রুশ নাগরিক ৬৫ বছরের পাভেল আন্তভ ওড়িশার রায়গড়া অঞ্চলে একটি হোটেলের চার তলার জানালা থেকে 'রহস্যজনকভাবে' পড়ে মারা গিয়েছেন। ওই এলাকায় তিনি তাঁর ৬৬তম জন্মদিন উপলক্ষে ছুটি কাটাচ্ছিলেন। পাভেল আন্তভের সঙ্গী ভ্রমণসঙ্গী ছিলেন ৬২ বছরের ভ্লাদিমির বিদেনভ। গত ২২ ডিসেম্বর তাঁকে রায়গড়ার একই হোটেলে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তার পরপরই আন্তভের মৃত্যু হল। প্রাথমিক তদন্তের পর সোমবার, ২৬ ডিসেম্বর পুলিশ জানিয়েছে, এর মধ্যে অন্য কিছু নেই।
কী বলছে পুলিশ?
দুটি ঘটনাই স্রেফ দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু। মৃত্যুর কারণ জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তে নেমে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে এই দুটি মৃত্যুকে খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। রায়গড়া টাউন থানার ইন্সপেক্টর-ইন-চার্জ (আইসি) রশ্মিরঞ্জন প্রধান দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন যে প্রাথমিক তদন্তের পর মনে করা হচ্ছে, আন্তভ অসাবধনতাবশত বারান্দা থেকে পড়ে গিয়েছেন। অথবা, বন্ধু ভ্লাদিমির বিদেনভের মৃত্যুর পর তিনি শোকে আত্মহত্যাও করতে পারেন।
কে এই পাভেল আন্তভ?
পাভেল আন্তভ ছিলেন একজন রাশিয়ান সসেজ টাইকুন। রাশিয়ান মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, তিনি রাশিয়ার মাংস সসেজের নেতৃস্থানীয় প্রস্তুতকারকদের একজন। তিনি মাংস কোম্পানি 'ভ্লাদিমির স্ট্যান্ডার্ড'-এর প্রতিষ্ঠাতা।
তিনি কি শুধু রুশ ব্যবসায়ী ছিলেন?
তিনি শুধু একজন রুশ ব্যবসায়ীই নন। একজন রুশ রাজনীতিবিদও ছিলেন। তিনি ভ্লাদিমির অঞ্চলের রুশ আইনসভার উপপ্রধান পদে ছিলেন। একটি রুশ সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে তিনি ভ্লাদিমির অঞ্চলে কৃষিনীতি, প্রকৃতি ব্যবস্থাপনা, বাস্তুবিদ্যা বিষয়ক আইনসভার কমিটি প্রধানও ছিলেন।
অন্যতম ধনী রুশ রাজনীতিবিদ
২০১৯ সালে, ফোর্বস পত্রিকার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ায় আন্তভের ঘোষিত বার্ষিক আয় ১৩ কোটি পাউন্ড। ঘোষিত উপার্জন অনুযায়ী তিনি ছিলেন রাশিয়ার অন্যতম ধনী জনপ্রতিনিধি। ইউক্রেনে রুশ হামলা নিয়ে তাঁর মতামত কী ছিল? তিনি রুশ বাহিনীর ইউক্রেন আক্রমণের বিরোধিতা করেছিলেন। চলতি বছরের জুনে তিনি ইউক্রেনে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সমালোচনা করেন। সেই সময় তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছিলেন, 'একটি মেয়েকে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে বের করা হয়েছে, মনে হচ্ছে মেয়েটির বাবা মারা গেছেন। মাকে ক্রেন দিয়ে বের করা হচ্ছে। তিনি স্ল্যাবের নীচে আটকে ছিলেন। সত্যি কথা বলতে এটাকে সন্ত্রাস ছাড়া অন্য কিছু বলা খুবই কঠিন।'
আরও পড়ুন- ভয়ংকর ঘটনা! মস্তিষ্ক খেয়ে নিল অ্যামিবা, বাঁচানো গেল না রোগীকে, শিহরিত চিকিৎসকরাও
পিছু হঠেছিলেন আন্তভ
পরে, প্রবল চাপানউতোরের মুখে আন্তভ তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থেকে পোস্টটি মুছে ফেলতে বাধ্য হন। একইসঙ্গে তিনি জানান যে, ভুল বোঝাবুঝি থেকে এসব লিখেছিলেন। আসলে ওই পোস্ট একটি প্রযুক্তিগত ত্রুটি ছিল। পুলিশের মতে, বিদেনভ এবং আন্তোভ চার জন রুশ পর্যটকদের অন্যতম। বাকি দু'জনের সঙ্গে তাঁরা ২১ ডিসেম্বর রায়গড়ার হোটেলে উঠেছিলেন। ভারতীয় গাইড নিয়ে কান্ধমাল জেলার দারিংবাড়ি হয়ে রায়গড়ায় এসেছিলেন। আন্তভের দলের বাকি দুই সদস্যকে আপাতত যেতে বারণ করেছে পুলিশ। তদন্তের প্রক্রিয়াগুলো শেষের পর তাঁদের যেতে দেওয়া হবে বলেই পুলিশ জানিয়েছে।
Read full story in English