৭৪ তম স্বাধীনতা দিবসে দেশের মেয়েদের বিয়ের বয়স নিয়ে নতুন করে ভাববে দেশ, স্বাধীনতা দিবসে ঠিক এমনটাই জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মহিলাদের বিয়ের বয়েস ন্যূনতম কত বছর হওয়া উচিত সে বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে বলেও জানান তিনি। মোদী বলেন, “আমরা মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়সের বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করেছি। কমিটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পরে কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নেবে। ”
উল্লেখ্য, বিয়ের ন্যূনতম বয়স, বিশেষত মহিলাদের জন্য এটি একটি বিতর্কিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বর্তমানে। যে আইন এখন নির্ধারিত রয়েছে সেই অনুযায়ী বিয়ের সর্বনিম্ম বয়স ছেলেদের ক্ষেত্রে ২১ বছর এবং মেয়েদের জন্য ১৮ বছর। যদি ধর্মীয় এবং সামাজিক রক্ষণশীলদের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে এই আইনকে। অনেকাংশের আবার মত বয়সের ক্ষেত্রে আইনের উচিত লিঙ্গ-নিরপেক্ষ থাকা। ভারতীয় মেজরিটি আইন, ১৮৭৫ অনুসারে ১৮ বছর বয়সকে বিবাহের ন্যূনতম বয়স হিসেবে ধরা হয়েছে।
কেন বিয়ের বয়সের ন্যূনতম সীমারেখা থাকা প্রয়োজন?
বাল্যবিবাহ এবং নাবালিকাদের উপর অত্যাচারের যে অতীত রয়েছে সেই ঘটনা রুখতেই বিয়ের ন্যূনতম বয়স নির্ধারণ করার প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। শুধু তাই নয়, আইনে ১৮ বছরের আগে বিয়ে হলে তাঁকে অবৈধ ঘোষণা করার কথাও বলা রয়েছে। হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্ট ১৯৫৫ অনুসারে, মেয়ের বয়স ১৮ এবং ছেলের বয়স ২১ ধরা হয়েছে বিবাহযোগ্য বয়স হিসেবে। অন্যান্য আইনে ধারা অন্য। যদিও বাল্যবিবাহকে এখনও আইনানুযায়ী অবৈধ ঘোষণা করা যায়নি। কিন্তু যদি বিয়ের সময় অপ্রাপ্তবয়স্ক রাজি না থাকে সেক্ষেত্রে সেই বিয়েকে অবৈধ বলা যাবে। ইসলাম ধর্মে যেমন বয়ঃসন্ধিকালীন নাবালকের বিবাহ বৈধ বলে বিবেচিত হয়। তবে নাবালিকার সঙ্গে যৌন মিলনকে ভারতীয় আইন 'ধর্ষণ' হিসেবেই বিবেচনা করে।
কেন পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য বিবাহের আইনি বয়স আলাদা?
খুব পরিস্কার করে বলতে গেলে আইনে পুরুষ এবং মহিলাদের বিবাহের জন্য বয়স কেন আলাদা হবে এর কোনও সঠিক যুক্তি নেই। আইনের বেশ কিছু নীতি এবং ধর্মীয় নিয়ম অনুযায়ী এই বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে। সমাজকর্মীরা অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন এই বিষয়ে। কিন্তু ল'কমিশনের যে পরামর্শ পত্র ছিল সেখানে উল্লেখ করা হয় যে বিভিন্ন আইনি মানদন্ড থাকার কারণে "স্ত্রীর বয়স স্বামীর থেকে কম হতে হবে।" মহিলাদের অধিকার নিয়ে লড়াই করা কর্মীরা যুক্তি দেন যে এই এই ধারণা থাকা উচিত নয়। শারীরবিদ্যায় এবং মনস্তত্বেও দেখা যায় যে একই বয়সে মেয়েরা ছেলেদের থেকে অনেকসময়ই ম্যাচিওর হয়। তাই সেক্ষেত্রে কেন বয়সের এই তারতম্য থাকবে?
এরপর কমিশন সুপারিশ করেছিল যে উভয় লিঙ্গের জন্য বিবাহের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর নির্ধারণ করতে হবে।
এই আইন ফের নতুন করে গঠনের প্রয়োজন কোথায়?
মেয়েদের শারীরিক সমস্যার কথা ভেবেই এই আইন বদলানোর বিষয়টি নতুন করে ভেবে দেখা হচ্ছে। মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রারম্ভিক গর্ভাবস্থার ঝুঁকি কমাতে নারীদের বিবাহের ন্যূনতম বয়স বাড়ানোর পক্ষে অনেক যুক্তি রয়েছে। প্রথম পর্যায়ের গর্ভাবস্থা শিশু মৃত্যুর হারের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং মায়ের স্বাস্থ্যের উপরও প্রভাব ফেলে। যদিও ন্যূনতম বয়সের বাধ্যবাধকতা এবং নাবালিকার সাথে যৌন মিলনের অপরাধ করার আইন থাকা সত্ত্বেও দেশে বাল্যবিবাহ কিন্তু প্রচলিত।
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন