Advertisment

ত্রিশ বছর পার: দেশে 'মন্ডল রাজনীতি'র কতটা বদল হল?

ভারতে এক 'নীরব বিপ্লব' এনেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ভি পি সিংহ। উচ্চ এবং প্রভাবশালী বর্ণের ক্ষমতা কমিয়ে প্রলেতারিয়েতদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছিল এই সুপারিশ।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

আজ থেকে ত্রিশ বছর আগে মন্ডল কমিশনের রিপোর্টকে কার্যকর করে ভারতে এক 'নীরব বিপ্লব' এনেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ভি পি সিংহ। এই ঘটনাকে দেশের জন্য বিপ্লব বলেই মনে করছেন প্যারিসের সিইআরআই সায়েন্সের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ক্রিস্টোফ জাফ্রেলো। সম্প্রতি দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের লেখা একটি প্রতিবেদনে এমনটাই জানিয়েছেন তিনি। ক্রিস্টোফের কথায়, "এই সুপারিশের ফলে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বদল আসে এবং যার ফলে ভারতে সামাজিক বেশ কিছু বিষয়ের শৃঙ্খলমোচন হয়েছিল। উচ্চ এবং প্রভাবশালী বর্ণের ক্ষমতা কমিয়ে প্রলেতারিয়েতদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছিল।"

Advertisment

ক্রিস্টোফের মতে সরকারি চাকরিতে অনগ্রসর শ্রেণিসমূহের জন্য কমিশনের ২৭ শতাংশ পদ সংরক্ষণের যে সুপারিশ তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ছিল। এর মাধ্যমে সামাজিক বৈষম্যকেও কিন্তু বৃদ্ধি করা হয়েছিল। যার জেরে ১৯৯১ এর সেই সময় এই নীতির বিরোধিতা করে উচ্চবর্ণ। কারণ এই নীতি লাগু হলে সরকারি ক্ষেত্রে তাঁদের কাজের যে জায়গা তা অনেকখানি কমে যাবে। উচ্চবর্ণের এই বিরোধ অনগ্রসর শ্রেণির মধ্যে ক্রোধের আগুন জ্বালিয়ে তোলে। চলে নিজেদের মধ্যে একত্র হওয়ার চেষ্টা। লেখক জানায়, এর ফলে একসময় উচ্চবর্ণের নেতাদের ভোট দেওয়াও বন্ধ করে দেয় এই শ্রেণি। বদলে তাঁরা নিজেরা একজোট হয়ে সংসদে তাঁদের নিজস্ব প্রতিনিধি আনতে সচেষ্ট হয়।

এই কমিশনের নিয়মে রাজনীতিতে বদল এসেছে?

প্যারিসের এই সিনিয়র রিসার্চ ফেলো জানান, হিন্দি যেসব রাজ্যের মাতৃভাষা সেখানে ১৯৮৪ সালে সাংসদের হার যদি ১১ শতাংশ থাকে, ১৯৯০ সালে সেই হার বেড়ে হয়েছে ২০ শতাংশেরও বেশি। আর সেই একই রাজ্যে ১৯৮৪ সালে উচ্চবর্ণ সাংসদের সংখ্যার হার ছিল ৪৭ শতাংশ। অথচ ১৯৯০ সালে সেই হার নেমে দাঁড়ায় ৪০ শতাংশে। ২০০৪ সালে লোকসভায় উচ্চবর্ণের সাংসদের হার কমে দাঁড়ায় ৩৩ শতাংশে, অনগ্রসর শ্রেণির সাংসদ সংখ্যা বৃদ্ধি বেড়ে হয় ২৫ শতাংশ।

এই মুহুর্তে ভারতের রাজনীতি এবং সামাজিক ক্ষেত্রে এই 'মন্ডল ব্যবস্থা' রয়েছে কতখানি?

ক্রিস্টোফে জেফ্রেলো বলেন, "সেই দিনের নীরব বিপ্লব আসলে পাল্টা বিপ্লব এনে এসেছিল। অভিজাতদের হয়ে লড়াই চালিয়ে গিয়েছিল বিজেপি। বিজেপির হিন্দু জাতীয়তাবাদ এতে লাভবান হয়েছিল। ইসলামের বিরুদ্ধে হিন্দুদের ঐক্যকে একজোট করার কাজ শুরু করা হয়েছিল।" ভারতের অনেক রাজনৈতিক দল বর্ণ ভিত্তিক ভোটমজুদ রাজনীতিতে লিপ্ত হয়েছে। বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি), সমাজবাদী পার্টি এর মতো দলগুলি এবং জনতা দল দাবি করেছেন যে তারা পশ্চাৎপদ জাতিদের প্রতিনিধিত্ব করছেন এবং নির্বাচনে জয়ের জন্য প্রায়শই দলিত ও মুসলিম সমর্থনের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে ওবিসি সমর্থনের উপর নির্ভর করত।

কিন্তু পরবর্তীতে হিন্দুদের মধ্যে বিভেদ কিছুটা ঘুচল ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর। তিনি বিজেপির নেতা। একেবারে আরএসএস দ্বারা অনুপ্রাণিত। কিন্তু নিজে একজন অনগ্রসর শ্রেণি থেকে উঠে আসা নেতা। তাই মন্ডল ব্যবস্থার যে রাজনৈতিক রসায়ন ছিল ভারতে, মোদী ব্যবস্থায় সেই বিভেদ কিছুটা হলেও কমেছে।

তবে কি 'মন্ডল রাজনীতি'-র 'খেলা শেষ'?

ক্রিস্টোফ জানান, "এখনও নয়। কারণ অনগ্রসর শ্রেণির জন্য আসন সংরক্ষণের যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তার সবটা পূরণ হয় না। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৫ সালে কেন্দ্রীয় সরকারি ক্ষেত্রে ক্লাস এ- কর্মীসংখ্যায় ১২ শতাংশ সংরক্ষণ, ক্লাস বি-১২.৫ শতাংশ এবং ক্লাস সি-তে ১৯ শতাংশ। অর্থাৎ হিসেব করে দেখলে মোট কর্মক্ষমতার ১৮ শতাংশ সংরক্ষিত রয়েছে। ১৯৯০ সালে সরকারি চাকরিতে অনগ্রসর শ্রেণির জন্য ২৭ শতাংশ পদ সংরক্ষণের যে সুপারিশ ছিল তার যে এই সংখ্যা ৯ শতাংশ কম। এই দাবিতেই হয়ত ওবিসিরা লড়াই চালিয়ে যাবেন।"

Read the story in English

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

bjp Parliament CONGRESS PM Narendra Modi
Advertisment