Advertisment

Explained: শাহরুখের 'ডাঙ্কি', কী আছে এই সিনেমায়, কী জানিয়েছেন কিং খান?

দুবাইতে ফাঁস করেছেন বলিউড বাদশা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Dunki donkey route

রাজকুমার হিরানির এই ছবিতে নায়িকা তাপসী পান্নু, প্রযোজক সংস্থা শাহরুখের রেড চিলিজ। (ছবি: ইউটিউব/উইকিমিডিয়া কমন্স)

পানামার জঙ্গলের ভিডিওতে ভরা পঞ্জাবের সোশ্যাল মিডিয়া। ভারত এবং পাকিস্তানের পঞ্জাবিদের রেকর্ড করা, এই ভিডিওগুলোয় একটাই আবেদন করা হয়েছে: কখনও এই পথ নেবেন না। বদলে নিজের দেশে কাজ খুঁজুন। এটা নতুন নয়। এই ধরনের আবেদন, পরিযায়ীদের নির্যাতিত হওয়া, পথে মারা যাওয়ার আরও ভয়ংকর ভিডিও আছে। তবে তা সামান্যই প্রভাব ফেলে। কারণ লোকজন আমেরিকার নাম শুনলেই স্বপ্নের দেশের সন্ধানের মত যাবতীয় ঝুঁকি নিয়ে ছুটে যায়। আগে এই ছুটে যাওয়ার সংখ্যা পঞ্জাব এবং হরিয়ানা থেকেই বেশি ছিল। এখন গুজরাতেও সংখ্যাটা বাড়ছে। এই অনুপ্রবেশকারীর মত পরিযায়ী হওয়ার রাস্তার নামই হয়ে গিয়েছে, 'ডাঙ্কি রুট' বা গাধার রাস্তা। শাহরুখ খানের সিনেমা 'ডাঙ্কি'র বিষয়বস্তুও এনিয়ে। যা শুক্রবার, ২১ ডিসেম্বর মুক্তি পাবে। দুবাইয়ে সাম্প্রতিক এক অনুষ্ঠানে, এসআরকে তাঁর সিনেমার শিরোনামের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। শাহরুখ বলেন, 'ডাঙ্কি হল একটি অবৈধ ভ্রমণ। বিভিন্ন লোক তাঁদের দেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার জন্য অবৈধভাবে সীমান্ত পার হয়। এটাই হল ডাঙ্কি ট্রিপ।'

Advertisment

প্রথম পথ- লাতিন আমেরিকা
ভারত থেকে সবচেয়ে জনপ্রিয় ডাঙ্কি রুট হল, লাতিন আমেরিকার কোনও দেশে পৌঁছনো। ইকুয়েডর, বলিভিয়া এবং গায়ানার মতো দেশে যাওয়ার ভিসা ভারতীয় নাগরিকরা সহজেই পান। ব্রাজিল এবং ভেনিজুয়েলা-সহ আরও কিছু দেশও ভারতীয়দের সহজেই ট্যুরিস্ট ভিসা দেয়। একজন অভিবাসীর রুটও নির্ভর করে কোন দেশে তাঁর এজেন্টের 'লিংক' আছে তার ওপর। এই লিংকগুলো আবার মানব পাচার নেটওয়ার্কের সঙ্গেও অনেক সময় কাজ করে। লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে পৌঁছনো কঠিন নয়। তারপরও এজেন্টের জন্য কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। পঞ্জাবের একজন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন, 'আমার এজেন্ট আমাদের মুম্বইয়ে দেড় মাস রেখে দিয়েছিল। বলেছিল যে ব্রাজিলে তার লিংকের থেকে কিছু সংকেতের অপেক্ষা করছে। আমরা যদি ব্রাজিলে গিয়ে অপেক্ষা করি, তবে আমাদের আরও বেশি ব্যয় করতে হবে।' পঞ্জাবের ওই ব্যক্তি আট মাস পরে গত বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছন। কিছু এজেন্ট আবার দুবাই থেকে মেক্সিকোতে সরাসরি ভিসার ব্যবস্থা করে। যদিও, স্থানীয় পুলিশের কড়াকড়ির জন্য মেক্সিকোতে সরাসরি অবতরণ আরও বিপজ্জনক বলেই মনে করা হয়। তাই, বেশিরভাগ এজেন্ট তাদের ক্লায়েন্টদের লাতিন আমেরিকার কোনও দেশে পাঠায়। তারপর সেখান থেকে কলম্বিয়ায় নিয়ে যায়। কারণ, কলম্বিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছেই। আর, কোনও দেশ মার্কিন সীমান্তের যত কাছে, ভারত থেকে সেদেশের ভিসা পাওয়া তত কঠিন।

