শনিবার (অক্টোবর ৭) প্যালেস্তাইনি জঙ্গিরা দক্ষিণ ও মধ্য ইজরায়েলে রকেটবর্ষণ শুরু করে। আর, কয়েক ডজন প্যালেস্তাইনি জঙ্গি সীমান্ত পেরিয়ে ইজরায়েলে প্রবেশের চেষ্টা চালায়। এরপরেই যুদ্ধ ঘোষণা করে ইজরায়েল। সংবাদ সংস্থা বিবিসি জানিয়েছে, জঙ্গি সংগঠন হামাসের হামলায় অন্তত ১০০ জন ইজরায়েলি নিহত এবং ৭৪০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে। প্যালেস্তাইনি জঙ্গিগোষ্ঠী হামাসকে এই আক্রমণের জন্য দায়ী করে, ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকা নিশানা করে হামলা চালাতে শুরু করে। সেই হামলায় অন্ততপক্ষে ১৯৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন, আহত ১,৬১০ বলেই শেষ পাওয়া খবরে জানা গিয়েছে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বিবৃতি
এক বিবৃতিতে ইজরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, 'হামাস আজ সকালে একটি গুরুতর ভুল করেছে এবং ইজরায়েল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে।' এদিকে, হামাসের সামরিক শাখার নেতা মোহাম্মদ দেইফ বলেছেন, 'অপারেশন আল-আকসা স্টর্ম' শুরু করে শনিবার ভোরে ইজরায়েলে ৫,০০০ রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছে। তিনি বলেন, 'আমরা ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'
হামাস কী?
হামাস হল প্যালেস্তাইনের জঙ্গি সংগঠন। এই সংগঠন বিশ্বের বৃহত্তম জঙ্গি গোষ্ঠী। গাজা অঞ্চলের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দলের একটি। বর্তমানে, এটি গাজা উপত্যকায় ২০ লক্ষেরও বেশি প্যালেস্তিনীয়র শাসক। হামাস অবশ্য ইজরায়েলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধের জন্যও পরিচিত। সামগ্রিকভাবে হামাস, বা কিছু ক্ষেত্রে এর সামরিক শাখা- ইজরায়েল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ব্রিটেন এবং অন্যান্য দেশগুলোর দ্বারা স্বীকৃত জঙ্গিগোষ্ঠী।
হামাস কীভাবে গঠিত হয়েছিল?
এই জঙ্গিগোষ্ঠী ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে, পশ্চিম তীর এবং গাজা উপত্যকায় ইজরায়েল দখলের বিরুদ্ধে প্রথম প্যালেস্তিনীয় 'ইন্তিফাদা' বা বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই ইহুদি রাষ্ট্র ১৯৬৭ সালের ইজরায়েল-আরব যুদ্ধে জয়লাভ করার পরে দুটি প্যালেস্তিনীয় অঞ্চল দখল করেছিল। নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি কাতারের মিডল ইস্টার্ন স্টাডিজের অধ্যাপক খালেদ অল হারুবের লেখা 'হামাস: এ বিগিনারস গাইড' বই অনুযায়ী হামাস মূলত সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের 'রূপান্তর'। মুসলিম ব্রাদারহুড সংগঠন জেরুজালেমে ১৯৪৬ সালে তৈরি হয়েছিল।
আরও পড়ুন- ইজরায়েল নাকি প্যালেস্টাইন, কোন পক্ষে ভারত? মোদীর বার্তায় ইঙ্গিত
প্যালেস্তাইনে বিদ্রোহ
প্যালেস্তিনীয় মুসলিম ব্রাদারহুড ১৯৮০ সাল পর্যন্ত কয়েক দশক ধরে প্যালেস্তিনীয় রাজনীতিতে বিশেষ জায়গা পায়নি। তার কারণ ছিল তাদের কৌশল। এই কৌশল সংঘাতমূলক ছিল না। তারা বিশ্বাস করত যে প্যালেস্তিনীয় সমাজের ইসলামিকরণ করা জরুরি। তারা সশস্ত্র সংগ্রাম করেনি। কিন্তু, ১৯৮৭ সালে, যখন প্রথম প্যালেস্তাইনি বিদ্রোহ সংঘটিত হয়, তখন সংগঠনটি সশস্ত্র সংগঠনে রূপান্তরিত হয়। আর, 'ইজরায়েলি দখলদারিত্বের মোকাবিলা করার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে একটি সহায়ক সংগঠন হিসেবে হামাসকে প্রতিষ্ঠা করে।'