অযোধ্যায় ভগবান রামের মূর্তির জন্য ১৪ কোটি বছরের পুরনো পাথর ব্যবহার করা হবে। ১৪ কোটি বছর প্রাচীন শালগ্রাম পাথর দিয়েই হবে রামের ‘বালমূর্তি’! শ্রী রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক চম্পত রাই জানান, ‘এই পাথর দিয়েই তৈরি হবে রামলালার মূর্তি’। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ভাস্কর্য বিশেষজ্ঞ ও প্রতিমা তৈরির কারিগরই নেবেন বলেও জানান তিনি।
তিনি জানান, ‘প্রতিমা নির্মাণকারীদের প্রথমে শালিগ্রাম পাথরটি দেখানো হবে। অযোধ্যায় রামলালার মূর্তি নির্মাণের জন্য নেপাল থেকে ৬ দিনের যাত্রা শেষে রামনগরীতে পৌঁছেছে শালগ্রাম শিলা। চম্পত রাই আরও বলেন, ‘ভারতের যেখানেই এ ধরনের পাথর পাওয়া যায়, সেইসব পাথরও সংগ্রহ করা হচ্ছে। যে পাথর একবার আনা হবে তা দিয়েই মূর্তি তৈরি হবে এমন নয়। পাথরে ছেনি লাগানো হলেই কারিগর বলতে পারবেন এই পাথর থেকে মূর্তি তৈরি হবে কি না। সে কারণে শালগ্রাম শিলা সম্পর্কে কিছুই নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, ওড়িশা, কর্ণাটক ও মধ্যপ্রদেশ থেকেও পাথর আনা হচ্ছে’। এবিষয়ে রামমন্দিরের কোষাধ্যক্ষ জানান, ‘নেপাল থেকে অযোধ্যায় আনা শালগ্রাম পাথরটি বিকল্প হিসেবে রাখা হয়েছে। প্রতিমা তৈরির শিল্পীদের ডেকে সব পাথর পরীক্ষা করা হবে। এর পর মূর্তি তৈরির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে’।
নেপালের দামোদর কুণ্ড থেকে উৎপন্ন কালী গণ্ডকী নদীর তীরে পাওয়া যায় এই অলৌকিক পাথর। শালগ্রাম পাথর হিন্দুধর্মে একটি পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ পাথর। তবে এই পাথর আসলে এক ধরনের জীবাশ্ম। হিন্দু ধর্মে ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসাবে ভগবানের মূর্তি রূপে ব্যবহৃত হয়। নেপালের দামোদর কুণ্ড থেকে উত্পন্ন কালী গণ্ডকী নদীর তীরে পাওয়া যায় এই অলৌকিক পাথর। বৈষ্ণবরা এটিকে বিষ্ণুর প্রতিনিধি হিসাবে মনে করেন। জনকপুরের জানকী মন্দিরের পুরোহিত এবং ভিএইচপির জাতীয় সম্পাদক রাজেন্দ্র সিং পঙ্কজ সহ ১৫০ জনের একটি প্রতিনিধি দল নেপালের পোখরা থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে জনকপুরের গালেশ্বর ধাম থেকে পাথরগুলি নির্মাণের জায়গায় নিয়ে আসেন। ৩৩ ধরনের জীবাশ্ম,রয়েছে এই পাথরে। জুরাসিক যুগেই দেখা মিলত এই পাথরের যা আনুমানিক ৬ থেকে ১৫ কোটি বছর আগে।
শালগ্রাম পাথর কী?
ভূবিজ্ঞানী হলি ওয়াল্টার্স তার বই, 'শালিগ্রাম পিলগ্রিমেজ ইন দ্য নেপাল হিমালয়'-এ বলেছেন যে শালিগ্রাম পাথর অ্যামোনাইটের জীবাশ্ম, যা প্রায় ৪০ কোটি থেকে ৬.৫ কোটি বছর আগের এক ধরনের জীবাশ্ম। মনে করা হয় এই পবিত্র পাথরের মধ্যে ভগবান বিষ্ণুর বাস রয়েছে। নেপাল থেকে আনা দুটি পাথরের ওজন প্রায় ৩১ ও ১৫ টন। প্রায় ৬ কোটি বছরের প্রাচীন পাথর অযোধ্যায় ট্রাকে করে নিয়ে আসা হয়। তারপর বিশেষভাবে পুজো করে ও শিলাগুলি শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টকে দেওয়া হয়। জানা গিয়েছে পরের বছরের জানুয়ারি মাসেই রামের বাল্যরূপের মূর্তি স্থাপন করা হবে।
বেশিরভাগই শালগ্রাম শিলা নেপালের গন্ডকী নদীর একটি উপনদী কালী গন্ডকীর নদীর তলদেশে বা তীরে পাওয়া যায়, বিশ্বাস করা হয় এটি ভগবান বিষ্ণুর একটি প্রতিরূপ। পাথরটিতে ঐশ্বরিক ক্ষমতা রয়েছে বলে মনে করা হয় এবং এটিকে সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে দেখা হয়।
রাম মন্দিরে শালিগ্রাম পাথর ব্যবহার কেন?
ভগবান রামকে ভগবান বিষ্ণুর পুনর্জন্ম বলে বিশ্বাস করা হয় এবং শালিগ্রাম পাথরের ব্যবহার দুই দেবতার মধ্যে সংযোগের প্রতীক। ভিএইচপি নেতা রাজেন্দ্র সিং পঙ্কজ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন যে শ্রী রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট ভগবান রামের মূর্তি তৈরিতে শালিগ্রাম পাথর ব্যবহার করার কথা ভাবছিল। "তাই যখন জানকী মন্দির কর্তৃপক্ষ একই প্রস্তাব দেয়, ট্রাস্ট তাতে সম্মতি দেয়,"