সুপ্রিম কোর্ট সোমবার কেন্দ্রীয় সরকারকে বলেছে, গ্যাংস্টার এবং ১৯৯৩-এর মুম্বই ধারাবাহিক বিস্ফোরণে দোষী আবু সালেমকে ২৫ বছর কারাদণ্ডের পর ছেড়ে দিতে হবে। তাঁকে পাঠিয়ে দিতে হবে পর্তুগাল। কারণ, পর্তুগালকে তেমনই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ভারত সরকার।
আবু সালেমের বিরুদ্ধে অভিযোগ কী?
১৯৯৫ সালের ৭ মার্চ প্রদীপ জৈন নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগ ওঠে আবু সালেমের বিরুদ্ধে। অর্থ লেনদেন সংক্রান্ত কারণে এই হত্যা। সালেমের বিরুদ্ধে ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির নানা ধারায় মামলা হয়। অর্থ আইনে মামলা হয়। টাডা-তেও মামলা হয়। দ্বিতীয় মামলাটি হল মুম্বই বিস্ফোরণ। এক-৫৬ রাইফেল, হ্যান্ড গ্রেনেড মজুত, বণ্টন করা, পাচার করা। একই ভাবে রাইফেলের ম্যাগাজিনের বাক্সও পাচার করার অভিযোগ ওঠে। একটি মারুতি ভ্যানে গুজরাতের গোডাউন থেকে মুম্বই নিয়ে আসে সালেম। গাড়িটিতে এই সব রাখার জন্য গোপন জায়গা ছিল। এই সবই হয়েছিল বিস্ফোরণ সংক্রান্ত একটি ষড়যন্ত্রমূলক বৈঠকের পর। এর পর সালেম মুম্বই ছাড়ে এবং পর্তুগালে পৌঁছে যায়। পকেটে পাকিস্তানি পাসপোর্ট, তাতে নাম কিন্তু অন্য। ১৯৯৩ সালের ১৫ অক্টোবর টাডা আদালত সালেমকে অপরাধী ঘোষণা করে। তার পর, তার বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য পরোয়ানা জারি করা হয়। ২০০২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ইন্টারপোল সালেমের বিরুদ্ধে রেড কর্নার নোটিস জারি করে।
ক্রমে প্রত্যর্পণ
২০০২-এর ১৩ ডিসেম্বর। ভারত সরকার প্রত্যর্পণের আবেদন জানায় পর্তুগালকে। বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা এই কাজটি করেন। স্বাভাবিক ভাবেই আন্তর্জাতিক আইনের প্রসঙ্গ তুলে রীতিপদ্ধতি মেনে এবং সালেমের বিরুদ্ধে অভিযোগের খতিয়ান তুলে ধরে এটা করা হয়। এর পর ২০০২-এর ১৭ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিশ্রুতিও দেয় যে, যদি সালেমকে ভারতে পাঠানো হয়, তা হলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে না এবং তাকে যে কারাদণ্ড দেওয়া হবে, তার মেয়াদ ২৫ বছরের বেশি হবে না। সেই সময় কেন্দ্রে ক্ষমতায় বিজেপি, তৎকালীন উপ-মুখ্যমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণী ভারত সরকারের হয়ে এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ২৫ মে, ২০০৩। লিসবনে ভারতীয় দূতাবাসের তরফে এমনও বলা হয়েছিল যে, সালেমকে যদি ভারতে পাঠানো হয়, তা হলে যে সব অপরাধের নিরিখে তার প্রত্যর্পণ চাওয়া হয়েছে, সেগুলি ছাড়া আর কোনও মামলায় তার বিচার করা হবে না। এবং অন্য কোনও দেশে তাকে পাঠানো হবে না।
পর্তুগালে কী ঘটেছিল?
২০০৩ সালের ২৮ মার্চ, পর্তুগালের ন্যায়বিচার মন্ত্রক সালেমের প্রত্যর্পণে সিলমোহর দেয়। তবে, ভারত সরকারের তরফে যে সব অপরাধের প্রসঙ্গ তুলে আবেদন করা হয়েছিল, সেগুলির নিরিখেই এই ছাড়পত্র দেওয়া হয়। লিসবনের কোর্ট অফ আপিলে সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল সালেম। তবে, তারা সেটি গ্রাহ্য করেনি। সেই সঙ্গে বলেছিল, সালেমকে মৃত্যুদণ্ড অথবা আজীবন কারাদণ্ড দেওয়া যাবে না। অর্থাৎ যে প্রতিশ্রুতি ভারত দিয়েছিল আগেই। পর্তুগালের সুপ্রিম কোর্টও সেই রায়তেই সিলমোহর দেয়। সেটা জানুয়ারির ২৭ তারিখ।
কী কী অপরাধে বিচারের জন্য পর্তুগাল আদালত ছাড়পত্র দিয়েছিল?
অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র (ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা ১২০-বি), খুন (ধারা ৩০২), খুনের চেষ্টা (ধারা ৩০৭) ইত্যাদি এবং টা়ডা আইনের তিন নম্বর এবং চার নম্বর ধারায় বিচারের ছাড়পত্র দেওয়া হয়।
এর পর কী হল?
পর্তুগাল থেকে ভারতে সালেমের প্রত্যর্পণ ঘটে ২০০৫ সালের ১১ নভেম্বর। গ্রেফতার করা হয় ২৪ নভেম্বর। এর পর প্রত্যর্পণের শর্ত ভঙ্গ করা হয়েছে এমন অভিযোগ তুলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় সালেম। ২০১০-এর ১০ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্ট তার রায়ে বলে, পর্তুগাল বেশ কয়েকটি নির্দিষ্ট অপরাধ গণ্য করেনি। মুম্বই হাইকোর্টে যেগুলির ভিত্তিতে অভিযোগ করা হয়েছিল। কোর্ট রায়ে এমনও বলে যে, পর্তুগালকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা হয়নি। আদালত সালেমের দুটি আবেদন নিয়ে বিচারবিশ্লেষণ করেছিল। প্রথমত, প্রদীপ জৈন সংক্রান্ত মামলা, এবং দ্বিতীয়টি বিস্ফোরণ মামলায় বম্বে হাইকোর্ট যে আজীবন কারাদণ্ডের যে রায় দিয়েছিল, তার বিরুদ্ধে।
সালেমের আবেদন নিয়ে ভারত সরকার কী বলেছিল? ১০ নভেম্বর, ২০৩০-এ গিয়ে ২৫ বছর শেষ হচ্ছে। এই সময়কালের কথা বলে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সরকার, সে সম্পর্কে কোনও প্রশ্ন তখনই উঠবে, যখন ২৫ বছর পরেও সালেমকে মুক্তি দেওয়া হবে না।
আরও পড়ুন- পাক চরবৃত্তি: পদ্ম নিশানা করতেই মুখ খুললেন প্রাক্তন উপ-রাষ্ট্রপতি
আদালত রায়ে কী বলেছিল?
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এস কে কল এবং বিচারপতি এম এম সুন্দ্রেশের বেঞ্চ বলেছিল, আপরাধের গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে সালেমকে সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও সুবিধা নেওয়া যায় না, সাজা বেঁধে দেওয়া যায় না। সেই সঙ্গে আদালত যোগ করে, ভারত সরকারকে ২৫ বছর পর সালেমকে ছেড়ে দিতে হবে। কারণ তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেই অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকার যেন রাষ্ট্রপতির কাছে ধারা ৭২-এর প্রয়োগের জন্য সুপারিশ করে।
Read full story in English