Advertisment

Explained: একনাথ সরকারে এসেই ওল্টালেন উদ্ধবের সিদ্ধান্ত, পরিবেশকেও 'ঘাড়-ধাক্কা', কী ভাবে?

সরকারে এসেই ওল্টালেন উদ্ধবের সিদ্ধান্ত

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Metro-3 car shed, Aarey Metro-3 car shed, Maharashtra news, Uddhav Thackeray Indian express news" />

একনাথ সরকারে এসেই ওল্টালেন উদ্ধবের সিদ্ধান্ত, পরিবেশকেও 'ঘাড়-ধাক্কা', কী ভাবে?

উদ্ধব ঠাকরে-কে সরিয়ে একনাথ শিন্ডে কুরসিতে বসেছেন কি বসেননি, সদ্য পুরনো সরকারের সিদ্ধান্তের একশো আশি ডিগ্রি বদল শুরু। মহারাষ্ট্রের রাষ্ট্র-নাট্যের যে শেষ হয়নি, এই ঘটনা তাই জানান দিচ্ছে পুরোমাত্রায়। প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকেই মেট্রো-৩ কারশেড আরে থেকে কানজুর মার্গের ১০২-একর জমিতে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত উল্টে দেওয়া হয়েছে। আরে-তেই ওই কারশেডটি করার জন্য নগরোন্নয়ন মন্ত্রককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, তারা যেন এ নিয়ে একটি প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় পেশ করে। প্রস্তাবিত মেট্রোর এই কারশেড-কে যা-তা ভাববেন না, এটি নিয়ে বিজেপি এবং শিবসেনার মধ্যে তীব্র দ্বন্দ্বের বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল, যখন তারা শরিক ছিল মহা-সরকারে। আরে-র পরিবেশ রক্ষাই শিবসেনার আপত্তির একটি বড় কারণ ছিল। শুক্রবার শিবসেনা ভবনে সাংবাদিক বৈঠকে সদ্য প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে তাঁদের সিদ্ধান্ত উল্টে দেওয়া প্রসঙ্গে বলেন, নয়া সরকারের এই পদক্ষেপে গভীর ভাবে দুঃখিত তিনি । শিন্ডে সরকার মুম্বইয়ের পরিবেশ নিয়ে খেলা করতে পারে না। এও বলেন, 'আমাদের প্রতি আপনার ক্রোধ যেন মুম্বইয়ের মানুষের বিরুদ্ধে না যায়।'

Advertisment

কারশেড স্থান-ঝগড়াটা কী?
২০১৪ সাল থেকে মেট্রো কারশেড আরে-তে তৈরি করার নিয়ে ঝামেলা শুরু। বিজেপি এবং শিবসেনার মধ্যে ঝগড়াও শুরু। দেবেন্দ্র ফড়নবিশ তখন মুখ্যমন্ত্রী, আরে মিল্ক কলোনিতে কোলাবা-বান্দ্রা-সিপজ মেট্রো প্রকল্পের ৩৩.৫ কিলোমিটার আন্ডারগ্রাউন্ড কারশেড তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১,৮০০ একর শহুরে জঙ্গল, যা গোরেগাঁওয়ের শহরতলিতে, চার দিকে কংক্রিটের কাঠামো, তার মধ্যে এক টুকরো সবুজ বসুন্ধরা। এই বিস্তীর্ণ বনাঞ্চলটি ৩০০ ধরনের গাছগাছালির আনন্দ-ক্ষেত্র। ফলে এখানে কারশেড তৈরির বিরুদ্ধে যায় শিবসেনা। যুব সেনার নেতা আদিত্য ঠাকরে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। মামলা যায় আদালতে।

কী হয়েছিল আদালতে?
পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীরা এবং আরের স্থানীয় মানুষজন ফড়নবিশ সরকারের সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে কোমর বাঁধে। মূলত, বৃহন্মুম্বই পুরসভার তরফে এই অঞ্চলে গাছ কেটে ফেলার জন্য যে ছাড়পত্র দেওয়া হয়, তার বিরুদ্ধেই হয় এই মামলা। আবেদনকারীদের এও বক্তব্য ছিল, আরে-কে প্লাবনভূমি এবং অরণ্য অঞ্চল বলে ঘোষণা করা হোক।
২০১৯-এর ৪ অক্টোবর বম্বে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রদীপ নন্দ্রাযোগের বেঞ্চ এই আবেদন নস্যাৎ করে দেয়। এর পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুম্বই রেল কর্পোরেশন লিমিটেড ২ হাজার গাছ কেটে ফেলে।
এর পরের দিন আবেদনকারীরা জরুরি ভিত্তিতে বম্বে হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চে মামলা করেন, সেই বেঞ্চ বিচারপতি এস সি ধর্মাধিকারীর। কারণ, সেই দিনটা ছিল শনিবার, এবং প্রধান বিচারপতি নন্দ্রাযোগকে বিচার সংক্রান্ত কাজে পাওয়া যায়নি। কিন্তু বিশেষ বেঞ্চও গাছ কাটায় স্থগিতাদেশ দিতে অস্বীকার করে। এর দু'দিন পর সুপ্রিম কোর্ট গাছ কাটার প্রতিবন্ধকতা রোপণ করে। মহারাষ্ট্র সরকার আদালতকে জানায়, যা গাছ কাটার কথা ছিল, তা কাটা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সে কথায় চিঁড়ে ভেজেনি। আদালত স্থগিতাদেশেই অনড় ছিল। মেট্রোর তরফ থেকে জানানো হয়, কাটা হয়েছে ২,১৪১টি।

এর পর উদ্ধব ঠাকরে সরকারে এসে কী করলেন?
মহা বিকাশ আগাড়ি সরকার গঠিত হয় ২০১৯-এর নভেম্বরে। আগে থেকেই আদিত্য ঠাকরের নেতৃত্বে ২ হাজারের বেশি গাছ কাটার বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে। সেই সঙ্গে পরিবেশ কর্মী এবং স্থানীয়রাও বড় মাপের আন্দোলনে নেমেছেন। সুপ্রিম কোর্টও গাছ কাটার বিরুদ্ধে। ফলে জমি প্রস্তুত ছিল। উদ্ধব ঠাকরে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর দিন ১৯-এর ২৯ নভেম্বর আগের ফড়নবিশ সরকারের আরে-তে মেট্রোর কারশেডের সিদ্ধান্তে ফুলস্টপ দিয়ে দেন। এবং সেই কারশেডকে সরিয়ে দেন কানজুরমার্গের লবন ভূমিতে। ২০২০ সালের অক্টোবরে এখানকার ১০২ একর জমি মুম্বই মেট্রোপলিটন রিজিয়ন ডেভেলপমেন্ট অথরিটির হাতে দেওয়া হয়। তারা এই জমি দিল্লি মেট্রো রেল কর্পোরেশন লিমিটেডকে দেয়, কারশেডটি করার ভার তাদের উপরেই।
বর্তমান সময়বিন্দুতে ইতিহাস পুনরাবৃত্তিময়, সেইটি আরেক বার প্রমাণ করল মহারাষ্ট্র, সে রাজ্যের সরকার।

Maharashtra Eknath Shinde
Advertisment