চারদিনের সফরে ভারতে এসেছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী আলবেনিজ। ২০১৭ সালের পর এটিই হবে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর প্রথম ভারত সফর। মার্চে ভারতে তাঁর সফরকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ আখ্যা দিয়ে অ্যান্টনি আলবেনিজ জানিয়েছেন, “আমি মার্চ মাসে ভারত সফরে যাচ্ছি। আমরা ভারতে একটি ব্যবসায়িক প্রতিনিধি দল নিয়ে যাব এবং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সফর হবে। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি হবে৷ প্রধানমন্ত্রী মোদী পরের বছর কোয়াড লিডারদের বৈঠকের জন্য অস্ট্রেলিয়া আসবেন এবং তারপরে আমি জি-২০ শীর্ষ বৈঠকে ভারতে যাব।”
পিএমও’র তরফে জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে সাম্প্রতিক অস্ট্রেলিয়া-ভারত অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে মুক্ত বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের সুযোগ এবং ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা করতে অস্ট্রেলিয়ার ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদল মুম্বইতে অস্ট্রেলিয়া-ভারত সিইও ফোরামে অংশগ্রহণ করবে। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী আলবেনিজ ৮ মার্চ হোলির দিন বিকেলেই আহমেদাবাদে এসে পৌঁছান। তিনি ৯ মার্চ মুম্বই সফর সেরে ১০ মার্চ অর্থাৎ আজ রাষ্ট্রপতি ভবনে তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানানো হবে।
অস্ট্রেলিয়ার বিদেশ মন্ত্রক বলেছে যে প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজের সঙ্গে থাকবেন বাণিজ্য ও পর্যটন মন্ত্রী ডন ফারেল, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বসায়িক প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে অ্যান্টনি আলবানিজের আহমেদাবাদ, মুম্বাই এবং নয়াদিল্লি সফর দু’দেশের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারত সফরে এসেছেন সেদেশের বাণিজ্য ও পর্যটনমন্ত্রী ডন ফারেল। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে রয়েছেন এক উচ্চ-পর্যায়ের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলও। এটা স্পষ্ট যে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যেই আলবেনিজের এই সফর।
এখন প্রশ্ন হল ভারতের জন্য এই সফর কতটা গুরুত্বপূর্ণ
উচ্চশিক্ষা, পরিবহন, অর্থ, সম্পদ, স্থাপত্য এবং জ্বালানি খাতে দুই দেশের মধ্যে বিনিয়োগ বাড়ার প্রভূত সম্ভাবনা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর এই সফর ঘিরে। সেদেশের এক উচ্চপর্যায়ের ব্যবসায়িক প্রতিনিধি দলের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রী আলবানিজের সঙ্গেই ভারতে এসেছেন। তিনি মুম্বাইয়ে সিইও ফোরামেও যোগ দেবেন। এটা স্পষ্ট যে এর ফলে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে নতুন ব্যবসায়িক সম্পর্ক তৈরি হবে এবং ভবিষ্যতে তা আরও জোরদার হবে।
ভারত গত বছর অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে যা কার্যকর হয়েছিল। অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও মুক্ত বাণিজ্যের জন্য এই চুক্তির জন্য দীর্ঘ ১১ বছর সময় লেগেছে। ২০১১ সাল থেকে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছিল এবং এই চুক্তিটি ২০২২ সালে হয়। এই চুক্তির আওতায় দুই দেশের মধ্যে ২৩ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য শুল্কমুক্ত হয়েছে। দুই দেশের সম্পর্ক যত মজবুত হবে, বাণিজ্য তত বাড়বে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রতি বছর ভারত থেকে বিপুল সংখ্যক পড়ুয়া অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করতে যায়। শিক্ষা খাতে দুই দেশের সম্পর্ক আরও মজভুত করার লক্ষ্যে এই সফর বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহলমহল। ২০২২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত পরিসংখ্যান অনুসারে, ৫৭ হাজার ভারতীয় অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করছেন। এখন উভয় দেশ অর্থনৈতিক সহযোগিতা চুক্তিতে কাজ করছে এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, কৃষি খাতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে।
সীমান্ত সংঘাত নিয়ে ভারতের সঙ্গে চীনের সম্পর্কের ক্রমশ অবনতি হচ্ছে, অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে। ভারত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে অস্ট্রেলিয়া এবং জাপানের মতো দেশগুলির সাথে অংশীদারিত্ব বাড়াচ্ছে ৷ অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের মতে, অস্ট্রেলিয়া চিনের সঙ্গে বাণিজ্য কমিয়ে আনছে এবং এমন পরিস্থিতিতে ভারতের সঙ্গে নতুন করে বাণিজ্য বাড়ানো লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। গত বছরের জুনে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী রিচার্ড মার্লেস ভারতে এসে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে এক আলোচনায় প্রতিরক্ষা গবেষণা এবং দুই দেশের মধ্যে অংশীদারিত্ব বাড়ানোর উপর জোর দেন।