রাশিয়ায় পরিস্থিতির নাটকীয় বদল শনিবার সকলের সামনে এসেছে। ভাড়াটে সেনার দল ওয়াগনার গ্রুপ রোস্তভ-অন-ডন শহর দখল করে মস্কোর দিকে অগ্রসর হয়েছিল। ভ্লাদিমির পুতিনের বন্ধু বেলারুশিয়ান প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো ওয়াগনার গ্রুপের কমান্ডার ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের সঙ্গে একটি চুক্তি করার পরেই ভাড়াটে সৈন্যরা পিছু হটে। নয়াদিল্লির অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ফেলো, নন্দন উন্নিকৃষ্ণান এই দ্রুত পরিবর্তনশীল ২৪ জুনের ঘটনাগুলো ব্যাখ্যা করেছেন।
ওয়াগনার গ্রুপের নেতা ইয়েভজেনি প্রিগোজিন তাঁর সাফল্যের জন্য পুতিনের কাছে ঋণী। কেন তিনি নিজের হিতৈষীর বিরুদ্ধে গেলেন?
প্রিগোজিনের অধীনে ওয়াগনার গ্রুপ ইউক্রেনের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে রাশিয়াকে উল্লেখযোগ্যভাবে সাহায্য করেছে। এই ভাড়াটে সেনা গোষ্ঠীটি রাশিয়ার হয়ে সোলেদার এবং বাখমুতের মূল অঞ্চলগুলো দখল করেছিল। ওয়াগনার্সের সামরিক অবদানের কারণে, প্রিগোজিন বেশ জনপ্রিয়তা এবং প্রভাব উপভোগ করেছিলেন।
প্রিগোজিন সমস্ত বেসরকারি সামরিক সংস্থাগুলোকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণে আনার পদক্ষেপের বিরোধিতা করছিলেন। রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু এবং সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের বিরোধ। ইউক্রেনে, সেই সত্য ফুটে উঠেছে। তিনি অনুভব করেছিলেন যে রাশিয়ার সেনাবাহিনী সঠিকভাবে যুদ্ধ পরিচালনা করছে না। আর, তিনি তাঁদের কিছু কৌশলের প্রকাশ্যে সমালোচনা করছিলেন।
রিপোর্টে বলা হয়েছে যে প্রিগোজিন যখন বুঝতে পারেন যে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সমস্ত বেসরকারি সামরিক কোম্পানিকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে, তখন তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে তার কিছু করার সময় এসেছে। ২৪ জুন, যখন তিনি রোস্তভ-অন-ডনে দক্ষিণের সদর দফতর দখল করেন, সেই সময় তার প্রথম দাবিই ছিল শোইগু ও জেনারেল গেরাসিমভকে তার কাছে হস্তান্তর করা।
বেলারুশের প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো বিষয়টিতে জড়িয়ে পড়ার পরে গভীর রাতে একটি চুক্তি হয়েছিল। এই চুক্তিটি কী এবং রাতে ঠিক কী ঘটেছিল?
মস্কোর সময় সন্ধ্যা ৭টায়, বিশ্ব আবিষ্কার করে যে ওয়াগনার গ্রুপ রোস্তভ-অন-ডনের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। অন্তত ওয়াগনার গ্রুপের সেটাই দাবি ছিল। প্রিগোজিন ভিডিওতে দাবি করেন যে তিনি বিমানবন্দর এবং সদর দফতরের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন। প্রায় ১০টার দিকে, তিনি বলেছিলেন যে দক্ষিণ সদর দফতরে কিছু রাশিয়ান জেনারেলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সেখানে তিনি শোইগু এবং গেরাসিমভকে তাঁর কাছে হস্তান্তরের দাবি জানান। পরবর্তীতে তিনি বলেছিলেন যে ওই দু'জনকে তাঁর কাছে হস্তান্তর না-করলে তিনি 'বিচারের জন্য' মস্কো পর্যন্ত কুচকাওয়াজ করবেন।
আরও পড়ুন- টাইটান নিয়ে টানটান উত্তেজনার অবসান, বিস্ফোরণে চূর্ণবিচূর্ণ জলযান, কারণটা কী?
প্রিগোজিন কুচকাওয়াজের ঘোষণা করতেই, পুতিন রাশিয়ান টেলিভিশনের সামনে আসেন এবং প্রিগোজিনকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্ত করেন। প্রিগোজিন পিঠে ছুরি মেরেছেন বলেও অভিযোগ করেন পুতিন। একইসঙ্গে জানিয়ে দেন, নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা হবে। যার অর্থ, সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পুতিনের এই সক্রিয়তার কথা জানতে পেরেই সুর নরম করেন প্রিগোজিন।