Advertisment

Explained: নতুন সংসদভবনের অশোক স্তম্ভেও বিতর্কের হাওয়া, ভবন-কথা জানেন?

নতুন সংসদভবনের প্রশস্ত প্রবেশ ক্ষেত্রের ছাদে এই অশোক স্তম্ভটিকে বসানো হয়েছে। এর উচ্চতা ৬.৫ মিটার। তৈরি হয়েছে ব্রোঞ্জে। ওজন ৯,৫০০ কিলোগ্রাম।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
National Emblem

নরেন্দ্র মোদী মানেই বিরাট বিরাট ব্যাপার, বড় বড় চমক। ছোট কিছু করতে প্রায় কখনও দেখাই যায়নি প্রধানমন্ত্রীকে। সে নোটবন্দির নিদারুণ কোনও সিদ্ধান্ত হোক, কিংবা প্যাটেলের মূর্তি বা সেন্ট্রাল ভিস্তা। বলে থাকেন অনেকেই, বিশেষ করে মোদীর সমালোচকরা। আমাদের এই লেখায় অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর সব বিরাটত্ব নিয়ে আলোচনা করা যাবে না, এবং সে সুযোগ বা কারণ কোনওটাই নেই। আমরা কার্য ও কারণ যোগে সেন্ট্রাল ভিস্তায় সীমাবদ্ধ থাকব, তাও পুরো ভিস্তায় নয়, তার প্রধান অংশ নয়া সংসদভবনে ঘোরাফেরা করব। কারণ সে সম্পর্কে কিছু বলার কারণ এসে উপস্থিত হয়েছে আবার।

Advertisment

সেন্ট্রাল ভিস্তা মানেই বিতর্ক, সেন্ট্রাল ভিস্তা মানেই লম্বা-চওড়া একটি খরচের হিসেব, এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, যিনি এই প্রকল্পের কাণ্ডারী। তা, নির্মীয়মাণ নতুন সংসদভবনের ছাদে ভারতের জাতীয় প্রতীক অশোক স্তম্ভের উন্মোচনও করলেন প্রধানমন্ত্রী সোমবার। অনেকেই বলছেন, একি প্রধানমন্ত্রী কেন, তিনি কেন এ কাজটা করবেন, এটা তো করা উচিত ছিল লোকসভার স্পিকারের, আবার কারও কারও মত, এটা রাষ্ট্রপতির করা উচিত ছিল। তাঁদের তোপ, আসলে প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের বহুত্বে বিশ্বাসী নন, তিনি একাই আলোয় থাকতে চান সব ক্ষেত্রেই।

যা হোক, এখনও সেন্ট্রাল প্রকল্পে এই নয়া সংসদভবনের কাজ শেষ হয়নি, এর ডেডলাইন অক্টোবর-নভেম্বর। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যেহেতু বিরাট বিরাট কিছু করে থাকেন, আর বিরাট বিরাট কিছু মানেই ইতিহাস তৈরি করা, ফলে তার বাঁকে বাঁকে যে চমক থাকবে, তা বলাই বাহুল্য। ফলে সেই চমক দেখে চক্ষুকর্ণের বিবাদভঞ্জন করছেন দেশবাসী বাঁকে বাঁকে। এবং গোটা প্রকল্পটা শেষ হওয়ার জন্য তাঁদের অপেক্ষাটাও ক্লান্তিকর হচ্ছে না। স্তরে স্তরে উন্মোচন ঘটছে ইতিহাসের। বলছেন ওই মোদী-সমালোচকরাই।

নতুন ভবনের অশোক স্তম্ভ

নতুন সংসদভবনের প্রশস্ত প্রবেশ ক্ষেত্রের ছাদে এই অশোক স্তম্ভটিকে বসানো হয়েছে। এর উচ্চতা ৬.৫ মিটার। তৈরি হয়েছে ব্রোঞ্জে। ওজন ৯,৫০০ কিলোগ্রাম। একটি সাপোর্ট স্ট্রাকচার রয়েছে এর, যা স্টিলের, ওজন ৬,৫০০ কিলোগ্রাম। এর স্কেচ তৈরি করা এবং একে ছাদের উপর স্থাপন করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে আটটি ধাপ। ক্লে মডেলিং/ কম্পিউটার গ্রাফিক্স, পালিশ—এই সব হয়েছে বহু স্বেদ ধরিয়ে।

