মঙ্গলবার সমকামী বিয়ে সম্পর্কে রায় ঘোষণা করেছে সুপ্রিম কোর্ট। ভারতের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ আজ (১৭ অক্টোবর) ভারতে সমকামী বিবাহকে বৈধ করার বিরুদ্ধে সর্বসম্মতভাবে রায় দিয়েছে। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি সঞ্জয় কিষাণ কউল, বিচারপতি রবীন্দ্র ভাট, বিচারপতি হিমা কোহলি ও বিচারপতি পিএস নরসিমহা। আদালত অ-বিষমকামী দম্পতিদের বিবাহের বিরুদ্ধেও রায় দিয়েছে। তা নিয়ে যদিও মতপার্থক্য ছিল। দুই বিচারপতি পক্ষে থাকলেও, তিন বিচারপতি বিরুদ্ধেই মত পোষণ করেছেন।
লিঙ্গ নিরপেক্ষতার ব্যাখ্যা
প্রধান বিচারপতি বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার সংসদের ওপরেই ছেড়ে দিয়েছেন। প্রধান বিচারপতি ও বিচারপতি কউল অ-বিষমকামী দম্পতিদের বিবাহের পক্ষেই সওয়াল করেছেন। প্রধান বিচারপতি যোগ করেছেন যে সুপ্রিম কোর্ট বিশেষ বিবাহ (এসএমএ) আইনে আঘাত হানতে পারে না, তা পরিবর্তন করতে পারে না। দাখিল করা আবেদনের কেন্দ্রবিন্দু, বিশেষ বিবাহ আইনে লিঙ্গ-নিরপেক্ষতার ব্যাখ্যা। এই বিশেষ বিবাহ আইন একটি ধর্মনিরপেক্ষতার আইন যা আন্তঃবর্ণ এবং আন্তঃধর্মীয় বিয়ের সুবিধার্থে তৈরি করা হয়েছে। আবেদনকারীরা জানতে চেয়েছেন সমকামী বিবাহকে কেন এই বিশেষ বিবাহ আইনে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না?
কারা পক্ষে ও বিপক্ষে
এর প্রেক্ষিতে বিচারপতি কউল বলেছেন, অ-বিষমকামী দম্পতিদের বিয়ের আইনি স্বীকৃতি বিবাহের সমতার দিকেই পদক্ষেপ। কিন্তু, সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতিরাই গোটা বিষয়টি সংসদের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। সঙ্গে জানিয়েছেন, আইনসভা বা সংসদকেই সমকামী বিয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এপ্রিল এবং মে মাসে এই মামলায় ১০ দিন ধরে যুক্তিতর্ক শুনেছে শীর্ষ আদালত। সমতার অধিকার থেকে শুরু করে গোপনীয়তার অধিকার, বিয়ের প্রদত্ত আইনি সুবিধা এবং অধিকার, শিশুদের ওপর সমলিঙ্গে বিয়ের প্রভাব নিয়ে নানা যুক্তি আদালতে পেশ করা হয়েছে। আবেদনকারীদের বিরোধিতাকারীদের মধ্যে রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার, জাতীয় শিশু অধিকার সংস্থা এনসিপিসিআর এবং ইসলামিক পণ্ডিতদের সংগঠন জমিয়ত-উলামা-ই-হিন্দ-সহ অন্যান্যরা।
দত্তক নেওয়ার অধিকার
সমকামী দম্পতিকে সন্তান দত্তক নেওয়ার অধিকার দেয়নি আদালত। এই ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকার কমিটি গঠন করতে পারে বলেই আদালত জানিয়েছে। এই ব্যাপারে বিচারপতি শ্রীপতি রবীন্দ্র ভাট জানান, আদালত সমকামী দম্পতিদের জন্য কোনও আইনি কাঠামো তৈরি করতে পারে না। সেটা সংসদের কাজ। কারণ, আইন তৈরি করতে গেলে বিভিন্ন দিক বিবেচনা করতে হয়। তাই সরকারকে সমকামী দম্পতিদের এমন অধিকার দিতে আদালত বাধ্য করতে পারে না। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সমকামী বিয়ের পক্ষে থাকলেও তিনিও স্বীকার করে নিয়েছেন, যে আদালত আইন তৈরি করতে পারে না। আইনের ব্যাখ্যা করতে পারে মাত্র।
আরও পড়ুন- লোকসভার আগে পাঁচ রাজ্যে অ্যাসিড টেস্ট, কেন কৃষকদের ভোট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ?
আদালতে কেন্দ্র জানিয়েছে
এর আগে, গত ৩ মে কেন্দ্রীয় সরকার সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছে, সমলিঙ্গ যুগলরা যে সমস্ত প্রশাসনিক সমস্যার সম্মুখীন হন, সেসব সমাধানের জন্য মন্ত্রিপরিষদের এক সচিবের নেতৃত্বে বিশেষ কমিটি তৈরির কথা ভাবছে সরকার। শীর্ষ আদালত সেই কমিটিকেই পদক্ষেপ করতে বলেছে।