভনীয়। ২০১৭ সালের লোকসভা ভোটের কেন্দ্র ওয়ারি তথ্য় বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছিল ২০১৯ সালে দু দল একত্রিত হলে বিজেপি ৫০টিরও বেশি লোকসভা আসনে হারতে পারে। কিন্তু ২০১৯ সালের ভোটের ফলে দেখা গেল বিজেপি একাই জিতেছে ৬২টি আসন এবং তার সহযোগী আপনা দল জিতেছে দুটি আসনে।