চণ্ডীগড় পুলিশ সোমবারই (১২ সেপ্টেম্বর) চিনা নাগরিক ওয়ান চেংহুয়া (৩২) এবং আরও ২০ জনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের বিরুদ্ধে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে তাত্ক্ষণিক ঋণ পাইয়ে দেওয়ার নামে ব্ল্যাকমেলিং এবং অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। চণ্ডীগড় পুলিশ জানিয়েছে, একটা বিরাট চক্র এভাবে অ্যাপক কাজে লাগিয়ে তোলাবাজি চালাচ্ছিল। চণ্ডীগড় সাইবার সেলের আধিকারিকদের মতে, এই চক্রের লোকজন প্রথমে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে তাত্ক্ষণিক ঋণ নেওয়ার জন্য লোকেদের প্রলুব্ধ করত। তারপর ঋণের টাকা উদ্ধারের নামে তোলাবাজি চালাত। করোনা অতিমারি চলাকালীন এই চক্র বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেছিল।
কীভাবে তাত্ক্ষণিক ঋণ দেওয়ার কাজ করছিল এই মোবাইল অ্যাপ?
এই মোবাইল অ্যাপগুলো ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত উচ্চহারে সুদের ভিত্তিতে তাত্ক্ষণিক ঋণ দিচ্ছিল। অল্প পরিমাণ ঋণ দিচ্ছিল। গ্রাহক যাচাইয়ের মত ব্যাংকগুলোর কঠোর পদ্ধতি মানছিল না। যে ব্যক্তি আবেদনটি ইনস্টল করছিলেন এবং ঋণ চাইছিলেন, তাঁকে কেবল একটি অনলাইন ফর্ম পূরণ করতে হচ্ছিল। ঋণ পেতে, মোবাইল ব্যবহারকারীকে মোবাইল ফোনের পরিচিতি, ফোটো, ভিডিও এবং অন্যান্য সমস্ত ডিজিটাল সামগ্রী অ্যাক্সেস করার জন্য অ্যাপটিকে অনুমতি দিতে হচ্ছিল। কিছু মোবাইল অ্যাপ আবার দৈনিক এবং সাপ্তাহিক ভিত্তিতে সুদ উদ্ধার করছিল।
এই অ্যাপগুলো কি অবৈধ?
চণ্ডীগড়ের সেন্ট্রাল ডিটেকটিভ ট্রেনিং স্কুলের (সিডিটিএস) সাইবার ফ্যাকাল্টি প্রধান গুরচরণ সিং বলেছেন, 'এই মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনগুলোর মধ্যে ৯০ শতাংশই অবৈধ। এদের ওপর ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। এই অ্যাপ্লিকেশনগুলো অর্থ আত্মসাতের একটি উপায়। অ্যাপ হ্যান্ডলার, কল সেন্টারের মাধ্যমে কাজ করে। ঋণগ্রহীতাদের ডিজিটাল সামগ্রী অ্যাক্সেস দেয়। যখন ঋণগ্রহীতারা উচ্চ সুদের হারের কারণে টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হন, তখন হ্যান্ডলাররা ওই ঋণগ্রহীতাদের ছবি সমস্ত পরিচিত ব্যক্তিদের কাছে পাঠিয়ে দেয়। এইভাবে ঋণগ্রহীতাদের মানহানি ঘটায়।' চণ্ডীগড়ের গোয়েন্দা প্রধান জানিয়েছেন, এই অ্যাপগুলো অধিকাংশই চিনা সংস্থা। কিন্তু, সেই সব সংস্থার হয়ে যাঁরা ফোন করেন বা কলসেন্টারের কর্মী, তাঁরা সবাই ভারতীয়।
আরও পড়ুন- মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে এবার আরও বড় চমক, শরদ পাওয়ারের ভাইপোকেই ছিনিয়ে নিচ্ছে বিজেপি!
এই প্রবণতা কবে এবং কখন শুরু হয়েছিল? চণ্ডীগড়ে এই ধরনের কতগুলো অভিযোগ রয়েছে?
চণ্ডীগড় সাইবার সেলের আধিকারিকদের মতে, তাত্ক্ষণিক ঋণ দেওয়ার এবং অর্থ আদায়ের এই প্রবণতা করোনা অতিমারি চলার সময় থেকে বেড়েছে। তার পরেও তা অব্যাহত আছে। শুধুমাত্র চণ্ডীগড়েই, মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে তাত্ক্ষণিক ঋণ দেওয়ার নামে ব্ল্যাকমেলিং আর তোলাবাজির ১৫০টিরও বেশি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে, ভারতীয়দেরকে অনলাইন ঋণ প্রকল্পে জড়িয়ে জালিয়াতির অভিযোগে ১১৫ জন নেপালি নাগরিক-সহ দুই চিনা নাগরিককে নেপালে গ্রেফতার করা হয়েছে।
চণ্ডীগড় পুলিশের হাতে ধৃত চিনের নাগরিক ওয়ান চেংহুয়ার পরিচয় কী?
ওয়ান চেংহুয়া ২০১৯ সালে একটি শ্রমির ভিসা নিয়ে ভারতে এসেছিলেন। ২০২১ সালে তাঁর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়। তার পরও তিনি ফিরে যাননি। দিল্লি এবং নয়ডার বিভিন্ন জায়গায় থেকেছেন। চণ্ডীগড় সাইবার সেলের পুলিশ সুপার কেতন বনসাল জানিয়েছেন, চেংহুয়ার সঙ্গে ঝাড়খণ্ডের পারভেজ আলম ওরফে 'জিতু ভাদানা'কেও গ্রেফতার করা হয়েছে। এই পারভেজ আলম আবার অন্তত পাঁচটি তাত্ক্ষণিক মোবাইল ঋণ প্রদানকারী অ্যাপের সঙ্গে জড়িত বলেই জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা।
Read full story in English