প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রবিবার (১৭ ডিসেম্বর) গুজরাটে নবনির্মিত সুরাত ডায়মন্ড বোর্স (এসডিবি) উদ্বোধন করবেন। যা একটি একক প্রকল্পে বিশ্বের বৃহত্তম কর্মস্থান বলে দাবি করা হয়েছে। কমপ্লেক্সটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেন্টাগনকেও এই ব্যাপারে পিছনে ফেলে দিয়েছে। এখানে মোট ৪,২০০টি হিরে ব্যবসার অফিস থাকবে। এই ব্যাপারে এসডিবি সভাপতি নাগজিভাই সাকারিয়া দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, 'বর্তমানে, ১৩৫টি অফিস আছে। আমরা আশাবাদী যে উদ্বোধনের পরে অন্যরাও তাদের অফিসগুলো এখানে খুলবে। আগামী বছরের মাঝামাঝি নতুন অফিসগুলো খোলা শুরু হবে। এখন পর্যন্ত, মুম্বই হিরের সবচেয়ে বড় ব্যবসার কেন্দ্রস্থল ছিল। এই নতুন কমপ্লেক্সের উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে, সুরাতও হিরে এবং গয়নার সবচেয়ে বড় বাণিজ্যকেন্দ্র হয়ে উঠবে।'
হিরের বাজার
সুরাত ডায়মন্ড বোর্স (এসডিবি) হিরার ব্যবসাকে, অর্থাৎ হিরে কাটা এবং পালিশ করার কেন্দ্রস্থল মুম্বই থেকে সুরাতে প্রসারিত এবং স্থানান্তরিত করার পরিকল্পনা করেছে। সুরাতের হিরে ব্যবসার বাজার বর্তমানে মাহিধরপড়া হিরা বাজার এবং ভারাছা হিরা বাজারে আছে। সেখানে ব্যবসায়ীরা প্রায় কোনও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই রাস্তায় দাঁড়িয়ে লেনদেন করেন। হিরা ব্যবসার একটি বড় অংশ অবশ্য মুম্বইতে বান্দ্রা কুরলা কমপ্লেক্সে (বিকেসি) হয়। সেখানে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের জন্য সুবিধা আছে। হিরা শিল্পের সংগঠনের সূত্রে জানা গিয়েছে যে, মুম্বইয়ে জায়গা কম। অফিস পাওয়া বিরাট সমস্যা। জমিজমার দাম বেশ বেশি। এছাড়াও, মুম্বইতে ব্যবসা করা হিরের একটি বড় অংশ সুরাতে তৈরি হয়। যেখান থেকে স্থানীয় আঙ্গাদিয়ারা ট্রেনে করে মুম্বইতে নিয়ে যান ব্যসায়ীরা। সময় লাগে সাড়ে চার ঘণ্টারও বেশি।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় অফিস স্পেস
এসডিবি ড্রিম (ডায়মন্ড রিসার্চ অ্যান্ড মার্কেন্টাইল), সুরাত শহরে ৬৬ লক্ষ বর্গফুট জায়গার ওপর তৈরি হয়েছে। দিল্লি-ভিত্তিক মরফোজেনেসিস (যা এই বর্সের নকশা করেছে)-এর নথি অনুসারে, এটি বিশ্বের বৃহত্তম অফিস। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেন্টাগনের চেয়েও বড়। মরফোজেনেসিস গিফট সিটি, গান্ধীনগরে বিএসই টাওয়ার এবং আহমেদাবাদের জাইডাস কর্পোরেট পার্কের নকশাও করেছে। এক ছাদের নীচে হিরের ব্যবসা চলবে সুরাত ডায়মন্ড বোর্সের কমপ্লেক্সে। এখানে নয়টি টাওয়ার আছে। প্রতিটিতে গ্রাউন্ড প্লাস ১৫টি ফ্লোর আছে। সমস্ত হিরে-সম্পর্কিত কাজকর্ম, পালিশ, কেনা, বিক্রি, নকশা তৈরি, নকশা অনুযায়ী বানানো, শংসাপত্রের সংস্থা- সব পাওয়া যাবে। এছাড়াও, আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় ক্রেতাদের জন্য হিরের গয়নার ২৭টি খুচরো দোকানও থাকবে। নিরাপত্তা বজায় রাখতে এসডিবির ভিতরে এবং বাইরে বিভিন্ন জায়গায় ৪,০০০টিরও বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এই ব্যাপারে এসডিবি ব্যবস্থাপনা কমিটির একজন সদস্য বলেন, 'কর্মীদের বায়োমেট্রিক বিবরণ নেওয়া হবে। তারপরে তারা কমপ্লেক্সে প্রবেশ করতে পারবেন।'
আরও পড়ুন- শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমি মামলা, বিরাট সাফল্য হিন্দুত্ববাদীদের, কী জানাল হাইকোর্ট?
গভর্নিং বডি
এসডিবি কোর কমিটিতে আছেন সাত সদস্য। যার চেয়ারম্যান সুরাটের বৃহত্তম হিরা সংস্থা কিরণ জেমসের মালিক বল্লভভাই লাখানি। অন্যদের মধ্যে আছেন ধনেরা হিরার মালিক অরবিন্দ ধনেরা, শ্রী রামকৃষ্ণ এক্সপোর্টসের গোবিন্দ ঢোলাকিয়া, ভেনাস জুয়েলসের সেবন্তীভাই শাহ, কাপুরত্নের দিয়ালভাই ভাঘানি, ধর্মানন্দন হিরার লালজি প্যাটেল এবং সাভানি ব্রাদার্স ডায়মন্ড ফার্মের মালিক মথুরভাই সাভানি। এরা প্রত্যেকেই বিখ্যাত হিরে ব্যবসায়ী। তার মধ্যে লালজি প্যাটেল হলেন সেই হিরে ব্যবসায়ী, যিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মনোগ্রামযুক্ত স্যুট কিনেছিলেন। সুরাট ডায়মন্ড বার্সের সাধারণ কমিটির সদস্য দীনেশ নাভাদিয়া বলেন, '৪,২০০টি অফিসের সবগুলোই বিক্রি হয়ে গেছে। এসডিবি ১ লক্ষেরও বেশি মানুষকে সরাসরি কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেবে।' এসডিবি সূত্রে খবর, কমিটি রাজ্য সরকারের থেকে ৬২৭ কোটি টাকায় জমি কিনেছিল। প্রকল্পের নকশা করার জন্য মরফোজেনেসিসকে নিয়োগ করেছিল। নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আহমেদাবাদের সংস্থা পিএসপি প্রজেক্টসকে। নির্মাণটি ডিসেম্বর ২০১৭ সালে শুরু হয়। অতিমারীর বাধা অতিক্রম করে মাত্র পাঁচ বছরে শেষ হয়েছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩,২০০ কোটি টাকা। থিম্যাটিক ল্যান্ডস্কেপিং 'পঞ্চতত্ত্ব' থিমের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে এসডিবি। যার থিমের মধ্যে রয়েছে প্রকৃতির পাঁচটি উপাদান (বাতাস, জল, আগুন, পৃথিবী এবং আকাশ)। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী এবং উত্তরপ্রদেশের বর্তমান রাজ্যপাল আনন্দীবেন প্যাটেল এসডিবির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন।