Supreme Court on Scheduled Caste reservation: এক যুগান্তকারী রায়ে, সুপ্রিম কোর্ট বৃহস্পতিবার (আগস্ট ১) সংরক্ষণে তফসিলি জাতির শ্রেণিবিভাজনে অনুমতি দিয়েছে। যাতে কার্যত তফসিলি জাতির মধ্যে পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীগুলির জন্য ব্যাপক সুরক্ষার অনুমতি মিলল। শীর্ষ আদালতে ৬:১ ব্যবধানে এই রায় গৃহীত হয়েছে। ভারতের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে সাত বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে মামলাটি চলছিল। যেখানে বিচার করে দেখা হচ্ছিল যে, সংরক্ষণের জন্য এইভাবে তফসিলি জাতি এবং তফসিলি উপজাতির শ্রেণিবিভাজন অনুমোদন যোগ্য কি না। যে রাজ্যগুলো প্রভাবশালী তফসিলি জাতিগুলোর তুলনায় পিছিয়ে পড়া তফসিলি জাতিগুলোকে বেশি সংরক্ষণ দিতে চায়, তাদের ক্ষেত্রে এই রায় বড় হাতিয়ার হয়ে উঠল।
আদালতের রায়ে বলা হয়েছে
আদালত জানিয়েছে, 'ইতিহাস এবং অভিজ্ঞতাই প্রমাণ যে তফসিলি গোষ্ঠীভুক্ত সব জাতিই সমজাতীয় এবং সমমানের শ্রেণি নয়।' সুপ্রিম কোর্টের এই বেঞ্চে ছিলেন- বিচারপতি বিআর গাভাই, বিচারপতি বিক্রম নাথ, বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদী, বিচারপতি পঙ্কজ মিথাল, বিচারপতি মনোজ মিশ্র ও বিচারপতি সতীশচন্দ্র শর্মা। এই বিচারপতিদের মধ্যে কেবলমাত্র বিচারপতি বেলা ত্রিবেদীই রায়ে ভিন্নমত পোষণ করেছেন। বেঞ্চ এই মামলায় ২০০৪ সালের ইভি চিন্নাইয়া বনাম অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের রায় পরীক্ষা করে দেখেছে। সেই রায়ে বলা হয়েছিল, তফসিলি জাতির শ্রেণিবিভাজন থাকতে পারে না। এই চিন্তাভাবনার পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। আদালত এই পুনর্বিবেচনার ভাবনাকেই মেনে নিয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট আগে কী বলেছিল?
শীর্ষ আদালত এই মামলায় তার ২০০৪ সালের রায়টি পরীক্ষা করেছে। ২০০৪ সালে শীর্ষ আদালতের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ বলেছিল যে সংবিধানের ৩৪১ অনুচ্ছেদ অনুসারে কোন সম্প্রদায় বা কোন জাতি সংরক্ষণের সুবিধা পেতে পারে, তা কেবল রাষ্ট্রপতিই জানাতে পারেন। রাজ্যগুলোর এক্ষেত্রে হস্তক্ষেপের ক্ষমতা নেই। ২০২৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি, আদালত এই মামলায় রায়দান স্থগিত রেখেছিল। শীর্ষ আদালত বলেছিল যে তফসিলিদের মধ্যে শ্রেণিবিভাজনের অনুমতি দেওয়া না হলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে, যেখানে 'উন্নত তফসিলিরাই যাবতীয় সুবিধা দখল করে নেবেন।'
পঞ্জাবে বিজ্ঞপ্তি বাতিল হয়েছিল
১৯৭৫ সালে পঞ্জাব সরকার তার তৎকালীন ২৫% তফসিলি জাতি (SC)-র সংরক্ষণকে দুটি ভাগে ভাগ করে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল। প্রথম বিভাগে, সংরক্ষিত আসনগুলো শুধুমাত্র বাল্মীকি এবং মাজহাবি শিখ সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত ছিল। কারণ, এই জাতিগুলোকে পঞ্জাবের অর্থনৈতিক এবং শিক্ষাগতভাবে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা শ্রেণি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সেই সংরক্ষণ এখনও অব্যাহত রয়েছে। সেই নীতিতে শিক্ষা ও সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তাদের প্রথম অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়। দ্বিতীয় বিভাগটি ছিল বাকি তফসিলি জাতিভুক্তদের জন্য। এই আইন ৩০ বছর কার্যকর থাকলেও ২০০৪ সালে তা আইনি বাধার মুখে পড়ে। সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে বলেছিল, সংবিধানের ৩৪১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি তফসিলি জাতির তালিকা তৈরি করেন। রাজ্যগুলোর এই তালিকায় 'হস্তক্ষেপ'-এর অধিকার নেই।শীর্ষ আদালতের রায়ের দুই বছর পর, ডা. কিশান পাল বনাম পঞ্জাব রাজ্যের মামলায় পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট পঞ্জাব সরকারের ১৯৭৫ সালের বিজ্ঞপ্তিটি বাতিল করে দেয়।
আরও পড়ুন- কেরলে ধস, একের পর এক ভয়ংকর দুর্বিপাক! কোন অশনিসংকেত দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা?
ইভি চিন্নাইয়া মামলা এবং বিরোধিতা
পঞ্জাবের মত অন্ধ্রপ্রদেশও তফসিলিদের শ্রেণিবিভাজন করে ২০০০ সালে তফসিলি জাতি (সংরক্ষণের যৌক্তিকতা) আইন বলবৎ করেছিল। যার জেরে অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন ইভি চিন্নাইয়া। সেই মামলায় ২০০৪ সালে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ বলেছিল, তফসিলিদের শ্রেণিবিভাজন সমতার অধিকার লঙ্ঘন করবে। তফসিলিদের অবশ্যই সমজাতীয় গোষ্ঠী হিসাবে বিবেচনা করা উচিত। যেহেতু তারা সকলেই অস্পৃশ্যতার কারণে বৈষম্যের মুখোমুখি হয়েছিল, তাই তফসিলিদের শ্রেণিবিভাজন করা যায় না। এর বিরুদ্ধেই ২০২০ সালে, বিচারপতি অরুণ মিশ্রের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ বলেছিল যে ২০০৪ সালের রায়ের পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন। কারণ, বাস্তবটা হল তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য সংরক্ষণ হলেও তাদের অগ্রগতির মধ্যে অসাম্য রয়েছে। সংরক্ষিতদের মধ্যে একটা 'ক্রিমি লেয়ার' স্তর বা সুবিধাভোগী শ্রেণি তৈরি হয়েছে।