Haitian migrants wade through water as they cross the Darien Gap from Colombia to Panama in hopes of reaching the U.S., May 9, 2023. Clothing and garbage litter the migrants' trail.
গত ৯ মে, ২০২৩- হাইতির বিনা নথির পরিযায়ীরা কলম্বিয়া থেকে পানামা পর্যন্ত দারিয়েন গ্যাপ অতিক্রম করার সময় জলের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। (এপি ফটো/ইভান ভ্যালেন্সিয়া, ফাইল)

বিপজ্জনক জঙ্গল 'দারিয়ান গ্যাপ'
কলম্বিয়া থেকে এই পরিযায়ীরা পানামায় প্রবেশ করেন। এর মধ্যে জলা-জঙ্গলে ভরা অঞ্চল 'দারিয়েন গ্যাপ' অতিক্রম করতে হয়। এই অঞ্চল আসলে দুই দেশের মধ্যে থাকা একটি বিপজ্জনক বনপথ। এখানে বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব আছে। বন্যপ্রাণীতে ভরতি। অপরাধী চক্র প্রবলভাবে সক্রিয়। পরিযায়ীরা এই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় ডাকাতি থেকে ধর্ষণ, নানা সমস্যার মুখোমুখি হন। এখানে সংঘটিত অপরাধগুলোকে নথিতে গ্রহণ করে না কোনও দেশ। আর, সেই কারণে অপরাধীদেরও কোনও শাস্তি হয় না। আর, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এই যাত্রাপথ অতিক্রম করতে আট থেকে দশ দিন সময় লাগে। এখানে কোনও বিনা নথির পরিযায়ী মারা গেলে শেষকৃত্যের জন্য লাশ বাড়িতে পাঠানোরও উপায় থাকে না। গুয়াতেমালা এই রুটের একটি বড় সমন্বয় কেন্দ্র। বিনা নথির পরিযায়ীদের এখানে নতুন পাচারকারীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এখান থেকেই তাঁরা মেক্সিকোতে প্রবেশ করেন। আর, মার্কিন সীমান্তের দিকে যাত্রা করেন। এখানেই শুরু হয় সরকারি সংস্থার সঙ্গে অনুপ্রবেশকারীদের লুকোচুরি খেলা। গুরুদাসপুরের যুবক গুরপাল সিং (২৬) এই বছরের শুরুতে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে আমেরিকায় যাওয়ার পথে মেক্সিকোতে বাস দুর্ঘটনায় নিহত হন। পঞ্জাবে তাঁর বোনকে করা শেষ ফোনকলে তিনি বলেছিলেন, মেক্সিকান পুলিশ তাঁদের থামিয়েছে। পালিয়ে যাওয়ার জন্যই তিনি দ্রুত বাসে চেপে বসেছিলেন। বাসটি যখন দুর্ঘটনার মুখে পড়ে, তখনও তাঁর বোন ফোনকলে ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর খবর পরিবারকে জানাতে বোনের এক সপ্তাহ সময় লেগেছিল। গুরপালের মৃতদেহ ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করেছেন বিজেপির গুরুদাসপুরের সাংসদ সানি দেওল।

বন এড়ানো সম্ভব, ঝুঁকি নয়
পানামার জঙ্গল এড়াতে কলম্বিয়া থেকে আরও একটি পথ আছে, যা সান আন্দ্রেস থেকে শুরু হয়। তবে এটি বেশি নিরাপদ নয়। সান আন্দ্রেস থেকে, অনুপ্রবেশকারীরা নৌকো নিয়ে মধ্য আমেরিকার দেশ নিকারাগুয়ায় পৌঁছন। অনুপ্রবেশকারীদের মাছ ধরার নৌকোগুলো সান আন্দ্রেস থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে ফিশারম্যানস কে-তে নিয়ে যায়। সেখান থেকে, অনুপ্রবেশকারীদের মেক্সিকোতে নিয়ে যাওয়ার জন্য অন্য নৌকোয় তুলে দেওয়া হয়।

মার্কিন সীমান্তে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকোকে আলাদা করেছে ৩,১৪০ কিলোমিটার লম্বা সীমান্ত প্রাচীর। যা অনুপ্রবেশকারীদের লাফিয়ে পার হতে হয়। অনেকেই পারেন না। বদলে, বিপজ্জনক রিও গ্রান্ডে নদীপথ পার হওয়ার জন্য বেছে নেন। তবে, মার্কিন কর্তৃপক্ষ সীমান্ত পার হওয়ার সময় আটকায় না। পার হওয়ার পর অনুপ্রবেশকারীদের আটক করে ক্যাম্পে রেখে দেয়। তারপর অনুপ্রবেশকারীদের ভাগ্য নির্ভর করে, মার্কিন কর্তৃপক্ষ তাঁদের আশ্রয়ের জন্য উপযুক্ত বলে মনে করছে কি না, তার ওপর।

Members of the National Guard install concertina wire along the banks of the Rio Grande River to prevent migrants from crossing from Mexico into Eagle Pass, Texas, U.S.
মার্কিন ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা মেক্সিকো থেকে অনুপ্রবেশকারীদের প্রবেশ রুখতে রিও গ্রান্ডে নদীর তীরে কনসার্টিনা ওয়্যার ইনস্টল করেছেন। ঈগল পাস, টেক্সাস, ইউএস, ডিসেম্বর ১৯, ২০২৩ (REUTERS/Cheney Orr)

একটি নতুন, নিরাপদ রুট
আজকাল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আরেকটি সহজ 'ডাঙ্কি রুট' নিচ্ছেন অনুপ্রবেশকারীরা। সেটা হল, অনুপ্রবেশকারীরা প্রথমে ইউরোপে যান। সেখান থেকে সরাসরি মেক্সিকোতে যান। নয়টি দেশ ঘোরা এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, 'এটা নির্ভর করে এজেন্টদের যোগাযোগের ওপর। ইউরোপের মধ্যে দিয়ে যাওয়া সহজ। তবে, যেদিন ইউরোপ-মেক্সিকো রুটও কর্তৃপক্ষের নজরে চলে আসবে, সেদিন মানুষ আবার পুরোনো রুটে ফিরবেন।'

আরও পড়ুন- ভয় ধরাচ্ছে নয়া কোভিড ভেরিয়েন্ট JN.1, রাজ্যগুলিকে চিঠিতে উদ্বেগের কথা জানাল কেন্দ্র

একটি বিপজ্জনক এবং ব্যয়বহুল যাত্রা
একটি 'ডাঙ্কি পথ' ভ্রমণে খরচ হতে পারে ১৫ থেকে ৪০ লক্ষ টাকার মত। কখনও সেটা ৭০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। কিছু এজেন্ট আরও অর্থের বিনিময়ে কম ঝামেলাপূর্ণ যাত্রার প্রতিশ্রুতি দেয়। ভারতে এজেন্টদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাচারকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে। যদি কোনও কারণে ভারতীয় এজেন্টরা মার্কিন পাচারকারীদের অর্থ দিতে ব্যর্থ হন, তাহলে অনুপ্রবেশকারী প্রাণও হারাতে পারেন। অনুপ্রবেশকারীদের পরিবারগুলো কিস্তিতে অর্থ দেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত এক ট্রাকচালক এই প্রসঙ্গে বলেন, 'আমি তিন কিস্তিতে টাকা দিয়েছিলাম। শুরু করার আগে প্রথম। তারপর কলম্বিয়া পৌঁছনোর পরে। তারপর শেষবার অর্থ দিয়েছিলাম মার্কিন সীমান্তের কাছাকাছি পৌঁছে। যদি আমার বাবা-মা অর্থ দিতে ব্যর্থ হতেন, তাহলে মেক্সিকোতে পাচারকারীরা আমাকে গুলি করে মেরে ফেলত।'

rajkumar hirani Tapsee Pannu SRK Birthday
Advertisment