দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর রাজনৈতিক উত্তরাধিকার বরাবরই দেশবাসীরা কাছে অত্যন্ত আগ্রহের বিষয় হয়ে থেকেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এই আগ্রহ আরও বেড়েছে। ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহর কথায়, 'এটা বলা নিরাপদ যে জওহরলাল নেহরুর মতো কঠিন কাজ আর কোনও আধুনিক রাজনীতিবিদের কাছে ছিল না।' কারণ, তিনি এমন সময়ে এই দেশের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন যখন জাতি হিসেবে ভারতবাসী তার পরিচয় খুঁজে পায়নি। নেহরু ছিলেন জনপ্রিয়। গণতন্ত্র, জোটনিরপেক্ষতা, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্রর মতো নতুন জাতি-রাষ্ট্রের প্রতিটি দর্শনের সঙ্গে তাঁর নাম ঘনিষ্ঠভাবে জুড়ে গিয়েছিল।
নেহেরুর রাজনৈতিক জীবনকে বিচ্ছিন্ন করা হলেও দেখা যায় যে তাঁর ব্যক্তিত্ব, ব্যক্তিগত সম্পর্ক, পছন্দ-অপছন্দ, আগ্রহ সম্পর্কে অনেক কিছুই অজানা থেকে গিয়েছে। যেমন, নেহরু ঘুড়ি ওড়াতে খুব পছন্দ করতেন। ইংল্যান্ডের হ্যারো এবং কেমব্রিজে এজন্য তিনি সুপরিচিত ছিলেন। সেখানেই তিনি তাঁর শিক্ষা শেষ করেছিলেন। একইভাবে জানা যায় যে নেহেরু আইন পড়তেও রাজি ছিলেন না। শুধুমাত্র তাঁর বাবার পীড়াপীড়িতেই আইনজীবী হতে রাজি হয়েছিলেন।
কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে তাঁর সহপাঠীরা নেহরুকে 'জো নেহেরু' বলে ডাকতেন। তাঁরা তাঁর নাম উচ্চারণ করতে রীতিমতো সমস্যায় পড়তেন। হ্যারো এবং কেমব্রিজে ছাত্র হিসেবে নেহেরু 'ঘুড়ি ওড়ানো'র জন্য রীতিমতো পরিচিত ছিলেন। ভারত থেকে ভালো মানের ঘুড়ি নিয়ে গিয়ে তিনি লন্ডনে ঘুড়ি ওড়ানোকে জনপ্রিয় করে তোলেন।
নেহরু তাঁর বাবার পীড়াপীড়িতে আইন নিয়ে পড়েছিলেন। তিনি লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্সে অর্থনীতি পড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু, তাঁকে 'নিছক আইনজীবী' হতে বাধ্য করেন তাঁর বাবা। গান্ধীজির মৃত্যুর পর নেহরু তাঁর বিখ্যাত বক্তৃতা, ‘আমাদের জীবন থেকে আলো নিভে গেছে’ দিয়েছিলেন। যাকে প্রায়শই ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ বক্তৃতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। অথচ, কোনও প্রস্তুতি ছাড়াই তিনি এই বক্তৃতা দেন।
আরও পড়ুন- জোর করে ধর্মান্তরণ গুরুতর ব্যাপার, উদ্বেগ প্রকাশ করে জানাল সুপ্রিম কোর্ট
জেলে থাকার সময়, নেহরু তাঁর মেয়ে ইন্দিরার বিয়ের জন্য একটি ফ্যাকাসে গোলাপি খাদির শাড়ি তৈরি করেছিলেন। পরে সোনিয়া গান্ধী এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধী দু'জনেই তাঁদের বিয়ের জন্য একই শাড়ি পরেছিলেন। নেহেরু প্রাণীদের অত্যন্ত পছন্দ করতেন। পান্ডা-সহ তাঁর বাড়ির ভিতরে বহু প্রাণী থাকত। নেহরুর জ্যাকেট, শেরওয়ানি এবং টুপি পোশাকের একটা ঘরানা চালু করেছিল। যা প্রায় ভারতের জাতীয় পোশাকবিধি হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। এটি ঘানার প্রেসিডেন্ট কোয়ামে এনক্রুমাহ, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট সুহার্তো এমনকি মাও জে দং-এর মতো চিনা নেতার কাছে নিজস্ব 'জাতীয় পোশাক' তৈরির অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছিল।
তাঁর বোন বিজয়লক্ষ্মী পণ্ডিত ওরফে নান ছিলেন নেহরুর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ। তাঁর সবচেয়ে আস্থাভাজন। মা বা স্ত্রীর চেয়েও বিজয়লক্ষ্মী পণ্ডিতের সঙ্গেই নেহরু তাঁর সব গোপন বিষয় নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা করতেন।
Read full story in English