Advertisment

বিশ্লেষণ: শবরীমালার সঙ্গে অন্য যে তিনটি মামলা জুড়তে চায় সুপ্রিম কোর্ট

সংবিধানে দেয় মৌলিক অধিকারে যেহেতু জাতি, লিঙ্গ ও ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন করা যায় না, সে কারণে মহিলাদের মসজিদে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Sabarimala, Supreme Court

শবরীমালা মন্দির

শবরীমালা রিভিউ আবেদন মামলার রায় দিতে গিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতিদের হয়ে রায় লিপিবদ্ধ করেছেন দেশের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। তিনি রায় লিখেছেন আরও দুই বিচারপতি (এএম খানউইলকর এবং ইন্দু মালহোত্রা) এবং নিজের সপক্ষে। এই রায়ে তিনি সুপ্রিম কোর্টে বকেয়া আরও মামলার কথা উল্লেখ করেছেন যার সঙ্গে ধর্মের প্রেক্ষিতে মহিলাদের অধিকারের বিষয় জড়িত।

Advertisment

সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রস্তাব ওই মামলাগুলির সঙ্গেই শবরীমালা মামলার রিভিউ পিটিশনে শুনানি হোক বৃহত্তর বেঞ্চে।

সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতিরা বলেছেন, "আমাদের মতে দর্গা বা মসজিদে মুসলিম মহিলাদের প্রবেশাধিকার (রিট পিটিশন (দেওয়ানি) নং ৪৭২, ২০১৯), অপারসির সঙ্গে বিবাহসম্পর্কে আবদ্ধ পারসি মহিলাদের আগিয়ারিতে প্রবেশ (স্পেশাল লিভ পিটিশন (দেওয়ানি) নং ১৮৮৮৯, ২০১২) এবং দাউদি বোহরা সম্প্রদায়ের মধ্যে স্ত্রীলিঙ্গ কর্তনের আচার (রিট পিটিশন (দেওয়ানি) নং ২৮৬, ২০১৭) মামলাগুলি একে অপরের সঙ্গে যুক্ত এবং এগুলির রিভিউও একসঙ্গে হওয়া উচিত। এই ইস্যুগুলি বৃহত্তর বেঞ্চে রেফার করার প্রসঙ্গ উড়িয়ে দেওয়া যায় না।"

এই মামলা গুলি কী কী?

মসজিদ ও দরগায় মুসলিম মহিলাদের প্রবেশ

২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে পুনের এক মহিলা, ইয়াসমিন জুবের আহমেদ পীরজাদে এবং তাঁর স্বামী জুবের আহমেদ নাজির আহমেদ পীরজাদে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। তাঁদের আবেদন ছিল সরকার এবং মুসলিম সংস্থাগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হোক মুসলিম মহিলারা যাতে মূল ফটক দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করতে পারেন এবং তাঁদের যেন মূল প্রার্থনা এলাকার দর্শন ও শ্রবণাধিকার দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: সুপ্রিম কোর্টের অযোধ্যা ও শবরীমালা রায় কোথায় আলাদা হয়ে গেল

ওই আবেদনে বলা হয়, কোরাণ এবং হাদিশে কোথাও লিঙ্গগত বিভাজনের কথা বলা নেই। ওই আবেদনে আরও বলা হয় মসজিদে মহিলাদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করা অসাংবিধানিক কারণ তা মহিলাদের ন্যূনতম সম্মানদানের পরিপন্থী এবং সংবিধানের ১৪,১৫,২১ ও ২৫ ধারায় উল্লিখিত মৌলিক অধিকারের বিরোধী।

আবেদনকারীরা তাঁদের সওয়ালে বলেছিলেন, সংবিধানে দেয় মৌলিক অধিকারে যেহেতু জাতি, লিঙ্গ ও ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন করা যায় না, সে কারণে মহিলাদের মসজিদে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী।

গত ৫ নভেম্বর হবু প্রধান বিচারপতি এস এ বোবডে, বিচারপতি এস আব্দুল নাজির এবং কৃষ্ণমুরারির বেঞ্চে এ আবেদনের শেষ শুনানি হয়েছে।

ওইদিন বেঞ্চ কোনও কারণ না দেখিয়ে শুনানি ১০ দিনের জন্য মুলতুবি রাখে।

দাউদি বোহরাদের মধ্যে স্ত্রী লিঙ্গ কর্তন

২০১৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র এবং বিচারপতি খানউইলকর এবং বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ সুনীতা তিওয়ারি বনাম ভারত সরকার ও অন্যান্য মামলা সুপ্রিম কোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চের কাছে পাঠিয়েছে।

