Advertisment

Explained: কর্ণাটকের সুদ পরবর্তী সিবিআই ডিরেক্টর, এই নিয়োগ কি আসলে অস্বচ্ছতায় ভরা?

সিবিআই প্রধান পদে ১১৫ জনের তালিকা পাঠিয়েছিল মন্ত্রক। কিন্তু, সেই তালিকার বহু নামই নিয়োগ কমিটির কাছে পেশ হয়নি। এমনটাই অভিযোগ করেছেন কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরী।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Praveen Sood.jpg 1

বিতর্কিত আইপিএস প্রবীণ সুদ (মধ্যে)।

গত ১৪ মে, রবিবার এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে ১৯৮৬ ব্যাচের কর্ণাটক ক্যাডারের আইপিএস প্রবীণ সুদকে সিবিআইয়ের নতুন ডিরেক্টর নিযুক্ত করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে এক উচ্চপর্যায়ের কমিটি এই বাছাই প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছিল। ২৫ মে অবসর নেবেন সিবিআইয়ের বর্তমান ডিরেক্টর সুবোধকুমার জয়সওয়াল। দুই বছরের জন্য তাঁর স্থানাভিষিক্ত হবেন ৫৯ বছর বয়সি প্রবীণ সুদ।

Advertisment

প্রবীণতম আইপিএস

জয়সওয়ালের পর সুদই দেশের প্রবীণতম কর্মরত আইপিএস অফিসার। তবে, সুদের নিয়োগে খুশি নয় কংগ্রেস। কর্ণাটক প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির (কেপিসিসি) প্রধান ডিকে শিবকুমার সম্প্রতি সুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন। তারপরই তাঁকে সিবিআই ডিরেক্টর নিয়োগ করা হল। শনিবার কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের জয়ের পর শিবকুমার এখন সেরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদে অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী।

প্রবীণ সুদ কে?

সুদ বর্তমানে কর্ণাটক পুলিশের ডিজি। তিনি বেঙ্গালুরুতে থাকেন। ওয়েবসাইট অনুযায়ী তিনি আইআইটি দিল্লি এবং আইআইএম-ব্যাঙ্গালোরের প্রাক্তন ছাত্র। ১৯৮৯ সালে তিনি মাইসুরুর সহকারি পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। বেল্লারি এবং রাইচুরের পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর বেঙ্গালুরুর ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (আইন-শৃঙ্খলা) হন।

বিদেশও দায়িত্বে

১৯৯৯ সালে তিন বছরের জন্য মরিশাস সরকারের পুলিশ উপদেষ্টা হিসেবে বিদেশে ডেপুটেশনে যান। এরপর নিউইয়র্কের আইআইএম থেকে ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর এবং সিরাকিউজ ইউনিভার্সিটির ম্যাক্সওয়েল স্কুল অফ গভর্ন্যান্স থেকে পাবলিক পলিসিতে স্নাতকোত্তর করার জন্য ছুটি নেন। কর্মজীবনে মাইসুরুর পুলিশ কমিশনার এবং বেঙ্গালুরু ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনারের দায়িত্ব সামলেছেন।

বহু পুরস্কারে পুরস্কৃত

ওয়েবসাইট অনুযায়ী, তিনি ১৯৯৬ সালে পরিষেবায় উৎকর্ষতার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর স্বর্ণপদক, ২০০২ সালে মেধাবী পরিষেবার জন্য পুলিশ পদক এবং ২০১১ সালে উল্লেখযোগ্য পরিষেবার জন্য রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক পেয়েছেন। সুদকে কর্ণাটক রাজ্য পুলিশ হাউজিং কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং স্বরাষ্ট্র দফতরের প্রধান সচিব নিযুক্ত করা হয়েছিল।

সরিয়েছিলেন সিদ্দারামাইয়া

তিনি বেঙ্গালুরু শহরের পুলিশ কমিশনার, সিআইডির অর্থনৈতিক অপরাধ ও বিশেষ ইউনিটের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। যদিও নিয়োগটি ছিল এক বছরের জন্য। কারণ, সাত মাস পরেই তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া তাঁকে বদলি করে দিয়েছিলেন। সেটাও উল্লেখযোগ্য ছিল, কারণ সুদ ১৯৮৫ ব্যাচের আইপিএস অসিতমোহন প্রসাদকে সরিয়ে নিযুক্ত হয়েছিলেন।

সুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ

কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনের আগে, কংগ্রেস কর্মীদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। যার মধ্যে কিছু মামলা ছিল তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বাসভরাজ বোম্মাইয়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভ 'পে সিএম'-এর সঙ্গে সম্পর্কিত। শিবকুমার অভিযোগ করেছেন যে সুদ ও তাঁর আধিকারিকরা ইচ্ছাকৃতভাবে কংগ্রেস কর্মীদের টার্গেট করেছিলেন। আর, বিজেপি ক্যাডারদের কাজের দিকে চোখ বন্ধ করে বসেছিলেন।

