কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) গুজরাটের সুরাটের এক আদালতে 'মোদী পদবি' সম্পর্কে তাঁর মন্তব্যের জন্য ২০১৯ সালের এক মানহানির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। আর, দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় কর্ণাটকের কোলারে এক সমাবেশে রাহুল বলেছিলেন, 'দুনিয়ার সব চোরের সাধারণ পদবি মোদী?' তাঁর সেই মন্তব্যের জেরে এই মানহানির মামলা দায়ের হয়েছিল।
দোষী সাব্যস্ত
চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এইচএইচ ভার্মার আদালত গান্ধীকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৯ এবং ৫০০ ধারার অধীনে দোষী সাব্যস্ত করেছে। তাঁকে জামিন দিয়েছে এবং উচ্চ আদালতে আবেদন করার সুযোগ দিতে ৩০ দিনের জন্য সাজা ঘোষণা স্থগিত রেখেছে। এমনটাই জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতার আইনজীবী বাবু মাঙ্গুকিয়া বলেছেন। রাহুল বর্তমানে কেরলের ওয়ানাদের সাংসদ।
এই সাজা ঘোষণা, রাহুল আর সাংসদ থাকতে পারবেন কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। এই প্রসঙ্গে লোকসভার স্পিকারের কার্যালয় দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছে, 'রাহুল অযোগ্য হবেন কি না, তা আইন বিশেষজ্ঞরা স্থির করবেন। কিন্তু, তার আগে সাজার ঘোষণার কথা জানিয়ে রাহুলের সদস্যপদ খারিজের বিরুদ্ধে সংসদে স্পিকারের কার্যালয়ে অভিযোগ জানাতে হবে।'
এই সাজা কি রাহুলের সদস্যপদ কাড়তে পারে?
কোনও অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত একজন সাংসদের সাংসদপদ দুটি কারণে খারিজ হতে পারে। প্রথমত, যে অপরাধের জন্য তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, তা ১৯৫১ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৮ (১) ধারায় তালিকাভুক্ত হলে। এর মধ্যে কয়েকটি নির্দিষ্ট অপরাধ হল- দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে শত্রুতা প্রচার। ঘুষ দেওয়া অথবা এইজাতীয় অযাচিত প্রভাব- যা নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে।
দ্বিতীয়ত, যদি কোনও আইন প্রণেতা অন্য কোনও অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হন কিন্তু, দুই বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য সাজাপ্রাপ্ত হন। জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৮ (৩) ধারা অনুযায়ী, কোনও সাংসদ যদি দোষী সাব্যস্ত হন, তবে তাঁর কম করে দুই বছরের কারাদণ্ড হলে ওই সাংসদকে অযোগ্য ঘোষণা করা যেতে পারে।
আরও পড়ুন- তাঁর কাছে কী ‘আবদার’ করেছিলেন সুজন-দিলীপ-শুভেন্দুরা?, ‘তথ্যে’ তোলপাড় ফেললেন পার্থ!
এই সাজার বিরুদ্ধে আবেদনে কতটা লাভ হয়?
ধারা ৮(৪) বলে যে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার তারিখ থেকে 'তিন মাস অতিবাহিত হওয়ার পরে' সাংসদ পদ খারিজ হয়। এই সময়ের মধ্যে, গান্ধী হাইকোর্টে সাজার বিরুদ্ধে আবেদন করতে পারেন। এই আইনে রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ হওয়া আটকানো যেত। কিন্তু, ২০১৩ সালে 'লিলি থমাস বনাম ভারত সরকার' মামলায় ঐতিহাসিক রায়ে সুপ্রিম কোর্ট জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ধারা ৮ (৪) অসাংবিধানিক বলে বাতিল করেছে।
যার অর্থ হল, রাহুলকে শুধু আবেদন করলেই হবে না। উচ্চ আদালত থেকে নিম্ন আদালতের রায়ে স্থগিতাদেশ পেতে হবে। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, এই স্থগিতাদেশ শুধুমাত্র ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৮৯ ধারার অধীনে সাজা স্থগিতই করতে পারে না। দোষী সাব্যস্ত হওয়াও স্থগিত করতে পারে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৮৯ ধারার অধীনে আবেদন বিচারাধীন থাকা অবস্থায় আদালত শুধুমাত্র দোষীর সাজা স্থগিতই করতে পারে না। আবেদনকারীকে জামিনে মুক্তিও দিতে পারে।