বিল্ডিংয়ের ভিতর

প্রাসাদোপম এই বাড়িটিতে ছটি গ্র্যানাইট স্ট্যাচু থাকছে। বোঝাই যাচ্ছে নামী ব্যক্তিদের স্ট্যাচু এগুলি। সংসদের দুই কক্ষ, মানে লোকসভা এবং বিধানসভায় চারটি করে গ্যালারি থাকছে। অনুষ্ঠানের জন্য তিনটি হল। তিনটি ইন্ডিয়া গ্যালারি এবং একটি কনস্টিটিউশন গ্যালারি থাকছে। বিল্ডিংয়ের প্রতিটা দেওয়াল নির্মাণে একটি প্রধান থিম রয়েছে। যেমন আদিবাসী নেতাদের অবদানের কথা বলা হয়েছে কোনওটিতে, কোনওটায় আবার মহিলাদের অবদানের বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। পোর্ট্রেট, অলঙ্করণ, ভাস্কর্য ইত্যাদির মাধ্যমে এই সব কাজ করা হয়েছে। মোটামুটি ৭০ শতাংশ শিল্পকাজ করতে দেওয়া হয়ে গিয়েছে। বাকিটা আগামী দু’মাসের মধ্যে দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন- মহাকাশ গবেষণায় নতুন দিগন্ত, NASA-র টেলিস্কোপে উঠল ১,৩০০ কোটি বছর আগের মহাবিশ্ব

স্থাপত্য শৈলী

এই বিল্ডিংয়ের ভারপ্রাপ্ত আর্কিটেক্ট হলেন আমদাবাদের এইচসিপি ডিজাইন্স-এর বিমল প্যাটেল। বিল্ডিংটি ত্রিকোণাকৃতির। যা ভারতীয় স্থাপত্য শৈলীর সঙ্গে মিল খেয়ে যায়। নয়া বাড়িটি বর্তমানটির লাগোয়া এবং দুটি প্রায় সমান আকারের। প্যাটেলের অফিস সূত্রে বলা হয়েছে, নতুন বাড়িটির ভূকম্প-মোকাবিলার ক্ষমতা রয়েছে। এ বাড়িতে যে লোকসভা, তাতে রয়েছে ৮৮৮টি আসন, ৩৮৪টি আসন রয়েছে রাজ্যসভায়। বর্তমান সংসদভবনের মতো এটিতে কোনও সেন্ট্রাল হল নেই। যৌথ অধিবেশনের ক্ষেত্রে লোকসভা চেম্বারেই ১,২৭২ জন সদস্য বসতে পারবেন। এই বিল্ডিংয়ে একটি বটগাছের জন্য ২ হাজার স্কোয়্যার মিটার খোলা জায়গা রয়েছে।

সময়সীমা

বর্তমান সংসদভবনটির নকশা করেছিলেন এডুইন লুটিয়েন্স এবং হারবার্ট বেকার। গোটা নতুন দিল্লির পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করেছিলেন। এর উদ্বোধন হয়েছিল ১৯২৭-এর ১৮ জানুয়ারি। উদ্বোধন করেন গভর্নর জেনারেল অফ ইন্ডিয়া লর্ড আরউইন। আর নতুন বিল্ডিংয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় ২০২০-র ডিসেম্বরে, কাজটি করেন যথারীতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর পুরনো সংসদভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থপন করেন ডিউক অফ কনট, ১৯২১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি। মানে, দুইয়ের মধ্যে প্রায় শতবর্ষের ব্যবধান।

শতবর্ষ কাটিয়ে আস্তে আস্তে অতীতের দিকে ঢলে পড়ছে বহু রাজনৈতিক পটবদল এবং লড়াইয়ের সাক্ষী লুটিয়েন্সের তৈরি সংসদ-অট্টালিকা। এত খরচ করে নতুন একটি অট্টালিয়া কি করার কোনও দরকার ছিল, যখন মহামারিকাতর অর্থনীতি, তখন এই বাড়িটাকে বিসদৃশ বলে মনে হচ্ছে না? প্রশ্ন মাড়িয়েই এগিয়ে চলছে নতুন ভবনের নির্মাণকাজ, তড়িৎগতিতে।

Read full story in English

Parliament national modi
Advertisment