টিপুর হত্যাকাহিনি

এর আগে মার্চে, বিজেপি কর্মীরা ভোক্কালিগা সর্দার উরি গৌড়া ও নাঞ্জে গৌড়াকে সম্মান জানাতে মান্ডিয়াতে একটি খিলান স্থাপন করার পরে বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছিল। কারও কারও মতে, এই উরি ও নাঞ্জে গৌড়া ১৮ শতকে মহীশূরের শাসক টিপু সুলতানকে হত্যা করেছিলেন। যদিও অনেক ইতিহাসবিদ এই দাবির বিরোধিতা করেছেন। তারপরও শহরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের ঠিক আগে এই খিলান তৈরি করা হয়েছিল। বিতর্কিত খিলান তৈরি করলেও কোনও মামলা নথিভুক্ত হয়নি বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে।

শিবকুমারের ক্ষোভ

যার জেরে, সুদের প্রতি কটাক্ষ করে শিবকুমার বলেছিলেন, 'আমাদের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ২৫টি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। তবে কেন বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনও মামলা দায়ের করা হয়নি? এই ডিজিপি (প্রবীণ সুদ) একজন নালায়ক (অযোগ্য)। আমাদের সরকার আসুক। আমরা তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।' শুধু এসব বলাই নয়। সুদকে সরানোর জন্য নির্বাচন কমিশনকে চিঠিও দিয়েছিল কংগ্রেস।

শিবকুমারের বক্তব্য

তা নিয়ে শিবকুমার বলেছিলেন, 'আমি ভেবেছিলাম তিনি (সুদ) একজন সম্মানিত মানুষ। অবিলম্বে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে তাঁকে গ্রেফতার করতে হবে।' কংগ্রেস নেতা ৫৯ বছর বয়সি পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন। জানিয়েছিলেন, যদি কংগ্রেস কর্ণাটকে ক্ষমতায় আসে, তবে সুদকে বিজেপির এজেন্ট হিসেবে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সিবিআই ডিরেক্টর

যে কমিটি সিবিআই প্রধান নির্বাচন করে, তা প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা এবং ভারতের প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত। এই নিয়োগের প্রক্রিয়াটি সুপ্রিম কোর্টের বিনীত নারাইন রাই (১৯৯৭) মামলার রায় দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। আর, ১৯৪৬ সালের দিল্লি স্পেশাল পুলিশ এস্টাব্লিশমেন্ট (DSPE) আইন, ২০১৩ সালের লোকপাল এবং লোকায়ুক্ত আইন দ্বারা পরিবর্তিত হয়েছিল।

অধীরের বিরোধিতা

রবিবার, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস রিপোর্ট করেছে যে মোদী এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় সুদকে পরবর্তী সিবিআই প্রধান হিসেবে নিয়োগ করতে সম্মত হলেও, লোকসভায় কংগ্রেস নেতা তথা প্যানেলের তৃতীয় সদস্য অধীররঞ্জন চৌধুরী সুদকে বেছে নেওয়ার বিরোধিতা করেছেন।

আইন মেনে তালিকা নয়

সূত্রের খবর, ডিপার্টমেন্ট অফ পার্সোনেল অ্যান্ড ট্রেনিং (ডিওপিটি) এর আগে সিবিআই প্রধানের পদের জন্য প্রায় ১১৫ জনের নামের একটি তালিকা পাঠিয়েছিল। যার মধ্যে এমন বেশ কিছু অফিসার আছেন, যাঁদের বাছাইপর্বে তালিকাভুক্তই করা হয়নি। প্রতিবাদের সময় অধীররঞ্জন চৌধুরী এটি উল্লেখ করেছেন বলে জানা গেছে। অধীর তাঁর অভিযোগের যুক্তিতে জানিয়েছেন, তালিকায় থাকা আধিকারিকদের পরিষেবার নথি, ব্যক্তিগত বিবরণ এবং সততার নথি তিনি পাননি। কংগ্রেস নেতার দাবি ছিল, সরকারের মহিলা অফিসার এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কোনও আধিকারিককে সিবিআই প্রধান হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।

আরও পড়ুন- কর্ণাটকের Result থেকে এখন কী শিখছেন শাহ-মোদী?

সুদের রাস্তা সহজ

কিন্তু, বিস্তারিত তালিকার বদলে সিবিআই ডিরেক্টর হিসেবে যে নামগুলো কমিটির কাছে তুলে ধরা হয়েছিল, তার মধ্যে রয়েছেন মধ্যপ্রদেশের ডিজিপি সুধীরকুমার সাক্সেনা ও সিভিল ডিফেন্স, হোম গার্ডস ও ফায়ার সার্ভিসের ডিজি তাজ হাসানের নাম। ফলে, সুদের সিবিআই প্রধান হওয়ার রাস্তা অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে।

adhir choudhury karnataka elections cbi
Advertisment