দরিদ্র ব্রাহ্মণ পুরোহিতদের মাসিক এক হাজার টাকা ভাতা এবং বিনামূল্যে আবাসন দেওয়ার কথা সোমবার ঘোষণা করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।সেইসঙ্গে ৮ হাজারেরও বেশি গরিব সনাতন ব্রাহ্মণদের বিনামূল্যে বাড়ি দেওয়া হবে। বিধানসভা নির্বাচনের আগে পুরোহিতদের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এহেন ঘোষণা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মত রাজনৈতিক মহলের।
মুসলিমদের 'তুষ্ট' করার অভিযোগ
২০১২ সালের এপ্রিল মাসে এ রাজ্যে ক্ষমতায় আসার এক বছরেরও কম সময় পরে মুখ্যমন্ত্রী ইমামদের জন্য ২,৫০০ টাকা এবং আজান দেওয়ার জন্য বা মুনাজাত করার জন্য ময়েজিনদের জন্য ১৫,০০০ টাকা ভাতা ঘোষণা করেছিলেন। বিরোধী দল, বিশেষত বিজেপি, রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছিল এবং সংখ্যালঘু তুষ্টিতে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ করেছিল। রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক অসীম সরকার সেই সিদ্ধান্তকে কলকাতা হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন যা ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে এই ভাতাটিকে অসাংবিধানিক এবং জনস্বার্থবিরোধী বলে প্রত্যাখ্যান করেছিল।পরবর্তী সময়ে মাসিক ভাতা রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডের মাধ্যমে পাঠান হয়েছিল।
কিন্তু হিন্দু পুরোহিতদের জন্য এ জাতীয় কোনও বিধান করা হয়নি। এর ফলে তৃণমূল হিন্দু বিরোধী পক্ষপাতিত্ব করে এ বিষয়টিকে লক্ষ্য করে রাজনৈতিক প্রচারের সুযোগ পায় বিরোধী দল। তাঁদের বক্তব্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ব্রাহ্মণ পুরোহিতদের দাবী সরাসরি সমাধান না করে গঙ্গাসাগর মেলার দিকে মনোনিবেশ করেছিলেন এবং এর সামগ্রিক উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যান।
রাজনৈতিকভাবে, তৃণমূল রাজ্য জুড়ে রাম নবমী এবং হনুমান জয়ন্তী ও করে। এর ফলে হিন্দু ভোটারদের একটি শক্তিশালী অংশের মধ্যে ব্যবধান আরও বেড়ে ওঠে।
বদল এল ২০১৯-এর নির্বাচনের পর
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের রাজনীতিতে একটি দৃষ্টান্তমূলক বদল লক্ষ্য করা গিয়েছে। এ রাজ্যে ১৮টি আসনে জয়লাভ করেছে বিজেপি। ভট পেয়েছে ৪০.৩ শতাংশ। লোকসভা নির্বাচনে প্রচারের সময় এবং পরবর্তী সময়েও তৃণমূলের বিরুদ্ধে মুসলমানদেরকে সন্তুষ্ট করার এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি অবহেলা করার অভিযোগ এনে ক্রমাগত আক্রমণ চালিয়েছিল বিজেপি। ফলে হিন্দিভাষী অঞ্চলগুলিতে খারাপ ফল করেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ব্রিগেড।
২০১৯ সালে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সনাতন ব্রাহ্মণ ট্রাস্ট দ্বারা কলকাতায় প্রথমবারের মতো সমাবেশের আয়োজন করা হয়, যেখানে হাজার হাজার ব্রাহ্মণ পুরোহিত নয় দফা দাবিতে জড়ো হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি ব্রাহ্মণ পুরোহিতদের ভাতা, ঘর এবং স্বাস্থ্য বীমা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
বিজেপির সঙ্গে দ্বন্দ্ব
তবে বজায় রইল বিজেপির সঙ্গে দ্বন্দ্ব। অগাস্টের ৫ তারিখ যখন রামমন্দিরের ভূমিপুজোয় গেলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, সেদিন কেন পশ্চিমবঙ্গে লকডাউন আরোপিত হল তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন তাঁরা। বিজেপির জাতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা সম্প্রতি মমতা সরকারকে "হিন্দু বিরোধী মানসিকতা" এবং সংখ্যালঘু তুষ্টির নীতি অনুসরণ করার জন্য অভিযুক্তও করেছেন।
কেন ব্রাহ্মণ পুরোহিতদের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ?
এই ঘোষণাটি বিজেপির আক্রমণের পটভূমিতেই এসেছে। তৃণমূল সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে স্পষ্ট যে এটি বিজেপিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে।গোষ্ঠী হিসাবে ব্রাহ্মণ পুরোহিতদের বৃহত্তর হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রভাব। এই সিদ্ধান্তের ফলে হিন্দু ভোটের একটি অংশ তৃণমূলে আসতে পারে এমনটাই মনে করা হচ্ছে।
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন