Advertisment

ব্রিটেনের তিন নম্বর মহিলা প্রধানমন্ত্রী, কে এই লিজ ট্রাস, কতটুকু জানেন তাঁকে?

১৯৮০-র দশকে মার্গারেট থ্যাচার ব্রিটেনের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হন। বছর সাতেকের লিজ তখন স্কুলে থ্যাচারের ভূমিকায় অভিনয় করছেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
liz_truss

মোট ১,৭২,০০০ সদস্যের কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যরা ভোট দিয়েছেন। সপ্তাহব্যাপী প্রচার চলেছে। জনসাধারণের মধ্যে বিতর্ক হয়েছে। তার পর সোমবার ফল ঘোষণা হল। ভোটদাতা ৮২.৬% ভোটারের মধ্যে লিজ ট্রাস পেয়েছেন ৮১,৩২৬ ভোট। তাঁর, প্রতিদ্বন্দ্বী ঋষি সুনাক ভোট পেয়েছেন ৬০,৩৯৯টি। ফল জানার পর সুনাক কথা দিয়েছেন, তিনি নতুন সরকারকে সমর্থন করবেন। কিন্তু, ঋষি সুনাককে হারালেন, কে এই লিজ ট্রাস?

Advertisment

ছোটবেলার লিজ ট্রাস

পোশাকি নাম এলিজাবেথ ট্রাস। রাজনীতির দুনিয়ায় পরিচিত লিজ ট্রাস নামে। ১৯৮০-র দশকে মার্গারেট থ্যাচার ব্রিটেনের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হন। বছর সাতেকের লিজ তখন স্কুলে থ্যাচারের ভূমিকায় অভিনয় করছেন। তবে, পরবর্তীতেও মনে রেখেছেন সেই দিন। সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, 'আমি স্কুলে মক পোল-এ প্রধানমন্ত্রী থ্যাচার সেজে প্রার্থী হয়েছিলাম। স্কুলের সাজানো ভোটারদের খুব আবেগের সঙ্গে আমাকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু, একটাও ভোট পাইনি। শুধু তাই না, নিজেও নিজেকে ভোট দিইনি।'

লিজের পরিবার ও রাজনীতি

উত্তর ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডে ১৯৭৫ সালে জন্ম। বাবা ছিলেন অঙ্কের অধ্যাপক, মা নার্স- দুজনেই বামপন্থী। পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের দাবিতে ছোট লিজ তারা বাবা-মায়ের সঙ্গে প্রচারে অংশ নিতেন। মার্গারেট থ্যাচারের সরকার লন্ডনের পশ্চিমে রয়্যাল এয়ার ফোর্সের গ্রিনহাম ঘাঁটিতে মার্কিন পরমাণু অস্ত্রবাহী যুদ্ধাস্ত্র বসানোর অনুমতি দিয়েছিল। তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন ছোট লিজ। ব্রিটেন থেকে রাজতন্ত্র অবসানের দাবিতে হওয়া মিছিলেও ছিলেন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে।

ছিলেন উদারপন্থী লিবারেল ডেমোক্র্যাট দলের সঙ্গে। পরবর্তীতে সেই দলের সক্রিয় কর্মী।

লিজ ট্রাসের লেখাপড়া ও রাজনীতি

তাঁর বয়স যখন চার, ট্রাস পরিবার গ্লাসগোর পশ্চিমে পেসলি অঞ্চলে গিয়ে বসবাস শুরু করে। পরে চলে যায় উত্তর ইংল্যান্ডের লিডসেতে। সেখানেই রাউন্ডহে নামে সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে লিজ ট্রাসের লেখাপড়া। উচ্চশিক্ষা অক্সফোর্ডে। সেখানে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ে লেখাপড়া করেন। ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৯৪ সালে লিবারেল পার্টির সম্মেলনে লিজ ট্রাসের বক্তব্য ছিল, 'আমরা লিবারেল ডেমোক্র্যাটরা সকলের জন্য সমান সুযোগের আদর্শে বিশ্বাসী। শাসন করার অধিকার নিয়ে কেউ জন্মেছে, একথা আমরা বিশ্বাস করি না। গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক ইস্যুতে আমরা গণভোট নেওয়ায় বিশ্বাসী।'

কনজারভেটিভ পার্টিতে যোগ

পরে, দাবি করেন তাঁর আগের অবস্থান ভুল ছিল। স্নাতক হওয়ার পর অক্সফোর্ডে থাকাকালীনই ১৯৯৬ সালে কনজারভেটিভ পার্টিতে যোগ দেন। অ্যাকাউন্টটেন্ট হিসেবে শেল ও কেবল অ্যান্ড ওয়ালেস কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন। ২,০০০ সালের গোড়ায় সহকর্মী অ্যাকাউন্টটেন্ট হিউ ও'লিয়ারিকে বিয়ে করেন। দুই সন্তানের জন্ম দেন। ২০০১ সালে উত্তর ইংল্যান্ডে পশ্চিম ইয়র্কশায়ারের এক কেন্দ্র থেকে ভোট দাঁড়ান। কিন্তু, হেরে যান। ২০০৫-এ অন্য এলাকায় প্রার্থী হয়েও সাফল্য পাননি। শেষে ২০০৬ সালে দক্ষিণ-পূর্ব লন্ডনের গ্রেনিচ থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে আর্থিক সংস্কার নিয়ে গবেষণা শুরু করেন।

আরও পড়ুন- ঋষি সুনাকের সব পরিশ্রম জলে, ব্রিটেনের কুর্সিতে লিজ ট্রাস

লিজের কলঙ্ক ও রাজনীতি

ডেভিড ক্যামেরন ২০১০ সালে তাঁর দক্ষিণ-পশ্চিম নরফোকে এক কেন্দ্রে প্রার্থী করেন। কিন্তু, এক এমপির সঙ্গে প্রেমের খবর ফাঁস হয়ে যাওয়ায় ভোটের ফল নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে ১৩ হাজারের বেশি ভোটে পরাজিত করেন। ২০১২ সালে শিক্ষামন্ত্রী হন। ২০১৪ সালে পরিবেশ মন্ত্রী হন। টেরেসা মে-এর শাসনে আইনমন্ত্রী ও অর্থ দফতরের মুখ্যসচিব হন। ২০১৯-এ বরিস জনসন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর লিজ ট্রাস বাণিজ্যমন্ত্রী হন। ২০২১ সালে হন বিদেশমন্ত্রী।

লিজের দুর্বলতা ও রাজনীতি

তিন জন প্রধানমন্ত্রীর অধীনে ছয়টি দফতরের মন্ত্রিত্ব সামলানোর পরও জনগণের কাছে সেভাবে পরিচিত নন। ব্রেক্সিট ইস্যুতে প্রথমে ইউরোপের সঙ্গে থাকার পক্ষে ছিলেন। কিন্তু, গণভোট ব্রেক্সিটপন্থীরা জিততেই ১৮০ ডিগ্রি বদলে যান। ব্রেক্সিটের পক্ষে সুর চড়ান। সমালোচকদের অভিযোগ, তিনি হাওয়া বুঝে চলেন। এখন তাঁর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ বলতে- ব্রিটেনের মুদ্রাস্ফীতি, জীবনযাত্রার বাড়ন্ত ব্যয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে আসন্ন শীতে জ্বালানি গ্যাসের ঘাটতি।

Read full story in English

Britain Prime Minister Election
Advertisment