Advertisment

কেন প্রতিবাদে মুখর স্ট্যাচু অফ ইউনিটি সংলগ্ন গ্রাম ও গ্রামবাসীরা

জমিতে বেড়া দেওয়ার কাজ যদিও প্রায় শেষ করে এনেছে SSNNL, আন্দাজ ২৫০ জমির মালিক এবং তাঁদের বংশধররা এখনও SSNNL-এর দেওয়া ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করেননি।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
statue of unity

কেবড়িয়া গ্রামে জমিতে বেড়া দেওয়ার পর বসানো সাইনবোর্ড। ছবি: ভূপ্রেন্দ্র রাণা, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

ফের একবার খবরে চলে এলো গুজরাটের কেবড়িয়া গ্রামে অবস্থিত স্ট্যাচু অফ ইউনিটি ও তৎসংলগ্ন এলাকা, যেখানে পর্যটনের বিস্তার ঘটাতে জমি অধিগ্রহণ করে সরকার। এর প্রতিবাদ স্বরূপ অধিকৃত জমির ওপরেই চাষের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন গ্রামবাসীরা। এই কৃষিকাজ রুখতে এলাকায় পাহারা বাড়িয়েছে সরকার।

Advertisment

মোট ছ'টি গ্রামে অধিকৃত জমির ওপর নজর রাখতে গত ১৭ জুন পাঁচটি দল গঠন করে নর্মদা জেলা প্রশাসন। এই জমি ঘিরে সম্প্রতি বেড়া বসিয়ে দিয়েছে সর্দার সরোবর নর্মদা নিগম লিমিটেড (SSNNL)। তার পর থেকে গোরা, নবগাম, এবং লিমড়ি গ্রামের বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে রুজু হয়েছে মোট চারটি অনধিকার প্রবেশের মামলা।

মে এবং জুন মাসে যখন জমিতে বেড়া দিতে শুরু করে SSNNL, সেসময় গুজরাট হাইকোর্টে তাদের আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় বাঘাড়িয়া, কেবড়িয়া, এবং কোঠি গ্রাম সহ অন্যান্য কিছু গ্রামও।

জমি অধিগ্রহণের ইতিহাস ঘাঁটলে ফিরে যেতে হয় ১৯৬১ সালে, যখন নর্মদা বাঁধের খাল কাটতে এই জমি নেয় গুজরাট সরকার। পরবর্তীতে জমির মালিকানা পায় SSNNL। এটি ১৯৮৯ সালের মার্চ মাসে গঠিত গুজরাট সরকারের অধীনস্থ একটি পাবলিক লিমিটেড সংস্থা, যার দায়িত্ব ছিল সর্দার সরোবর বাঁধ প্রকল্পের বাস্তবায়ন এবং পরিচালনা।

সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের ১৮২ মিটার উঁচু মূর্তি নির্মাণের দায়িত্বে ছিল যে ট্রাস্ট, সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে সেই ট্রাস্টেরই অংশ ছিল SSNNL-ও, এবং আজও মূর্তির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে এই সংস্থা। গত বছর 'স্ট্যাচু অফ ইউনিটি এরিয়া ডেভেলপমেন্ট অথরিটি' গঠনের উদ্দেশ্যে একটি বিল পাশ করে গুজরাট সরকার, যার লক্ষ্য ছিল মূলত আদিবাসী অধ্যুষিত এই এলাকায় প্রকল্প রূপায়ণের গতি বৃদ্ধি করা।

আরও পড়ুন: জিএসটি-তে সামান্য বদল রাজ্যগুলিকে আর্থিক ভরাডুবির হাত থেকে বাঁচাতে পারে

জমিতে বেড়া দেওয়ার কাজ যদিও প্রায় শেষ করে এনেছে SSNNL, আন্দাজ ২৫০ জমির মালিক এবং তাঁদের বংশধররা এখনও SSNNL-এর দেওয়া ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করেননি। সংস্থার টেকনিক্যাল ও কোওরডিনেশন বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার এমবি জোশী বলেন, "অনেকটা সময় পার হয়ে গিয়েছে, এখনকার প্রজন্ম এটাও হয়তো জানে না যে তাদের পূর্বপুরুষদের কত করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছিল। তাছাড়া, জমির মূল মালিকের তৃতীয় বা চতুর্থ প্রজন্মকে তো আর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হিসেবে গণ্য করা যায় না। বর্তমান প্রজন্ম মনে করছে যে তারা লাভবান হচ্ছে না। যে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছিল, তার মূল্য এখন কমে গিয়েছে, এবং জমির বাজারদর যথেষ্ট বেশি। আমরা ক্ষতিপূরণ নিয়ে আলোচনায় বসতে রাজি, এবং তাদের পরামর্শ নিতেও রাজি।"

