Advertisment

Explained: কানাডা-ভারত টানাপোড়েন! মোদী সরকারের পাশে দাঁড়িয়ে ট্রুডোদের গালিগালাজ শ্রীলঙ্কার, কিন্তু কেন?

কানাডার সমালোচনা শ্রীলঙ্কা প্রথমবার করল না। শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধের সময়ও কানাডা সরকারের নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল দ্বীপরাষ্ট্র।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
terrorists found safe haven in Canada

শ্রীলঙ্কার বিদেশমন্ত্রী আলি সাবরি, খালিস্তানপন্থী নেতার হত্যায় ভারতের ভূমিকা নিয়ে কানাডার সাম্প্রতিক অভিযোগের সমালোচনা করেছেন। (অফিসিয়াল ফেসবুক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে)

খালিস্তানপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যার ঘটনায় ভারত এবং কানাডা সরকারের মধ্যে চলমান টানাপোড়েনে শ্রীলঙ্কার দুই শীর্ষ আধিকারিক ভারতকে সমর্থন করেছেন। সন্ত্রাসবাদ ইস্যু নিয়ে কানাডার সঙ্গে অতীতে দ্বীপরাষ্ট্রের যে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছিল, সেই প্রসঙ্গও শ্রীলঙ্কার ওই দুই শীর্ষকর্তা এই টানাপোড়েনকে ঘিরে সামনে নিয়ে এসেছেন। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো গত সপ্তাহেই অভিযোগ করেছেন যে কানাডায় খালিস্তান টাইগার ফোর্স (কেটিএফ) প্রধান নিজ্জরকে হত্যার ঘটনায় ভারত জড়িত ছিল। কিন্তু, সেই অভিযোগ ভারত প্রত্যাখ্যান করেছে।

Advertisment

শ্রীলঙ্কার বিদেশমন্ত্রী আলি সাবরি গত ২৫ সেপ্টেম্বর, সোমবার সংবাদসংস্থা এএনআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, 'কিছু জঙ্গি কানাডায় নিরাপদ আশ্রয় পেয়েছে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী কোনও প্রমাণ ছাড়াই কিছু আপত্তিকর অভিযোগ তুলেছেন। তারা শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধেও একই কাজ করেছে। শ্রীলঙ্কায় গণহত্যা হয়েছে এই কথা বলা একটি ভয়ানক এবং সম্পূর্ণ মিথ্যাচার। সবাই জানে আমাদের দেশে কোনও গণহত্যা হয়নি।'

শুধুমাত্র বিদেশমন্ত্রী আলি সাবরিই নন। ভারতে শ্রীলঙ্কার বিদায়ী হাইকমিশনার মিলিন্ডা মোরাগোদাও বলেছেন, 'আমি মনে করি ভারতের প্রতিক্রিয়া দ্ব্যর্থহীন, দৃঢ় এবং সরাসরি ছিল। আমি মনে করি, আমরা এই বিষয়ে ভারতকেই সমর্থন করছি। আমার জীবনের ৪০ বছর, শ্রীলঙ্কায় বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসবাদের মুখোমুখি হয়ে কাটিয়েছি। এই বিষয়ে আমাদের অবস্থান খুবই স্পষ্ট। কারণ, আমরা সহ্য করেছি। আমরা ভোগ করেছি। তাই, সন্ত্রাসবাদের প্রতি আমাদের সহনশীলতা নেই।'

সিংহলি এবং এলটিটিইর সঙ্গে কানাডার ইতিহাস বহুদিন ধরেই জড়িয়ে রয়েছে। আর, সেই কারণেই কানাডার প্রতি শ্রীলঙ্কার সমালোচনা নতুন কিছু নয়। ১৯৮৩ সালে নীতি, রাজনীতি, শাসন, প্রতিনিধিত্ব ইত্যাদি বিষয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহলা-ভাষী সম্প্রদায় এবং সংখ্যালঘু তামিলদের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় বেড়ে চলা জাতিগত উত্তেজনা যুদ্ধের রূপ নেয়। ২০০৯ সাল পর্যন্ত এই যুদ্ধ চলে। শেষ হয় লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিল ইলম (এলটিটিই) প্রধান ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণের হত্যার মধ্যে দিয়ে। এলটিটিই উত্তর-পূর্ব শ্রীলঙ্কায় তামিলদের জন্য একটি পৃথক রাষ্ট্র দাবি করেছিল। এই সংগঠন হিংসাত্মক উপায়ে তার লক্ষ্য পূরণের চেষ্টা চালিয়েছিল। অবিরাম সেই সংঘর্ষ চলেছে।

সেই সময়ে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং ব্রিটেনের মত দেশে শ্রীলঙ্কানরা দলে দলে ভিড় করতে শুরু করে। তাদের মধ্যে তামিলরাই ছিল প্রধান। কানাডা সরকারের ওয়েবসাইট অনুসারে, 'শ্রীলঙ্কার বংশোদ্ভূত প্রায় ২০০,০০০ ব্যক্তি কানাডায় বাস করেন। তাঁদের বাসস্থান মূলত গ্রেটার টরন্টো এলাকার আশপাশে। এর অধিকাংশই আবার তামিল বংশোদ্ভূত। কানাডায় বসবাসকারী শ্রীলঙ্কার তামিল জনসংখ্যাকে ভারতের বাইরে তামিলদের বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাসস্থান বলে মনে করা হয়।'

‘পিস রিভিউ: এ জার্নাল অফ সোশ্যাল জাস্টিস’-এ প্রকাশিত ‘ফোর্সড রেমিটেন্স ইন কানাডার তামিল এনক্লেভস’ শিরোনামের একটি নিবন্ধে বলা হয়েছে যে কানাডা ১৯৬০-এর দশকে অশ্বেতাঙ্গদের জন্য তার নীতি শিথিল করেছিল। তার ফলে এই অভিবাসন ঘটেছে। শরণার্থীদের কানাডায় থাকা এবং তাঁদের যতদিন না অন্য কোথাও যাওয়ার ইচ্ছা হচ্ছে, ততদিন থেকে যাওয়ার সুবিধা দিয়েছে কানাডা। তার ফলে সেদেশ অনেক শরণার্থীর একটি পছন্দের গন্তব্যে পরিণত হয়।

আরও পড়ুন- আসন পুনর্বিন্যাস নিয়ে রাজনৈতিক লড়াই! হলে কার লাভ, ক্ষতিই বা কাদের?

যাইহোক, এই শ্রীলঙ্কার অভিবাসীদের কিছু কার্যকলাপও যাচাই এবং বাছাইও করা হয়েছে। যেমন, যে এলটিটিই-পন্থীরা কানাডায় বসবাসকারী মধ্যপন্থী তামিলদের থেকে শ্রীলঙ্কায় এলটিটিই কার্যকলাপ নিরাপদে চালিয়ে যাওয়ার জন্য হাজার হাজার ডলার দাবি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হয়েছে। কারণ, অর্থ দিতে না-চাইলে এলটিটিই জঙ্গিরা সাধারণত শ্রীলঙ্কার অনিচ্ছুক দাতার আত্মীয়দের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার গোপন কৌশল অবলম্বন করত। কিন্তু, শ্রীলঙ্কায় যখন গৃহযুদ্ধ তীব্র আকার নেয়, সেই সময় কানাডা সরকার তামিলদের ওপর অত্যাচার চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছিল। শ্রীলঙ্কায় গণহত্যা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছিল। তাতেই ক্ষুব্ধ শ্রীলঙ্কা।

India Canada Sri Lanka
Advertisment