একটি সফল চন্দ্রাভিযানের পর ইসরোর লক্ষ্য সূর্য। সূর্যকে আরও বেশি করে জানতে ইসরো ভারতের প্রথম সূর্য অভিযানের মহাকাশযান আদিত্য-এল ১ সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে উৎক্ষেপণের চেষ্টা চালাচ্ছে। মহাকাশযানটি সূর্য-পৃথিবীর ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট ১ (এল১)-এর চারপাশে একটি হ্যালো কক্ষপথে স্থাপিত হবে। এই কক্ষপথ পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে। ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট হল মহাকাশের সেই অবস্থান, যেখানে পাঠানো বস্তুগুলো দুটি বৃহৎ ভরের (এই ক্ষেত্রে, পৃথিবী এবং সূর্য)-র মহাকর্ষীয় টান উপেক্ষা করে একটি ছোট বস্তুর মতই তাদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় নির্দিষ্ট বিন্দুতে থেকে ঘুরতে পারবে। যার অর্থ, মহাকাশযান খুব বেশি জ্বালানি ছাড়া একই অবস্থানে থাকতে পারবে।
আদিত্য-এল১ যা করবে
আদিত্য-এল১ মহাকাশযানটিকে পৃথিবী-সূর্যের ঘূর্ণন ব্যবস্থার এল১ বিন্দুর চারপাশে একটি হ্যালো কক্ষপথে স্থাপন করার অর্থ হবে যে এটি কোনও বাধা ছাড়াই অবিরাম সূর্যকে দেখতে সক্ষম হবে। সাতটি পেলোড দিয়ে সজ্জিত এই মহাকাশযান সূর্যের করোনা, সৌর নির্গমন, সৌর বায়ু এবং অগ্নিশিখা আর করোনাল ম্যাস ইজেকশনস (সিএমই) পর্যবেক্ষণ করবে। পাশাপাশি, সূর্যের ছবি ২৪ ঘণ্টা ক্যামেরাবন্দি করবে। এল১ পয়েন্টটি ইতিমধ্যেই সৌর ও হেলিওস্ফিয়ারিক অবজারভেটরি স্যাটেলাইট (SOHO), নাসা (NASA) এবং ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা ইএসএ (ESA)-র একটি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রকল্পে তৈরি মহাকাশযানের আবাসস্থল।
শুক্র ভ্রমণ
সূর্যের পাশাপাশি, ইসরোর অভিযানের তালিকায় রয়েছে শুক্র ভ্রমণও। সেই পরিকল্পনা আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। গত বছর ইসরোর চেয়ারম্যান সোমানাথ আহমেদাবাদে ভেনুসিয়ান সায়েন্সের ওপর একদিনের বৈঠকের উদ্বোধনে বলেছিলেন, 'বর্তমানে একটি ভেনাস অভিযানের পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রকল্পের একটি প্রতিবেদনও তৈরি করা হয়েছে। এর অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে, সামগ্রিক পরিকল্পনা করা হয়েছে।'
প্রথমে ভুল ধারণা ছিল
যদিও এই অভিযানের সঠিক বিবরণ এখনও প্রকাশ করা হয়নি, পূর্ববর্তী ISRO মিশনের মত কল্পিত শুক্র অভিযানটিও বৈজ্ঞানিক গবেষণার ওপর জোর দেবে। আর, মহাকাশ সংস্থা এক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত দক্ষতা প্রদর্শন করবে। পৃথিবীর চেয়ে সামান্য ছোট, শুক্রকে একসময় আমাদের বাড়ির গ্রহের অনুরূপ বলে মনে করা হত। প্রকৃতপক্ষে, গ্রহ অনুসন্ধানের আগে, অনেকেরই বিশ্বাস ছিল যে এই গ্রহে অভিযান চালানো তেমন একটা কঠিন হবে না।
আরও পড়ুন- নতুন ছয় সদস্য পেল ব্রিকস, ভারতের কি কোনও লাভ হবে?
সোভিয়েতের শুক্র অভিযান
কিন্তু, ১৯৬০-এর দশকে শুক্র গ্রহের প্রাথমিক অভিযানগুলো বুঝিয়ে দিয়েছিল যে পরিস্থিতি অত্যন্ত প্রতিকূল। শুক্র গ্রহে অভিযান চালানো বেশ কঠিন। কারণ, এর তীব্র তাপ, আগ্নেয়গিরি আর ভূমির নিরন্তর অদলবদল। আজ অবধি শুক্র গ্রহের পৃষ্ঠে যে মহাকাশযান দুই ঘণ্টার সামান্য বেশি সময় টিকতে পেরেছে, তা হল ১৯৮১ সালে পাঠানো সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেনেরা ১৩। আর, সেটাই রেকর্ড।