Advertisment

Explained: ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর নাচ-গানের ভি‌ডিও ভাইরাল, বিতর্কের সুনামি, কেন?

বিতর্ক বিষয়ে আরও খানিক বলার আগে সানা মারিনের উত্থান সম্পর্কে একটু জেনে নেওয়া যাক

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Sanna Marin, Sanna Marin party video, Sanna Marin dancing video, Finland PM party video, Finland news, Finland video, Indian Express

ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর নাচ-গানের ভি‌ডিও ভাইরাল, বিতর্কের সুনামি, কেন?

রাজনীতির ময়দানে যে বয়সে কেউ হাঁটি-হাঁটি পা-পা করে থাকেন এ দেশে, সেই বয়সেই তিনি ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হয়ে গিয়েছেন। চাইলে মডেল হতে পারতেন বোধ হয়। শরীরের গঠন এমনই নজরকাড়া। আর ব্যক্তিত্ব? তেমনই দাপুটে। তাঁর নাম সানা মারিন। এখন বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে আলোর ছটা ছড়াচ্ছেন। বিতর্কের কারণটা কী, হ্যাঁ, সেটা বলতেই এ লেখা। রূপসী, ৩৬ বছরের এই প্রধানমন্ত্রীর পার্টি-হুল্লোড়ের ভিডিও ফাঁস হয়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ব্যাস হইচই পড়ে গিয়েছে।

Advertisment

সেকি প্রধানমন্ত্রী তো, তিনি এমন করতে পারেন না মোটেই। স্বঘোষিত নীতিবাগীশের দল শুধু এ দেশে নেই, ফিনল্যান্ডেও আছে। এবং তাঁদের সংখ্যাটা ফিনফিনে নয়, মোটা মাত্রায়। তাই প্রধানমন্ত্রীর অপরূপ মুখণ্ডলটি যেন সাদাটে। হাসি উড়ে গিয়েছে। তিনি তো এর জন্য একেবারেই তৈরি ছিলেন না। প্রধানমন্ত্রী সব মন্ত্রণা ছেড়ে, এখন ভিডিও-বাণের জেরে যায়-যায় মান বাঁচাতে মাঠে নেমে পড়েছেন। বলেছেন, আরে মশাই এ সব পার্সোনাল ব্যাপার, এ নিয়ে এত হইচই করার কি আছে! প্রধানমন্ত্রী বলে কি মানুষ নয়, ব্যক্তিগত জীবন কি থাকবে না! কি পার্টিতে একটু নাচতে পারেন না প্রধানমন্ত্রী, একটু মদ্য পান করতে পারেন না কি!

এ তো দেখছি মহা জ্বালা হল! কিন্তু ভবি ভোলবার নয়, বিতর্ক সহজে ছাড়বার নয়। নেটিজেন থেকে সিটিজেন—ছিছিক্কার। তবে অনেকে অবশ্য মারিনের পক্ষে নেমেছেন। তাঁরা ব্যক্তিগত স্পেস হরণ করার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। নেতাদের ব্যক্তিগত জীবন থাকতেই পারে, ফলে এই চিৎকারের মূল্য মামুলি, বলছেন তাঁরা। কিন্তু সুন্দরী প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এমন লোপ্পা বল পাওয়া, ছক্কা মারার সুযোগ কি আর হেলায় হারানো যায়, ফলে কাদাবাজি থামছে না। আমি না-সুন্দর, না প্রধানমন্ত্রী, না সফল, গুণের বিচারে তো একেবারে অশ্বডিম্ব, ফলে এই তো সুযোগ, নিজেকে জানানোর, সুযোগের সদ্ব্যবহার চেটেচুটে তো করতেই হবে। চলো ভাই, হেঁইহো বলে নৌকো ভাসাই তাই।
আগেও বিতর্কে জড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মারিন।

গত বছর কোভিড আক্রান্ত ফিনিশ বিদেশমন্ত্রী পেকা হাভিস্টোর সংস্পর্শে আসার পরও নাইট ক্লাবে গিয়েছিলেন। তা নিয়ে তীব্র তীর ছুটে এসেছিল তাঁর দিকে। হইহই করে উঠেছিল ফিনল্যান্ডের সংবাদ মাধ্যম।