কী বলছে SSNNL

হাইকোর্টের কাছে তাদের জবাবে SSNNL জানায়, পাঁচটি গ্রাম মিলিয়ে ১,৮১৪.৬৫ একর জমি অধিগ্রহণ করে সরকার, যার জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। তবে এই জমি ব্যবহৃত না হওয়ায় কৃষিকাজে ফিরে আসেন গ্রামবাসীরা, এবং জমির আদি মালিকরাও একে একে মারা যান।

SSNNL আরও জানায়, ১৯৭৯ সালের নর্মদা ওয়াটার্স ডিসপিউট ট্রাইব্যুনাল অ্যাওয়ার্ড অনুযায়ী, ছ'টি গ্রাম মিলিয়ে জমির মালিকের সংখ্যা ২৩৮, যাঁদের মধ্যে ১০৫ জন আদি মালিক এখনও ক্ষতিপূরণ প্যাকেজ সম্পর্কে কোনও সিদ্ধান্তে আসেননি। একইভাবে, উত্তরাধিকারীদের তালিকায় রয়েছেন ২৪১ জন পুরুষ, যাঁরা আদি মালিকদের পুত্র, যাঁদের মধ্যে ১২০ জন এখনও ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করেননি।

ক্ষতিপূরণ প্যাকেজ

নর্মদা কন্ট্রোল অথরিটির নির্দেশিকা অনুযায়ী, জমির মালিকের পুরুষ উত্তরাধিকারী, যাঁদের বয়ঃক্রম ১ নভেম্বর, ১৯৮৯ সালে ছিল অন্তত ১৮ বছর, এবং যাঁরা এই প্রকল্পের কারণে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, তাঁদের দেওয়া হবে দুই হেক্টর জমি অথবা মূল জমির আয়তনের সমান জমি - কোনটির আয়তন বেশি, সেই ভিত্তিতে - সঙ্গে পশুপালনের জন্য ২৫০ বর্গফুটের আলাদা জমি।

তবে আর্থিক ক্ষতিপূরণও বেছে নিতে পারেন গ্রামবাসীরা। সেক্ষেত্রে প্রতি হেক্টর (২.৪ একর) জমি পিছু দেওয়া হবে ৭.৫ লক্ষ টাকা। তবে গ্রামবাসীদের দাবি, বর্তমান বাজারে এক একর জমির দামই প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা।

SSNNL প্রস্তাব দিয়েছে, এক হাজারটি পরিবারকে বাস্তু বিশেষজ্ঞদের পরিকল্পিত 'আদর্শ বাসাহত' প্রকল্পে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার। গোরা গ্রামে SSNNL-এর মালিকানাধীন ১৬ হেক্টর জমিতে গড়ে উঠবে এই প্রকল্প।

এছাড়াও স্ট্যাচু অফ ইউনিটি সংলগ্ন গাড়ি পারকিং করার জায়গায় যে শপিং কমপ্লেক্স নির্মিত হবে, সেখানে যেসব ব্যবসায়ীর দোকান জমি অধিগ্রহণের সময় ভেঙে দেওয়া হয়, তাঁদের জন্য দোকানঘর বরাদ্দ করা হবে। SSNNL আধিকারিকরা জানিয়েছেন, মূল উত্তরাধিকারী তালিকায় ছিলেন না, এমন কোনও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার থাকলে তাঁদেরকেও দোকানঘর গড়ে দেওয়া হবে।

আদিবাসী অধিকার

নর্মদা জেলার নান্দোড় তালুকে কেবড়িয়া কলোনি একটি শিডিউল ৫ এলাকা, যেখানে লাগু রয়েছে পঞ্চায়েত (এক্সটেনশন টু দ্য শিডিউলড এরিয়াজ) অ্যাক্ট, ১৯৯৬। শিডিউল ৫ এবং এই আইন, উভয়েরই এই বিধান যে, জমি অধিগ্রহণ অথবা উন্নয়নের গতিপথ নির্ধারণ করবে আদিবাসী পঞ্চায়েত। আদিবাসী জমি কোনও বহিরাগতের হাতে আইনত যেতে পারে না।

তবে এলাকার গ্রামবাসীদের দাবি, কেবড়িয়াকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার আগে তাঁদের কাছ থেকে কোনোরকম মতামত অথবা সম্মতি নেওয়া হয়নি।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Statue of Unity
Advertisment