গত কয়েক বছর ধরে ওয়াগনার সংস্থার কর্তা ইয়েভজেনি প্রিগোজিন ছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অনুগত সমর্থক। তাঁর ভাড়াটে বাহিনী এতদিন সংস্থার কাজকর্ম দেখভাল করত। রাশিয়াকে নানাভাবে সাহায্য করত। সেই বাহিনীর ওপর ভরসা করেই এবার প্রিগোজিন রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন।
প্রিগোজিনের অভিযোগ
সম্প্রতি প্রিগোজিন রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনেছেন। সোশ্যাল মিডিয়া মারফত তিনি সেই সব অভিযোগ করেছেন। রুশ সেনাকর্তাদের বিশ্বাসঘাতক বলেছেন। তাঁর ভাড়াটে বাহিনীকে রুশ সেনা যথেষ্ট রসদ সরবরাহ করেনি, এই অভিযোগ করেছেন। কিন্তু, কখনও পুতিনের সমালোচনা করেননি।
প্রিগোজিনের ভোলবদল
কিন্তু গত দুই দিন ধরে, সেই প্রিগোজিনই ইউক্রেনে পুতিনের তথাকথিত বিশেষ সামরিক অভিযানের যুক্তির সমালোচনা করেছেন। দক্ষিণ রাশিয়ার শহর রোস্তভ-অন-ডনে একটি সামরিক ঘাঁটি দখল করতে তাঁর বাহিনী পাঠিয়েছিলেন। মস্কোর দিকে ওয়াগনার কনভয় নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন। এই পরিস্থিতিতে পুতিন একটি সশস্ত্র বিদ্রোহ দমনের জন্য রুশ সৈন্যদের একত্রিত করেন। তাঁর বন্ধুদেশ বেলারুশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ওয়াগনারের বিদ্রোহ দমন নিয়ে বৈঠক করেন।
ডিসেম্বর ২০১৬
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্রিমিয়ায় ওয়াগনার-সহ ১৫টি রুশ সংস্থার সঙ্গে যাবতীয় লেনদেন বন্ধ করে দেয়। ওই রুশ সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। কারণ, রাশিয়া ২০১৪ সালে ক্রিমিয়াকে অবৈধভাবে দখল করেছিল। তার আগে ক্রিমিয়া ছিল ইউক্রেনের অঞ্চল। ক্রিমিয়া ছাড়াও ইউক্রেনের অন্য অঞ্চলও রাশিয়ার-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা সেই বছরই দখল করেছিল। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বেছে নিশানা করেছিল পুতিনের বন্ধু শিল্পপতিদের। সেই শিল্পপতিদের, যারা পুতিনের সহযোগী হিসেবে ইউক্রেনকে অস্থির করে তুলেছিল, ইউক্রেনের স্থিতিশীলতা নষ্টে যাঁরা পুতিনের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছিল।
ফেব্রুয়ারি ২০১৮
ইন্টারনেট রিসার্চ এজেন্সির মাধ্যমে ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল গ্র্যান্ড জুরি ১৩ জন বিশিষ্ট রুশ ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করেছিল। এই ১৩ জনের মধ্যে প্রিগোজিন অন্যতম। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি 'ট্রল ফ্যাক্টরি' যেটি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থনে মিথ্যা প্রচার করেছিল এবং তথ্য যুদ্ধ চালিয়েছিল, তার নেতাদের অন্যতম ছিলেন প্রিগোজিন।
সেপ্টেম্বর, ২০২২
প্রিগোজিন প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে স্বীকার করে নেন যে তিনি ভাড়াটে সেনা সংস্থা ওয়াগনারের প্রতিষ্ঠাতা। এই সংস্থার ভাড়াটে যোদ্ধাদেরই ইউক্রেনে রাশিয়ান সৈন্যদের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয়েছে। পূর্বে, ওয়াগনার যোদ্ধারা আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যে ক্রেমলিনের সামরিক অভিযানের সমর্থনে কাজ করেছিল। মাঝে মধ্যে মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধও করেছিল।
অক্টোবর, ২০২২
পূর্ব ইউক্রেনের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর লাইমান থেকে রুশ বাহিনীকে সামরিক কর্তারা পশ্চাদপসরণ করার নির্দেশ দেওয়ার পরে রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্বের প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছিলেন প্রিগোজিন। তিনি ছিলেন পুতিনের দুই শক্তিশালী সমর্থকের একজন, যাঁরা দাবি করেছিলেন যে এই পশ্চাদপসরণ ক্রেমলিনের জন্য একটি বড় বিব্রতকর হয়ে উঠবে।
আরও পড়ুন- নেহরু সরকারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, কেন মন্ত্রিসভা ছাড়লেন শ্যামাপ্রসাদ?
নভেম্বর, ২০২২
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী মেয়াদের নির্বাচনের ঠিক একদিন আগে, প্রিগোজিন ব্যঙ্গ করে বলেছিলেন যে রাশিয়া এই নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছে। তিনি তাঁর ক্যাটারিং সংস্থার পোস্ট করা এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, 'ভদ্রমহোদয়গণ, আমরা হস্তক্ষেপ করেছি, আমরা হস্তক্ষেপ করি এবং আমরা হস্তক্ষেপ করব। আমরা যত্ন সহকারে এটি করতে সক্ষম। অবিকল, অস্ত্রোপচারের মত করে এই হস্তক্ষেপ করব। আমাদের টার্গেটেড অপারেশনের সময়, আমরা একসঙ্গে কিডনি এবং লিভার দুটোরই অপসারণ করব।' সেই সময়, ওয়াগনারের সৈন্যরা পূর্ব ইউক্রেনীয় শহর বাখমুতের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। এই বাখমুতের ওপর কয়েক মাস ধরেই রাশিয়া সামরিক অভিযান চালাচ্ছিল।