Supreme Court granted bail to Manish Sisodia: আবগারি নীতি মামলায় মণীশ সিসোদিয়াকে জামিন দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিআর গাভাই ও বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চ আজ (৯ আগস্ট) দিল্লির আবগারি নীতি মামলায় সিসোদিয়াকে জামিন দিয়েছে। যার জেরে, দিল্লির প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী সিসোদিয়া জেল থেকে মুক্তি পাবেন। আদালত বলেছে যে, সিসোদিয়া বিনা বিচারে প্রায় ১৭ মাস জেলে কাটিয়েছেন। যার জেরে তিনি ভারতীয় সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদের (জীবন এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতার সুরক্ষার অধিকার)-এর অধীনে দ্রুত বিচারের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। ২০২৩ সালের অক্টোবরে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) এবং সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, ছয় থেকে আট মাসের মধ্যে সিসোদিয়ার বিচার শেষ হবে। কিন্তু, তারপরও মণীশ সিসোদিয়ার বিচার শুরু হয়নি। এই অবিচারের বিরুদ্ধেই সিসোদিয়া সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন। আবগারি নীতি মামলায় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এখনও কারাগারে। যদিও তাঁকে ২০২৪ সালের ১২ জুলাই, জামিন দেওয়া হয়েছিল। ইডি (ED)-র দায়ের করা তহবিল তছরুপ (মানি লন্ডারিং) মামলায়, সিবিআই (CBI) সিসোদিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করেছিল। তার জেরেই মণীশ সিসোদিয়া বিচার বিভাগীয় হেফাজতে রয়েছেন।
আদালত যে কারণে জামিন দিল
আদালত বলেছে যে সিসোদিয়ার জামিন মামলায় দীর্ঘ কারাবাসের বিষয়টি ট্রায়াল কোর্ট এবং দিল্লি হাইকোর্টের বিবেচনা করা উচিত ছিল। একইসঙ্গে শীর্ষ আদালত বলেছে যে বারবার বলার পরও ট্রায়াল কোর্ট এবং হাইকোর্ট, 'জামিন একটা নিয়ম এবং জেল ব্যতিক্রম,' এই নিয়মকে সিসোদিয়ার মামলায় মাথায় রাখেনি। প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট, ২০০২-এর ৪৫ নম্বর ধারায়, জামিনের শর্ত অত্যন্ত কঠোর। শীর্ষ আদালত মনে করছে এই ধারার অধীনে কঠোর জামিনের শর্তগুলো 'শিথিল' হতে পারে, যদি অভিযুক্ত দীর্ঘ সময় কারাবাসের মধ্যে থাকেন। পিএমএলএ (PMLA)-এর আইনে তিনি নিরপরাধ কি না, তা প্রমাণের দায়িত্ব অভিযুক্তের। অভিযুক্তকেই প্রমাণ করতে হয় যে, তিনি কোনও অপরাধ করেননি। জামিনে থাকাকালীনও তাঁর কোনও অপরাধ করার সম্ভাবনা নেই। সেই মামলাতেই সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি গাভাই বলেছেন, এই বিচার 'অদূর ভবিষ্যতে শেষ হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।' বিচারপতি বলেছেন, জামিন অস্বীকার করার উদ্দেশ্য হল বিচারে বন্দির উপস্থিতিকে নিশ্চিত করা। এই মামলায়, সিসোদিয়ার পালানোর কোনও সম্ভাবনাই নেই। কারণ এদেশে তাঁর 'শিকড় অত্যন্ত গভীর'।
সিসোদিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ
মদ বিক্রেতাদের সুবিধা দিয়ে তার পরিবর্তে পালটা সুবিধা নেওয়ার অভিযোগে মণীশ সিসোদিয়াকে ২০২৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ইডি এবং ২০২৩ সালের ৯ মার্চ সিবিআই গ্রেফতার করেছিল। ইডি তাঁর বিরুদ্ধে তহবিল তছরুপ আইন (মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০০২)-এর অধীনে মামলা দায়ের করেছিল। সিবিআই সিসোদিয়ার বিরুদ্ধে ১৯৮৮ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ এনেছে। তাঁর জামিনের আবেদনের মামলায় আদালত সরকারপক্ষের দুটি আপত্তি খারিজ করে দিয়েছে। সরকারপক্ষ বলেছিল, এই মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে নয়, ট্রায়াল কোর্টে শুনানি করা উচিত। তার জবাবে আদালত বলেছে যে মামলাটি যখন শীর্ষ আদালতে চলেই এসেছে, তখন সেখান থেকে ট্রায়াল কোর্টে ফিরে যাওয়া অর্থহীন। সরকারপক্ষ আরও বলেছিল যে, সিসোদিয়ার জন্যই মামলা বারবার বিলম্বিত হয়েছে। কারণ, সিসোদিয়াই বারবার তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় আবেদন করেছেন। জবাবে শীর্ষ আদালত বলেছে যে, সিসোদিয়ার আবেদনগুলো ট্রায়াল কোর্ট খতিয়ে দেখেছে। আর, সিসোদিয়ার কোনও আবেদনই 'অর্থহীন' সাব্যস্ত হয়নি। তাই অযথা মামলায় দেরি করানোর প্রশ্নই আসে না।
আরও পড়ুন- কেন হাসিনার ওপর এতটা খেপে গেলেন পড়ুয়ারা, কী করেছিলেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী?
সরকারপক্ষের আবেদন সুপ্রিম কোর্টে খারিজ
সিসোদিয়াকে সিবিআই এবং ইডি, উভয়ের দায়ের করা মামলাতেই জামিনে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শর্ত রাখা হয়েছে যে তিনি সাক্ষীদের ওপর প্রভাব বিস্তার করবেন না। তাঁর পাসপোর্ট জমা দেবেন। আর, প্রতি সোম এবং বৃহস্পতিবার পুলিশের কাছে হাজিরা দেবেন। আদালতে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এসভি রাজু আবেদন করেছিলেন যাতে, সিসোদিয়াকে দিল্লি সচিবালয়ে যেতে বাধা দেওয়া হয়। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় কেজরিওয়ালকে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য জামিনে মুক্তি দেওয়ার সময় এই সব শর্তই রাখা হয়েছিল। কিন্ত, সিসোদিয়ার জামিনের ক্ষেত্রে আদালত এই ধরনের শর্ত দিতে অস্বীকার করেছে।