Advertisment

রবিবার রাতে সব আলো নিভে গেলে কি সত্যিই বিকল হবে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা?

সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা হলো যে ঠিক রাত ন'টার আগেই অভূতপূর্বভাবে হ্রাস পাবে লোড, এবং ৯.০৯ বাজলেই হঠাৎ করে তা বৃদ্ধিও পাবে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
india power grid

প্রতীকী ছবি

শুক্রবার রাষ্ট্রের উদ্দেশে তাঁর ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশবাসীর কাছে আবেদন জানান, আগামীকাল, অর্থাৎ ৫ এপ্রিল, রাত নটার সময় শুরু করে সকলে যেন ন'মিনিট ধরে নিজেদের বাড়ির আলো নিভিয়ে রাখেন।

Advertisment

এই আবেদনের জেরে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট এবং তামিলনাড়ু সহ আরও কিছু রাজ্যের গ্রিড ম্যানেজাররা। তাঁদের নিজ নিজ রাজ্যের লোড ডেসপ্যাচ সেন্টারের (SLDC) মাধ্যমে তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন যে আপৎকালীন পদক্ষেপ হিসেবে তাঁরা সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকছেন। অর্থাৎ কিনা তাঁরা ধরে নিচ্ছেন যে সারা দেশের আলো একসঙ্গে রবিবার রাত ন'টার সময় নিভে গিয়ে ফের ন'মিনিট পর একসঙ্গে জ্বলে উঠবে।

রাত ন'টায় ন'মিনিট: আলো নিভিয়ে দিলে কী প্রভাব পড়বে গ্রিড-এর কার্যকলাপের ওপর?

বিশ্বের পারস্পরিকভাবে সংযুক্ত বিদ্যুৎবলয়গুলির মধ্যে অন্যতম বৃহৎ হলো ভারত, যার উৎপাদন-ক্ষমতা ৩৭০ গিগাওয়াট (৩ লক্ষ ৭০ হাজার মেগাওয়াট), এবং স্বাভাবিক 'বেস লোড' বিদ্যুতের চাহিদা আন্দাজ ১৫০ গিগাওয়াট।

দেশের বিদ্যুৎবলয় অর্থাৎ 'পাওয়ার গ্রিড' পরিচালনার দায়িত্ব যাদের হাতে, সেই পাওয়ার সিস্টেম অপারেশন কর্পোরেশন লিমিটেড (POSOCO) দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা আগাম জানিয়ে দেয়, এবং সেই তথ্যের ভিত্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী ইউনিটগুলি থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এর ফলে অষ্টপ্রহর চাহিদা এবং সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকে, এবং বিদ্যুৎবলয়ের 'ট্রিপ' করার বা অতিরিক্ত 'লোড'-এর ধাক্কা সামলাতে না পেরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ভয় থাকে না।

ফ্রিকোয়েন্সি (এক্ষেত্রে চাহিদা-সরবরাহের ভারসাম্য) থেকে বোঝা যায় সেই মুহূর্তে বিদ্যুৎবলয়ের লোড উৎপাদনের ব্যালান্স। দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থার নিরাপত্তা নির্ধারণের এটি একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পন্থা। স্বাভাবিক ফ্রিকোয়েন্সি ধরা হয় ৫০ হার্টজ (hertz), এবং একটি অনুমোদিত পরিসরের মধ্যে (৪৯.৯-৫০.৫ হার্টজ) এই ফ্রিকোয়েন্সি বজায় রাখার চেষ্টা করে POSOCO, মূলত চাহিদা এবং সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে।

এই ফ্রিকোয়েন্সি বজায় রাখা এই কারণে জরুরি যে, আমাদের ঘরে ঘরে যত বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এবং যন্ত্রপাতি রয়েছে, সেগুলির প্রত্যেকটি তৈরি হয়েছে একটি নির্দিষ্ট বৈদ্যুতিক পরিসরে নিরাপদভাবে কাজ করার জন্য। আচমকা সেই ফ্রিকোয়েন্সি বেড়ে গেলে ভোল্টেজও বেড়ে যায়, আবার ফ্রিকোয়েন্সি কমে গেলে ভোল্টেজ কমে যায়, যার ফলে ওইসব যন্ত্রপাতির ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা।

যখনই কোনোরকম বিপর্যয় ঘটে, যেমন বিদ্যুৎকেন্দ্রে ঘাটতি বা ট্রান্সমিশন লাইন বিকল হওয়া অথবা অকস্মাৎ বিদ্যুতের চাহিদায় পরিবর্তন, গ্রিড পরিচালকের কাজ হলো এটা নিশ্চিত করা যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে যাবে সংশোধনী ব্যবস্থা। তা যদি না হয়, তবে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে হবে বিপদ কাটাতে, হয় চাহিদা কমিয়ে নাহয় অন কোনও উৎস থেকে বাড়তি বিদ্যুৎ টেনে। এবং এ সবই করতে হবে অতি দ্রুত।

মোদীর আবেদন: ন'মিনিটের সমস্যাটা কোথায়?

সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা হলো যে ঠিক রাত ন'টার আগেই অভূতপূর্বভাবে হ্রাস পাবে লোড, এবং ৯.০৯ বাজলেই হঠাৎ করে তা বৃদ্ধিও পাবে। উৎকণ্ঠা এই নিয়েই যে, উপরোক্ত 'গ্রিড ফ্রিকোয়েন্সি' যেন অনুমোদিত সীমার বাইরে না চলে যায়, এবং দেশজুড়ে যত বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে, সবারই 'ফ্রিকোয়েন্সি রেসপন্স' হওয়া উচিত 'গ্রিড কোড' মোতাবেক।

ন'মিনিটের এই আলো নেভানোর খেলায় ১০ থেকে ১৫ হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুতের চাহিদা আচমকা পড়ে গিয়ে ফের কয়েক মিনিট বাদেই চড়চড় করে বেড়ে যাবে।

এত বড় গ্রিডে এই চাহিদার তাৎপর্য কী?

স্বাভাবিক অবস্থায় দেশের মোট বৈদ্যুতিক চাহিদার ৩০-৩২ শতাংশ হলো গৃহজাত চাহিদা। ভারতে মোট বৈদ্যুতিক চাহিদার লোড পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে, শিল্প এবং কৃষিক্ষেত্রের চাহিদা যথাক্রমে ৪০ এবং ২০ শতাংশ, এবং বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে চাহিদার পরিমাণ আট শতাংশ। সুতরাং, শুধুমাত্র বাড়ির আলো নেভানো হলে স্বাভাবিক সময় বিদ্যুৎবলয়ের ফ্রিকোয়েন্সি-র ওপর খুব একটা চাপ পড়ার কথা নয়।

তবে এখন এত উদ্বেগের কারণ কী?

এই কারণে গ্রিড বিকল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা যদিও খুবই কম, তবু গ্রিড পরিচালকরা একটা "ধাক্কা"র আশঙ্কা করছেন। সাধারণভাবে গোটা বিদ্যুৎ ব্যবস্থার মধ্যে নিহিত আছে সবচেয়ে বড় ইউনিট বিকল হয়ে গেলে তার বিকল্প ব্যবস্থা, এক্ষেত্রে দুটি শর্ত আছে:

এক, বর্তমানে গ্রিডের যা লোড, তার অধিকাংশই গৃহজাত, বিশেষ করে ২৬ মার্চের লকডাউনের পর থেকে। এর ফলে ১৫০ গিগাওয়াটের স্বাভাবিক চাহিদা ইতিমধ্যেই হ্রাস পেয়েছে প্রায় ২০ শতাংশ, যেহেতু অধিকাংশ কলকারখানা এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানই বন্ধ। হোটেল, কারখানা, মল, রেলস্টেশন, বিমানবন্দর বন্ধ থাকার ফলে গৃহজাত চাহিদাই এখন মোট চাহিদার সবচেয়ে বড় অংশ। অতএব স্রেফ আলো জ্বালানোর লোড এখন স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি, যার ফলে দেশময় হঠাৎ করে সব আলো নিভে গেলে ফ্রিকোয়েন্সির অদলবদল অনেক বেশি জানান দেবে।

দ্বিতীয় চিন্তা হলো বড় বড় আবাসন এবং হাউজিং সোসাইটিগুলি যদি তাদের মেইন সুইচ অফ করে দেয়, বা কিছু অত্যুৎসাহী বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা যদি রাস্তার আলো, এমনকি ফিডার বক্সের সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেয়। বছরের এই সময়টায় গৃহজাত চাহিদা সবচেয়ে বেশি হয় ওই রাত ন'টা নাগাদই। এর ফলে ফ্রিকোয়েন্সির পরিবর্তন স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি হওয়ার সম্ভাবনা।

তবে আশা জাগাচ্ছে এয়ার-কন্ডিশনিং। উত্তর ভারতে এখনও এর ব্যবহার পুরোদমে শুরু না হলেও পশ্চিম এবং দক্ষিণে এয়ার-কন্ডিশনিংয়ের দৌলতে ইতিমধ্যেই বেড়েছে বিদ্যুতের চাহিদা, যার ফলে আলো নেভালে গ্রিডের ওপর তার অতটা প্রভাব নাও পড়তে পারে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Advertisment