ডিএমকে-র উদয়নিধি স্টালিন (বামদিকে) এবং বিংশ শতকের গোড়ার দিকে তামিলনাড়ুতে 'আত্ম-সম্মান' আন্দোলনের সূচনাকারী পেরিয়ার। (ছবি সূত্র- পিটিআই, বাম এবং উইকিমিডিয়া কমন্স)
ডিএমকে নেতা এবং তামিলনাড়ুর মন্ত্রী উদয়নিধি স্টালিনের বক্তব্য, সনাতন ধর্ম সামাজিক ন্যায়বিচারের বিরুদ্ধে। তাই এটিকে নির্মূল করা উচিত। বিজেপির অভিযোগ, হিন্দু ধর্মের 'সম্পূর্ণ নির্মূল' হল বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার 'প্রাথমিক এজেন্ডা', যার অংশ হল ডিএমকে। মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিনের ছেলে উদয়নিধি বলেন, 'সনাতন মানে কী? এটি চিরন্তন, অর্থাৎ এটি পরিবর্তন করা যায় না। কেউ কোনও প্রশ্ন করতে পারেন না। এটাই এর অর্থ।'
Advertisment
স্ট্যালিনের ছেলে বলেছেন উদয়নিধির অভিযোগ, সনাতন ধর্ম জাতপাতের ভিত্তিতে মানুষেকে বিভক্ত করেছে। পরে, উদয়নিধি এক্স-এ পোস্ট করেছেন, 'আমি পেরিয়ার এবং আম্বেদকরের বিভিন্ন লেখা তুলে ধরতে চাই। তাঁরা সনাতন ধর্ম এবং সমাজের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে গভীর গবেষণা করেছিলেন। আসুন আমরা তামিলনাড়ুর ৩৯টি সংসদীয় আসনে এবং পুদুচেরির একটি অংশে (২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে) জয়ী হওয়ার শপথ নিই। সনাতন ধর্মের পতন হোক। দ্রাবিড়ের জয় হোক।'
ডিএমকের জন্ম যেভাবে তামিলনাড়ুর শাসক দল দ্রাবিড় মুনেত্রা কাজাগাম (ডিএমকে)-এর মধ্যে ইভি রামাস্বামী 'পেরিয়ার'-এর শুরু করা 'আত্ম-সম্মান আন্দোলন'-এর শিকড় আছে। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে জাতপাত ও ধর্মের বিরোধিতা করে এবং সামাজিক মন্দতার বিরুদ্ধে যুক্তিবাদী আন্দোলন শুরু করেছিলেন পেরিয়ার। শুধু তাই নয়, বছরের পর বছর তাঁর আদর্শগুলি তামিলনাড়ুর রাজনীতিকে প্রভাবিত করেছে। সে আন্দোলন থেকে জন্ম নিয়েছে ডিএমকে এবং সর্বভারতীয় আন্না দ্রাবিড় মুনেত্রা কাজাগম (এআইএডিএমকে)-এর মত রাজনৈতিক দল।
বৌদ্ধ প্রভাবিত মায়ানমারে ড. বিআর আম্বেদকর (বামদিকে) এবং পেরিয়ার। (উইকিমিডিয়া কমন্সের ছবি)
Advertisment
'আত্ম-সম্মান' আন্দোলন পেরিয়ার, 'আত্ম-সম্মান' আন্দোলনের (১৯২৫) প্রতিষ্ঠাতা। তিনি দৃঢ়ভাবে হিন্দুদের জাতি ও হিন্দুধর্ম বিরোধী ছিলেন। হিন্দুদের বর্ণ ও লিঙ্গ সম্পর্কিত বিভিন্ন সামাজিক সংস্কারের পক্ষে ছিলেন। তামিল জাতির স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক পরিচয়ের ওপর জোর দিয়ে হিন্দি আধিপত্যের বিরোধিতা করেছিলেন। ১৯৩৮ সালে জাস্টিস পার্টি (পেরিয়ার যার সদস্য ছিলেন) এবং 'আত্ম-সম্মান আন্দোলন' শুরু করেছিল। ১৯৪৪ সালে নতুন দলের নামকরণ হয়েছিল দ্রাবিড় কাজাগম। ডিকে অর্থাৎ পেরিয়ার ছিলেন ব্রাহ্মণ-বিরোধী। কংগ্রেস-বিরোধী এবং আর্য বিরোধী। একইসঙ্গে উত্তর ভারতীয় বিরোধী। তিনি এক স্বাধীন দ্রাবিড় জাতির স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু, তাঁর আন্দোলন বিশেষ জনসমর্থন পায়নি। এমনকী, স্বাধীনতার পর পেরিয়ার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেও অস্বীকার করেন।
আন্নাদুরাইয়ের সঙ্গে বিভেদ ১৯৪৯ সালে পেরিয়ারের ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের অন্যতম সিএন আন্নাদুরাই মতাদর্শগত পার্থক্যের কারণে তাঁর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। আন্নাদুরাইয়ের ডিএমকে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যোগ দেয়। পার্টির মঞ্চ ছিল সামাজিক গণতন্ত্র এবং তামিল সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ। ১৯৬৯ সালে, আন্নাদুরাইয়ের মৃত্যুর পর, এম করুণানিধি ডিএমকের নিয়ন্ত্রণ হাতে নেন।
এআইএডিএমকের জন্ম ১৯৭২ সালে, তাঁর এবং অভিনেতা-রাজনীতিবিদ এমজি রামচন্দ্রনের (এমজিআর) মধ্যে মতপার্থক্যের প্রভাব পড়ে দলের মধ্যে। এমজিআর তাঁর অনুগামীদের নিয়ে এআইএডিএমকে সংগঠন তৈরি করেন। ১৯৭৭ সালে রামচন্দ্রন ক্ষমতায় আসেন। তিনি ১৯৮৭ সালে তাঁর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। এমজিআর কিছুটা যুক্তিবাদী এবং ব্রাহ্মণ-বিরোধী এজেন্ডাকে দুর্বল করে দিয়েছিলেন। যা ছিল পেরিয়ারের সংগঠনের ভিত্তি। তার বদলে রামচন্দ্রন জনগণের সামগ্রিক কল্যাণকে দলীয় আদর্শ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।