পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট ব্রিকস বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) আরও ছয়টি দেশকে জোটে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। যা একদিকে চিনের ক্রমবর্ধমান আধিপত্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করার পাশাপাশি 'গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বর' হওয়ার দাবিকে শক্তিশালী করতে পারে। এমনিতে BRICS ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চিন এবং দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে গঠিত। দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে শীর্ষ সম্মেলনে ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, সৌদি আরব, আর্জেন্টিনা, মিশর এবং ইথিওপিয়াকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। জানুয়ারিতে তাদের সদস্যপদ শুরু হবে।
'উন্নয়নশীল বিশ্বের মুখপাত্র'
নতুন সদস্যদের যোগ দেওয়ার পর উন্নয়নশীল বিশ্বের একজন মুখপাত্র হিসেবে ব্রিকস গোষ্ঠীর মর্যাদা আরও বাড়বে। ব্রিকস বর্তমানে বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ৪০% এবং বিশ্বের মোট জিডিপির এক চতুর্থাংশেরও বেশির প্রতিনিধি। এটি বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যার প্রতিনিধি, বিশ্বের তিনটি বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং ইরান থাকবে এই গোষ্ঠীতে।
পলিসি থিংক ট্যাংক গেটওয়ে হাউসের বিশিষ্ট ফেলো এবং একজন প্রাক্তন ভারতীয় কূটনীতিক রাজীব ভাটিয়া এর আগে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছিলেন যে ব্রিকসের দুটি মৌলিক প্রবণতা হল:- 'বিশ্বে মার্কিন বিরোধী মনোভাবের কারণে বিভিন্ন দেশ যখন গোষ্ঠীবদ্ধ হতে চাইছে, সেই চাহিদাকে ব্রিকস ব্যবহার করতে পারে। দ্বিতীয়ত, বহুমুখিতার ইচ্ছাও প্রবল। এমন দেশগুলোর জন্য ব্রিকস আদর্শ মঞ্চ হয়ে উঠতে পারে।'
২০০৯ সালে ব্রিকসের গঠন এই ধারণার দ্বারা চালিত হয়েছিল যে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত এবং চিনের চারটি উদীয়মান বাজার বিশ্বের ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক শক্তিকেন্দ্র হবে। একবছর পরে তাতে যোগ দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাও। যদিও ব্রিকসের অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতা মিশ্রিত, ইউক্রেনের যুদ্ধ- যা একদিকে পশ্চিমকে একত্রিত করেছে এবং অন্যদিকে চিন-রাশিয়া অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী করেছে- তা ব্রিকসকে একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী শক্তিশালী মঞ্চে পরিণত করেছে, যা পশ্চিমের ভূ-রাজনৈতিক দৃষ্টিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে। গ্রুপ অফ ৭ এবং বিশ্বব্যাংকের মত পশ্চিমের নেতৃত্বাধীন মঞ্চের পালটা হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে।
ব্রিকসের নতুন সদস্যরা
ব্রিকসের সিদ্ধান্তগুলো সর্বসম্মত, অর্থাৎ যে কোনও পদক্ষেপের জন্য সকল সদস্যদের সম্মত হতে হবে। এর মূল সদস্যদের মধ্যে, যেখানে রাশিয়া পশ্চিমের দেশগুলোর প্রতিপক্ষ। চিন-মার্কিন সম্পর্ক ঐতিহাসিক তলানিতে ঠেকেছে। ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ ব্রিকসের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। চিনও এই গোষ্ঠীর সম্প্রসারণের চালাচ্ছে। এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে ব্রিকস কর্মকর্তাদের বৈঠকের পর, চিনের বিদেশ দফতর বলেছিল, 'সদস্য তথা গোষ্ঠীর সম্প্রসারণ ব্রিকসের মূল এজেন্ডার অংশ হয়ে উঠেছে।'
ইরানের সঙ্গে পশ্চিমী দেশগুলোর সম্পর্কের টানাপোড়েন রয়েছে। ব্রিকসে চিন-রাশিয়ার একটি শক্তিশালী ছাপ রয়েছে। আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরব এবং ইরান এই একই গোষ্ঠীর অংশ হওয়ায় তা লক্ষণীয় ব্যাপার হয়ে উঠেছে। চিন আবার সৌদি আরবের তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা এবং সম্প্রতি তেহরান ও রিয়াদের মধ্যে একটি শান্তি চুক্তির মধ্যস্থতা করেছে। যদিও সৌদি আরব ঐতিহ্যগতভাবে মার্কিন মিত্র, তবে এটি ক্রমশ আগের অবস্থান থেকে সরে আসছে। ব্রিকসের সদস্যতা সৌদির সেই নতুন অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। ইরান এবং রাশিয়ার জন্য, এই সদস্যপদটি পশ্চিমের কাছে একটি সংকেত যে তাদের এখনও বিশ্বব্যাপী বন্ধু রয়েছে। মিশর এবং ইথিওপিয়া উভয়েরই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে। আর্জেন্টিনা একটি কঠিন অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি, ব্রিকস থেকে আর্থিক সাহায্যের আশা নিয়ে তারা এই গোষ্ঠীতে যুক্ত হচ্ছে।
আরও পড়ুন- মোদীদের ব্রিকস গোষ্ঠীকে রীতিমতো ভয় পাচ্ছে ইউরোপ, আমেরিকা? দেখুন, কী সব বলেছে!
ব্রিকস সম্প্রসারণে ভারতের অবস্থান
হিরোশিমায় সাম্প্রতিক জি৭ শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের উপস্থিতি ছিল নজরকাড়া। সেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও একটি অনানুষ্ঠানিক চতুর্মুখী সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন, তা নয়াদিল্লির মার্কিন ঝোঁকের চিহ্ন হিসেবে দেখা হলে, 'পশ্চিম-বিরোধী' ব্রিকসকেও সমান গুরুত্ব দিয়েছে নয়াদিল্লি। ভাটিয়া এর আগে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছিলেন, 'ভারতও সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) অংশ এবং সমস্যা থাকা সত্ত্বেও রাশিয়ার সঙ্গে চিনের সম্পর্ক রয়েছে। যদিও চিন চায় ব্রিকস একটি পশ্চিমী বিরোধী গোষ্ঠী হোক। সেখানে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি হল একটি 'অ-পশ্চিমী' গোষ্ঠী এবং ব্রিকসকে সেভাবেই রাখা। নতুন সদস্যদের মধ্যে, ভারত যখন তাদের সবাইকে উন্নয়নশীল অংশীদার হিসেবে দেখছে, তখন উদ্বেগও বাড়ছে অনেকের মধ্যে। বিশেষ করে যাঁরা বলছেন যে ব্রিকস গোষ্ঠী আরও চিনপন্থী হয়ে উঠতে পারে। যাতে ক্ষুণ্ণ হতে পারে নয়াদিল্লির কণ্ঠস্বর এবং স্বার্থ।