বিদায় নিলেন 'ম্যান অফ অল সিজনস', পড়ে রইল কয়েক টুকরো বিতর্ক

পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তাঁর উপস্থিতি নজির সৃষ্টি করেছে। তাঁর ঘটনাবহুল জীবন প্রকাশের চেয়ে তিনি কিন্তু অনেক গোপনীয়তা লুকিয়ে রেখেছিলেন।

পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তাঁর উপস্থিতি নজির সৃষ্টি করেছে। তাঁর ঘটনাবহুল জীবন প্রকাশের চেয়ে তিনি কিন্তু অনেক গোপনীয়তা লুকিয়ে রেখেছিলেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

একের পর এক শারীরিক অসুস্থতার বাঁধন কাটিয়ে চুরাশি বছরেই জীবনাবসান ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ভারতরত্ন প্রণব মুখোপাধ্যায়ের। বয়স হয়েছিল চুরাশি। নিউ দিল্লির সেনা হাসপাতাল থেকে যখন খবর এল মুহুর্তে শোকস্তব্ধ দেশের সব মহল।

Advertisment

বিশেষত্ব সেখানেই। প্রণব মুখোপাধ্যায় সেই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যিনি সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন কাটানোর কার্যত রেকর্ড গড়েছেন। পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তাঁর উপস্থিতি নজির সৃষ্টি করেছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল তাঁর ঘটনাবহুল জীবন প্রকাশের চেয়ে তিনি কিন্তু অনেক গোপনীয়তা লুকিয়ে রেখেছিলেন।

প্রণব মুখোপাধ্যায় আসলে ভারতীয় রাজনীতির মঞ্চের 'ম্যান অফ অল সিজনস'। সরকার হোক কিংবা দল, রাজনৈতিক জ্ঞানের সমারোহ যার কাছে ছিল সেই প্রণব মুখোপাধ্যায়ের আশ্রয় বারংবার নিতে হয়েছে কংগ্রেসকে। ১৯৭০ সালে ইন্দিরা গান্ধী নেতৃত্বাধীন সরকারের হয়ে অনুজ মন্ত্রী হিসেবে পথ চলা। সেই শুরু। অধ্যায় শেষ হয়েছিল ২০১৭ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসেবে পদ ছাড়ার পর। রাজ্যসভার পাঁচবারের সদস্য এবং লোকসভার দু'বার সদস্য প্রণব মুখোপাধ্যায় সংসদের প্রায় অপরিবর্তিত সদস্য ছিলেন। কেবল যা হয়নি তা হল প্রধানমন্ত্রীর পদ। ইন্দিরা গান্ধী হত্যা, রাজীব গান্ধী হত্যা কংগ্রেস বেসামাল হয়েছে বহুবার। দলে সুযোগ এলেও কোনওবারই প্রধানমন্ত্রী করা হয়নি তাঁকে। শেষবার তো মনমোহন সিংয়ের অধীনে কাজ করতে অনীহা প্রকাশও করেছিলেন তিনি। তবে শেষমেশ সোনিয়া গান্ধী তাঁকে বুঝিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন, প্রণব মুখাপাধ্যায়: কংগ্রেস যাঁকে কোনওদিন প্রধানমন্ত্রী হতে দিল না

Advertisment

রাজীব গান্ধী কিংবা সোনিয়া উভয়ই প্রণব মুখোপাধ্যায় সম্পর্কে সর্বদা সতর্ক ছিলেন। যদিও তিনিই কিন্তু কংগ্রেসের সভাপতি হিসাবে সোনিয়া গান্ধীকে নিয়ে আসেন পরোক্ষভাবে। এক অভূতপূর্ব স্মৃতি এবং ক্ষুরধার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি-মন দিয়েই রাজনৈতিক বুদ্ধিমান বিশ্লেষকের আসনে তিনিই ছিলেন অন্যতম। দিন-ক্ষণ সব কিছুই থাকত নখদর্পণে। সাংবাদিক প্রীতিশ নন্দী তাঁকে বলেছিলেন, "ইনি এমন একজন মানুষ, যিনি অনেক অনেক কিছু জানেন"।

মনমোহন সিংয়ের শাসনকালে, তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দায়িত্বে ছিলেন। প্রতিরক্ষা, বিদেশ এবং অর্থমন্ত্রকের দায়িত্বে। এছাড়াও রাষ্ট্রপতিও হয়েছিলেন। বিদেশমন্ত্রী হিসাবে তিনি বুশ সরকারের সাথে মার্কিন-ভারত বেসামরিক পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষরের তদারকি করেছিলেন। ইন্দিরা গান্ধী এবং মনমোহন সিং উভয়ের অধীনে ফিনান্স পোর্টফোলিও তৈরি করেছিলেন। অর্থনৈতিক উদারকরণের দশ বছর আগে তিনি এনআরআইদের ভারতীয় অর্থনীতিতে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করেছিলেন।তবে অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর শেষ বছরগুলি কিছুটা বিতর্কিত হয়ে পড়েছিল।

আরও পড়ুন, প্রণববাবুর অ্যাটাচিতে সবসময় থাকত এই ছোট্ট বইটি

রাজনৈতিক মঞ্চে তাঁর জনপ্রিয়তা কতখানি তা বিরোধী শিবিরের ভালবাসা থেকেই স্পষ্ট। অরুণ জেটলি, লালকৃষ্ণ আদবানি বিজেপি দলের বহু নেতারা প্রণব প্রশংসায় মুখর ছিলেন। ২০১৭ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি পদ থেকে পদত্যাগ করার পরেনাগপুরে আরএসএস সদর দফতরে গিয়ে প্রধান মোহন ভাগবতের সঙ্গে বৈঠক ঘিরে তৈরি হয়েছিল তুমুল বিতর্ক। কিন্তু তিনি তো রাজনীতির বর্ণময় নয়, গৌরবোজ্জ্বল 'ম্যান অফ অল সিজনস'! বিতর্ক ছাড়িয়ে যিনি আজ পাড়ি দিলেন অজানা দেশে।

Read the full story in English

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

CONGRESS Pranab Mukherjee