বিতর্ক বিষয়ে আরও খানিক বলার আগে সানা মারিনের উত্থান সম্পর্কে একটু জেনে নেওয়া যাক
২০১৯ সাল। সানা মারিনের বয়স তখন ৩৪, ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন। তিনিই পৃথিবীর সবচেয়ে কম বয়সি প্রধানমন্ত্রী হলেন। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন-এর এই রেকর্ড ভেঙে গেল।
ফিনল্যান্ডের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদে আন্টি রিনের বদলি হিসেবে বেছে নিয়েছিল। দু’সপ্তাহ ধরে চলা ডাক ধর্মঘট মোকাবিলায় ব্যর্থতার অভিযোগে দীর্ণ আন্টি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন। ডিসেম্বরের ৩ তারিখে। মারিন তখন পরিবহণমন্ত্রী। হঠাৎই তাঁর সামনে সর্বোচ্চ কুরসির দরজাটা খুলে গেল।


মারিনের যখন ২০ বছর বয়স, রাজনীতিতে তাঁর প্রবেশ। উত্থান হতে থাকে উল্কার বেগে। দু’বছর পরই হেলসিঙ্কির উত্তরের শহর টামপেরে-র কাউন্সিল পদের লড়াইয়ে নামলেন। এমপিও হলেন। দলের অনেকেই তখন থেকেই বলাবলি করতে শুরু করেন, এ মেয়ে একদিন প্রধানমন্ত্রী হবে। তাঁদের সেই ভাবনা যে বাস্তবের মাটিতে ফুল এত দ্রুত ফোটাবে, হয়তো তাঁরাও কল্পনা করেননি।
যা হোক, মারিন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর, তাঁকে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। কোভিড সেই কঠিন কালখণ্ডের নাম। তার পর ইউক্রেনে রুশ হামলা। ফিনল্যান্ডের উপরেও যেন রুশ নিশ্বাস পড়তে শুরু করে। কিন্তু মারিন রাশিয়া বিরোধী কড়া অবস্থান থেকে সরেননি। ন্যাটোয় যোগ দেওয়ার ব্যাপারে ফিনল্যান্ড তো অগ্রবর্তী।
আবার বিতর্কে ফেরা যাক।


কোভিড আক্রান্তের সংস্পর্শে এসেছেন জানার পরও নাইটক্লাবে যাওয়ায় মারিন ফেসবুকে ক্ষমা প্রার্থনা করে একটি পোস্ট করেন। বলেন, তিনি প্রকৃতই দুঃখিত। এবার যে ভিডিওটি লিক করে সোশ্যাল মিডিয়া কাঁপাচ্ছে, সেটি সম্পর্কে কয়েকটি কথা বলা যাক আরও। ভিডিওয় দেখা যাচ্ছে-- মারিন মদ্যপান করছেন, নাচও করছেন, পোজ দিচ্ছেন। সঙ্গে রয়েছে তাঁর এক দল বন্ধু। যে বন্ধুদের প্রায় সকলেই পরিচিত। সেলিব্রিটিও কয়েক জন। ফিনিশ পপ গানের সঙ্গে পান-নৃত্যে মারিনরা মাতোয়ারা। মারিন এ সব কিছুতে অন্যায় কিছু দেখছেন না। তিনি বলেছেন, অনৈতিক বা বেআইনি কিছু তাঁরা মোটেই করেননি। সবচেয়ে কড়া সুরে আক্রামণটা এসেছে বিরোধী দলের নেতা রিকা পুরা-র তূণ থেকে। বিবিসি-কে তিনি বলছেন, মারিন ড্রাগ সেবন করে এই কাণ্ডটি করেছেন। তাঁর দাবি, মারিন ড্রাগ নিয়েছেন কিনা, সে পরীক্ষা করা হোক। মারিন বলছেন, তিনি ড্রাগ কোনও দিনই খাননি। তবে প্রয়োজনে ওই পরীক্ষায় তিনি মোটেই পিছপা হবেন না।

Finland PM Sanna Marin
Advertisment