সংবিধানের ৩২ নং অনুচ্ছেদের অধীনে করা ওই আবেদনে মহিলাদের খতনা প্রথার সাংবিধানিকতা প্রশ্ন তোলা হয়েছে। আবেদনকারী জানিয়েছেন দাউদি বোহরা সম্প্রদায়ের সমস্ত শিশু কন্যার উপরেই এই প্রথা লাগু।

স্ত্রীলিঙ্গকর্তনের এই আদি আচারের কোনও বৈজ্ঞানিক চিকিৎসাগত কারণ নেই বলে দাবি করে পিটিশনে বলা হয়েছে, এর কোনও উল্লেখ কোরাণে নেই এবং এর ফলে যে অত্যাচার, শারীরিক যন্ত্রণা, অমানবিকতা এবং মানসিক অত্যাচার মেয়েদের সইতে হয় তার ভার তাদের সারা জীবন ধরে বহন করেও চলতে হয়।

রাষ্ট্রসংঘের শিশু অধিকার এবং মানবাধিকার সনদের উপর ভিত্তি করে এই আবেদন করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে এই আচার সংবিধানের ২১ নং অনুচ্ছেদ (জীবন এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অধিকার)-এর পরিপন্থী।

আবেদনে স্ত্রীলিঙ্গকর্তনকে ভারতীয় দণ্ডবিধি আওতায় অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে বলা হয়েছে।

আবেদনের বিরুদ্ধে একটি পাল্টা হলফনামাও জমা পড়ে আদালতে। সে হলফনামায় বলা হয় এ প্রথা ১৪০০ বছরের প্রাচীন এবং দাউদি বোহরা সম্প্রদায়ের ধর্মের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ- ফলে সংবিধানের ২৬ নং অনুচ্ছেদ (ধর্মীয় গোষ্ঠীর নিজেদের বিষয় পরিচালনার অধিকার) অনুসারে সুরক্ষাযোগ্য।

পাল্টা পক্ষের আইনজীবী অভিষেক মনু সাংভি এবং ভারতের অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে ভেনুগোপাল উভয়েই প্রস্তাব দেন বিষয়টি বৃহত্তর বেঞ্চে পাঠানো হোক, যে আবেদন আদালত মেনেও নেয়।

অপারসির সঙ্গে বিবাহসম্পর্কে আবদ্ধ পারসি মহিলাদের আগিয়ারিতে প্রবেশ

২০০২ সালে গুজরাট হাইকোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে এই স্পেশাল লিভ পিটিশন জমা পড়ে।

বাবার মৃত্যুর পর শেষকৃত্যের জন্য টাওয়ার অফ সাইলেন্সে এক মহিলাকে প্রবেশ করতে না দেওযার ভালসাড পারসি অঞ্জুমানের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে হাইকোর্ট।

১৯৫৪ সালের বিশেষ বিবাহ আইনানুসারে এক অপারসিকে বিবাহের সুবাদে ওই মহিলা আর পারসি নেই বলে পারসি অঞ্জুমানের সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয় আদালতে। অঞ্জুমান বলেছিল, বিবাহসূত্রে তিনি হিন্দু হয়ে গিয়েছেন।

আবেদনকারী ছিলেন গুলরুখ কন্ট্রাক্টর গুপ্তা। তাঁর বন্ধু দিলবর ভালভি পারসি হয়েও এক হিন্দুকে বিয়ে করার পর তাঁর মায়ের মৃত্যুর পর তাঁকে টাওয়ার অফ সাইলেন্সে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এরপর গুলরুখ আদালতের শরণাপন্ন হন।

সুপ্রিম কোর্টে কুলরুখ গুপ্তার কৌঁশুলি ছিলেন ইন্দিরা জয়সিং। তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন হিন্দুর সঙ্গে পারসির বিয়ে হওয়ার মানেই কি ধর্মের পরিবর্তন! এ বিষয়টি লিঙ্গসাম্যের অন্তর্গত বলে উল্লেখ করেছিলেন তিনি।

২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র, বিচারপতি একে সিক্রি, খানউইলকর, চন্দ্রচূড় এবং অশোক ভূষণের সাংবিধানিক বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ ছিল "অন্য ধর্মের কাউকে বিয়ে করলে ডিএনএ উড়ে যায় না  এবং অন্য ধর্মের কাউকে বিয়ে করার মাধ্যমে কোনও মহিলা নিজের বাবার প্রতি ভালবাসা বিকিয়ে দেন না।" আদালত বলেছিল, "বিশেষ বিবাহ আইনে বিয়ে করার মাধ্যমে নিজস্ব সত্তাকেই ধারণ করা হয়।"

supreme court Sabarimala
Advertisment