দেশ জুড়েই করোনার বাড়বাড়ন্ত অব্যাহত। প্রায় লাখ ছুঁইছুঁই অ্যাকটিভ আক্রান্তের সংখ্যা। কেন হটাৎ করে এতটা বেড়ে গেল সংক্রমণ? বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে করোনার চরিত্র বদল হলেও এখনও পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়নি এই ভাইরাস। সেই সঙ্গে করোনার এই বাড়বাড়ন্তের জন্য ওমিক্রন সাব-ভেরিয়েন্ট BA.4 এবং BA.5 এর দ্রুত হারে ছড়িয়ে পড়াকেই দায়ী করা হয়েছে।
পাশাপাশি রয়েছে আরও দুটি নয়া ভ্যারিয়েন্ট BA.2.12.1, এবং BA.2.38। BA.2 সাব-ভেরিয়েন্ট সাবভেরিয়েন্টে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে দেশে যার ফলে হু হু করে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। BA.2 সাব ভ্যারিয়েন্ট থেকে আরও একটি নয়া ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে সেটি হল BA। .2.38। এই সপ্তাহের শুরুর দিকে দিল্লিতে বেশ কয়েকটি Omicron এর BA.5 সাব-ভেরিয়েন্টে আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। যা কয়েক মাস আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় কার্যত করোনা সুনামির সৃষ্টি করেছিল।
হু জানিয়েছে বিশ্বের প্রায় ১১০ টি দেশে নতুন করে করোনা প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও মোট সংক্রমণের অর্ধেক এই দুই প্রজাতির জন্য দায়ী। হু’র তথ্য অনুসারে ২৫ জুন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে BA.5 ভ্যারিয়েন্ট ৩৬.৬ শতাংশ এবং BA.4 ভ্যারিয়েন্ট ১৫.৭ শতাংশ সংক্রমণের জন্য দায়ী। অর্থাৎ দেশের মোট সংক্রমণের ৫২ শতাংশের জন্য দায়ী এই দুই নয়া ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট।
এছাড়াও হু জানিয়েছে বিশ্বব্যাপী সংক্রমণ গত কয়েকদিনে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সঙ্গে কিছু দেশে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে BA.2.38 ভ্যারিয়েন্ট গত এক মাসের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য দায়ি। যদিও দেশে প্রায় একই সময়ে BA.4 এবং BA.5 সনাক্ত করা হয়েছিল (মে মাসের শুরুতে) তা সত্ত্বেও দেখা গেছে BA.5 ভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত হারে ছড়িয়ে পড়েছে।
এ পর্যন্ত, ভারত BA.5 সাব ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তের সংখ্যা ১২০। Omicron এর আরেকটি সাব-ভেরিয়েন্ট BA.2.12.1 এতে এখন পর্যন্ত ১৯০ জন আক্রান্ত হয়েছেন বলেই খবর মিলেছে। তার মধ্যে বেশিরভাগই তেলেঙ্গানা (৬৯), কর্ণাটক (৪৬) এবং তামিলনাড়ু (৪৫) থেকে রিপোর্ট করা হয়েছে।
আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত এই সাব ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে কী তথ্য রয়েছে?
BA.4 এবং BA.5 যথাক্রমে জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম সনাক্ত করা হয়েছিল। একটি নতুন ঢেউয়ের সৃষ্টি করেছিল। এই বছরের মে মাসে অত্যন্ত প্রভাবশালী ভ্যারিয়েন্ট হয়ে উঠেছিল। এখন ইউরোপের একাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়ছে এই ভ্যারিয়েন্ট। পর্তুগালে BA.5 প্রভাবশালী রূপ হয়ে উঠেছে।
BA.4 এবং BA.5-এর BA.2-এর তুলনায় প্রায় ১৩ থেকে ১৫ গুণ দ্রুত সংক্রমণ ক্ষমতা রয়েছে। যদিও এই নয়া ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট অথবা লান্স ইনফেকশনের অথবা হাসপাতালে ভর্তির প্রবণতা তুলনায় অনেক কম। BA.2.12.1 ভ্যারিয়েন্ট প্রথম নিউইয়র্কে সনাক্ত করা হয়েছিল যা BA.2 সাব ভ্যারিয়েন্টের থেকে প্রায় ২৫ গুণ বেশি সংক্রামক। তবে BA.2.38 ভ্যারিয়েন্টের ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা তুলনায় অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের থেকে কিছুটা কম, এমনটাই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
জানুয়ারি তৃতীয় ঢেউয়ের সঙ্গে এখন ফারাকটা ঠিক কোথায়?
সবচেয়ে বড় পার্থক্য হল INSACOG-এর গবেষকরা বলছেন, বর্তমানে যে সাব ভ্যারিয়েন্টের কারণে কোন কোন রাজ্যে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে তবে নয়া এই ভ্যারিয়েন্ট সেভাবে ক্লাস্টার সৃষ্টি করতে পারেনি। যখন ওমিক্রন ডিসেম্বর এবং জানুয়ারিতে বাড়তে থাকে তখন স্পষ্ট ভাবেই ক্লাস্টার তৈরি করেছিল।
INSACOG-এর বিজ্ঞানীরা বলছেন বর্তমানে যে ভ্যারিয়েন্টের অস্তিত্ব দেশে মিলেছে তা সারা দেশে সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য সেভাবে দায়ি নয়। INSACOG-এর একজন সিনিয়র বিজ্ঞানী বলেছেন, “ ১৩০ কোটির দেশে সামান্য কয়েকটি নতুন কেস লক্ষ্য করা গেছে। নয়া ভ্যারিয়েন্ট যেভাবে মানুষের শরীরে থাবা বসিয়েছে তা তুলনায় অতি নগণ্য। পাশাপাশি হাসপাতালে ভর্তি বা মৃত্যু সংখ্যাও সেভাবে না বাড়ায় এখনই নয়া ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে অযথা আতঙ্কের কোন কারণ নেই। তবে আমাদের আরও কিছুদিন এই নয়া ভ্যারিয়েন্টের চরিত্রের ওপর নজর রাখতে হবে। সেই সঙ্গে আমাদের আরও কিছুদিন যথাযথ কোভিড বিধি মেনে চলতে হবে”।