/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/04/ISIS.jpg)
গত রবিবার, অর্থাৎ ২১ এপ্রিল শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করে ইসলামিক স্টেট (আইএস), যে বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় কমপক্ষে ২৫০ জনের। ভারতের কার্যত উপকূলবর্তী এলাকায় এত বড় মাপের সঙ্ঘবদ্ধ হামলায় স্বাভাবিকভাবেই চিন্তিত বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। খবরে প্রকাশ, হামলার ঘনিষ্ঠ যোগ রয়েছে ভারতের সঙ্গে, কারণ শ্রীলঙ্কার আত্মঘাতী বোমারুদের একজন হামলার আগে দীর্ঘদিন ভারতে ছিল। এর ফলে দক্ষিণ ভারতে তল্লাশিতে নেমে পড়েছে সংস্থাগুলি, উদ্দেশ্য আইএস সদস্য খুঁজে বের করা।
ভারতে আইএস-এর প্রভাব কতটা?
আইএস ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাদের র্যাডারে আসে সেই ২০১৩ সালে, যখন সিরিয়া থেকে পাওয়া তথ্যে প্রকাশ পায় যে আইএস-এর হয়ে লড়ছেন বেশ কিছু ভারতীয়। তখনও পর্যন্ত মধ্য প্রাচ্যের সমস্যা হয়েই রয়ে গিয়েছিল আইএস, কিন্তু ২০১৪ সালে ইরাকে ৩৯ জন ভারতীয় নাগরিককে অপহরণ করে হত্যা করে আইএস। ওই গোষ্ঠীর বিভিন্ন প্ল্যান খতিয়ে দেখার পর স্পষ্ট হয়ে যায় যে গোড়া থেকেই আইএস-এর নিশানায় রয়েছে ভারত। জঙ্গি গোষ্ঠীর তৈরি খোরাসান ক্যালিফেটের একটি মানচিত্রে দেখা যায় বেশ কিছু ভারতীয় রাজ্যের চিহ্ন।
তার পর থেকে একাধিক ভারতীয় নাগরিক আইএস-এর হয়ে লড়তে ইরাক এবং সিরিয়া পাড়ি দিয়েছে, এবং অন্তত ১০০ জন বিভিন্ন সংস্থার হাতে গ্রেফতার হয়েছে, হয় সিরিয়া থেকে ফেরার পর, নাহয় আইএস-এ যোগ দেওয়ার আগেই। আরও বেশ কিছু গ্রেফতার হয়েছে আইএস-এর অনুপ্রেরণায় ভারতে নাশকতামূলক হামলার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে।
ভারতের প্রতিক্রিয়া কী?
ভারতে আইএস-এর প্রভাবের গোটা বিষয়টি নিয়েই অত্যন্ত সন্তর্পণে এগোচ্ছে দেশের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান। আইএস-এর অনলাইন নথিপত্র ঘাঁটতে গিয়ে অথবা সিরিয়াতে যেতে গিয়ে ধরা পড়া অসংখ্য আইএস রিক্রুটকে বুঝিয়েসুঝিয়ে, মৌলবাদ-বিরোধী কর্মসূচিতে সামিল করে, অবশেষে হুঁশিয়ারি দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এই সাবধানতার কারণ একটাই। দেশে বিপুল সংখ্যক মুসলমান নাগরিক থাকা সত্ত্বেও প্রকৃতপক্ষে আইএস-এ যোগ দেওয়া ভারতীয়দের সংখ্যা নামমাত্র। ভারতের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান মনে করে, আইএস-এ যোগ দিতে আগ্রহী কিছু চঞ্চলমতি যুবক-যুবতী স্রেফ ওই গোষ্ঠীর অনলাইন প্রচার, এবং ভিডিও গেমের অনুকরণে তৈরি ভয় দেখানো ভিডিওর দ্বারা প্রভাবিত হয়েই এই পদক্ষেপ নিচ্ছে। যেহেতু মৌলবাদী আদবকায়দায় একেবারেই পোক্ত হয় নি এরা, এদের সুপরামর্শ দেওয়ার রাস্তাই বেছে নিচ্ছে সমস্ত সরকারি সংস্থা।
তাদেরকেই একমাত্র গ্রেফতার করা হয়েছে, যারা হয় আক্রমণ সংঘটিত করতে যাচ্ছিল বলে কর্তৃপক্ষের বিশ্বাস, নাহয় বারবার বোঝানো সত্ত্বেও সিরিয়া যেতে বদ্ধপরিকর ছিল। এদের মধ্যে রয়েছে হায়দ্রাবাদের যুবক আব্দুল বসিত, যে তিন-তিনবার সিরিয়া যেতে গিয়ে আটক হয়। শেষমেশ তৃতীয়বারের চেষ্টার সময় তাকে নাশকতার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়।
দক্ষিণ ভারতে কতটা বিস্তৃত আইএস-এর প্রভাব?
উত্তর ভারত যতই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে কুখ্যাত হোক, আইএস-এর সংখ্যাগরিষ্ঠ রিক্রুট কিন্তু দক্ষিণ ভারতের বাসিন্দা। কর্তৃপক্ষের মতে, সিরিয়াতে যাওয়া প্রায় ৯০ শতাংশ ভারতীয় আইএস সদস্য দক্ষিণ ভারত থেকে যোগ দিয়েছে। আক্রমণের পরিকল্পনা করতে গিয়ে গ্রেফতার হওয়া অধিকাংশই সেই দক্ষিণ ভারতীয়, প্রধানত তামিলনাড়ু, কেরালা, তেলঙ্গানা, কর্ণাটক এবং মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে আইএস-এ যোগদানকারী প্রথম ভারতীয় ছিলেন তামিলনাড়ুর কাড্ডালোরের ভূমিপুত্র হাজা ফখরুদ্দিন, যে সিঙ্গাপুরে কর্মরত অবস্থায় সিরিয়াতে চলে যায়। কেরালা থেকে যোগদানকারীদের সিংহভাগ ছিল সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে কর্মরত, বা সেখান থেকে ফিরে এসেছিল আইএস-এর চরমপন্থী আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে। উত্তর ভারতের যুবসমাজের ওপর আইএস-এর যেটুকু প্রভাব, তা মোটামুটি জম্মু-কাশ্মীর, মধ্যপ্রদেশ, এবং উত্তরপ্রদেশেই সীমাবদ্ধ।
ভারতীয় সতীর্থদের কতটা সাংগঠনিক সাহায্য করেছে আইএস?
একটুও না। উল্টে তাদের সিরিয়া এবং ইরাকে যেতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে, অথবা ভারতের মাটিতে তাদের নিজস্ব পুঁজি ব্যবহার করে নাশকতা চালাতে বলা হয়েছে। দলে যোগ দেওয়ানোর দায়িত্বে যারা, তাদের মধ্যেও অধিকাংশই ভারতীয়, যেমন প্রাক্তন মুজাহিদিন সদস্য শফি অরমার।
বহু সংখ্যক ভারতীয় সদস্যের আদৌ কোনো 'হ্যান্ডলার' ছিলই না। তারা নিজেদের মতো করে একত্রিত হয়ে আইএস-এর নাম করে আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনা করে, এবং উম্মত-এ-মহম্মদিয়া, হরকত উল হর্ব-এ-ইসলাম, আনসার উল তৌহিদ ফি বিলাদ অল হিন্দ, এবং জুনুদ অল খিলাফা এ হিন্দ-এর মতো গোষ্ঠী স্থাপনা করে। কিন্তু নিজেদের ঘনিষ্ঠ বৃত্তের বাইরে কোনোরকম প্রভাব বিস্তার করতে পারে নি এরা।
এই ধরনের বেশিরভাগ অনুগোষ্ঠীকে নিজেদের পকেটের টাকা দিয়ে বিস্ফোরক এবং হাতিয়ার কিনতে বলা হয়। স্থানীয় সূত্রে উপলব্ধ বিস্ফোরক, যেমন দেশলাই কাঠির থেকে ছেঁচে বের করা পটাশিয়াম ক্লোরেট এবং অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট পাওয়া যায় তাদের কাছে। এরা বোমা বানাতে শেখে অনলাইন টিউটোরিয়ালের মাধ্যমে।