কেরলের হাদিয়া, ২০১৭ সালে একজন মুসলিম পুরুষকে বিয়ে করে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন। সেই বিয়ে এবং ধর্মান্তরকরণ নিয়ে আইনি মামলা হয়। শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, হাদিয়া তাঁর স্বামীকে তালাক দিয়েছেন। পুনরায় বিয়ে করেছেন। সাম্প্রতিক এক ভিডিওতে তিনি বলেছেন যে তাঁর বাবা-মা এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবগত ছিলেন। ভিডিওটি তাঁর বাবা কেএম অশোকান কেরল হাইকোর্টে একটি হেবিয়াস কর্পাস পিটিশন দায়ের করার দুই দিন পরে সামনে এসেছে।
অশোকানের অভিযোগ
অশোকান অভিযোগপত্রে বলেছেন, তিনি তাঁর মেয়েকে খুঁজে পাচ্ছেন না। অশোকন বলেন, তাঁরা হাদিয়ার সঙ্গে ফোনে কথা বলতে চান। কিন্তু, হাদিয়া কোথায়, তা জানতে পারেননি। হাইকোর্ট আগামী সপ্তাহে আবেদনটি বিবেচনা করবে। তাঁর মেয়ে ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়ে একজন মুসলিম পুরুষকে বিয়ে করার ইচ্ছা প্রকাশ করার কিছু পরে, ২০১৭ সালে হাদিয়ার বাবা হাইকোর্টে একটি হেবিয়াস কর্পাস পিটিশন দাখিল করেছিলেন। মামলাটি ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে রয়েছে। এই ঘটনা জঙ্গি মডিউলের 'লাভ জিহাদ' কি না, জানতে তদন্ত শুরু করেছে কেন্দ্রীয় সরকারের সন্ত্রাসদমন শাখা ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেটিভ এজেন্সি (এনআইএ)।
হাদিয়া মামলা
হাদিয়ার আসল নাম কেএম আখিলা। বাড়ি কেরলের কোট্টায়ামে। জন্ম এক হিন্দু পরিবারে। ২০১০ সালে তিনি তামিলনাড়ুর সালেমের শিবরাজ হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন। সেখানে কিছু মুসলিম ছাত্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব হওয়ার পর, ধর্মের প্রতি তাঁর আগ্রহ বেড়ে যায়। হাদিয়া ফোনে ধর্মীয় উপদেশ শুনতে শুরু করেন। রমজানের সময় উপবাসের মত কিছু আচার-অনুষ্ঠানে অংশ নেন। ২০১৫ সালে, তিনি কোচির একজন আইনজীবীর দ্বারা প্রত্যায়িত একটি হলফনামা পেয়ে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, কারও কাছ থেকে কোনও বাধ্যবাধকতা ছাড়াই একজন মুসলিম হিসেবে বসবাস করছেন। হাদিয়া তাঁর বাবা-মাকেও ধর্মান্তরিত হতে রাজি করানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, তাঁরা রাজি না-হওয়ার পরে হাদিয়া ২০১৬ সালে বাড়ি ছেড়ে চলে যান এবং এক বন্ধুর সঙ্গে থাকতে শুরু করেন।
আরও পড়ুন- মোদীভক্ত পুতিন! রুশ প্রেসিডেন্টের মুখে শুধু ভারতের প্রধানমন্ত্রীর তারিফ
হাদিয়ার জন্য হেবিয়াস কর্পাস
২০১৬ সালের ১২ জানুয়ারি, অশোকান প্রথমে কেরল হাইকোর্টে হেবিয়াস কর্পাস মামলাটি নিয়ে যান। একটি হেবিয়াস কর্পাস পিটিশন হল একটি আইনি রাস্তা। যা কোনও ব্যক্তিকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়ে অবৈধ আটক থেকে রক্ষা করে। তবে, একবার আদালতে হাদিয়া তাঁর বাবা-মায়ের সঙ্গে যেতে রাজি হননি। তিনি ধর্মীয় শিক্ষার সংস্থা সত্য সরণিতে গিয়েছিলেন। আর, স্বামী খুঁজতে মুসলিম বিয়ের সাইটগুলো দেখতে শুরু করেন। এক পুলিশ অফিসারের মতে, এতেই চিন্তায় পড়েন অশোকান। কেরলের কয়েকজন মুসলমান জঙ্গি ইসলামিক স্টেটে যোগদানের জন্য তাদের স্ত্রীদের নিয়ে ভারত ছেড়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে, একথা জানতে পেরে তিনি কেরল হাইকোর্টে একটি নতুন রিট পিটিশন দাখিল করেন। অশোকানের অভিযোগ, তাঁর মেয়েকেও সিরিয়ায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাদিয়াকে আদালতে হাজির করানো হয়। তাঁর পিতামাতার সঙ্গে থাকতে অস্বীকার করার পরে, হাদিয়াকে আদালত কোচির একটি হস্টেলে পাঠায়।